গাজায় ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর নতুন শান্তি পরিকল্পনা
নেতানিয়াহু বলেন, হামাস যদি পরিকল্পনাটি প্রত্যাখ্যান করে বা তা অনুসরণ না করে, তবে ইসরাইল ‘কাজটি শেষ করবে।’ পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রচেষ্টাকে আন্তরিক ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলে আখ্যায়িত করেছে। সংবাদ সংস্থা ওয়াফাতে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্র, আঞ্চলিক রাষ্ট্রসমূহ ও অংশীদারদের সঙ্গে যৌথ প্রতিশ্রুতি নবায়ন করছে- যুদ্ধের অবসান, গাজায় যথেষ্ট মানবিক সহায়তা নিশ্চিতকরণ, জিম্মি ও বন্দিদের মুক্তির বিষয়ে কাজ করতে। সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কাতার, মিশর, জর্ডান, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক যৌথ বিবৃতিতে ট্রাম্পের নেতৃত্ব ও আন্তরিক প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত, যাতে এই চুক্তি চূড়ান্ত ও বাস্তবায়ন করা যায়। এ চুক্তি শেষ পর্যন্ত একটি দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের দিকে নিয়ে যাবে। যেখানে গাজা সম্পূর্ণভাবে পশ্চিম তীরের সঙ্গে একীভূত হয়ে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, অবিলম্বে সামরিক অভিযান বন্ধ হবে এবং বিদ্যমান যুদ্ধরেখা অপরিবর্তিত থাকবে, যতক্ষণ না ধাপে ধাপে সেনা প্রত্যাহারের শর্ত পূরণ হয়। ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুসারে, হামাসকে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে এবং তাদের সুড়ঙ্গ ও অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রগুলো ধ্বংস করতে হবে। প্রত্যেক ইসরাইলি জিম্মির দেহাবশেষ ফেরত দেয়ার বিনিময়ে ইসরাইল ১৫ জন ফিলিস্তিনির দেহাবশেষ ফিরিয়ে দেবে। উভয় পক্ষ পরিকল্পনায় সম্মত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গাজায় পূর্ণ মানবিক সহায়তা পাঠানো হবে। যুক্তরাষ্ট্র গাজার ভবিষ্যৎ শাসনের জন্যও একটি পরিকল্পনা দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, একটি প্রযুক্তিগত ও অরাজনৈতিক ফিলিস্তিনি কমিটি সাময়িকভাবে গাজা শাসন করবে। এর ওপর নজরদারি করবে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা বোর্ড অব পিস, যার প্রধান হবেন ট্রাম্প। সাবেক বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারও এ শাসন কাঠামোর অংশ হবেন। তিনি পরিকল্পনাটিকে বলেছেন দুঃসাহসী ও বুদ্ধিদীপ্ত।
বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আমরা সব পক্ষকে আহ্বান জানাই যেন তারা একত্রিত হয়, যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করে চুক্তিটি বাস্তবায়ন করে। হামাসকে এখনই পরিকল্পনা মেনে নিতে হবে, অস্ত্র নামিয়ে রাখতে হবে এবং সব জিম্মি মুক্তি দিয়ে দুঃখ-কষ্টের অবসান ঘটাতে হবে। ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তা বলেন, তিনি নেতানিয়াহুর ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় উৎসাহিত হয়েছেন। তিনি যোগ করেন, সব পক্ষকে এ মুহূর্তে শান্তিকে একটি সত্যিকারের সুযোগ দিতে হবে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন প্রস্তাবটিকে প্রশংসা করে বলেছেন, ফ্রান্স শান্তি প্রতিষ্ঠা ও জিম্মি মুক্তির প্রচেষ্টায় অবদান রাখতে প্রস্তুত। ম্যাক্রন আরও বলেন, এই উপাদানগুলোকে অবশ্যই দীর্ঘস্থায়ী শান্তি গড়ার জন্য গভীর আলোচনার পথ তৈরি করতে হবে, যা দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের ভিত্তি গড়বে।
হামাসকে করুণ পরিণতির হুঁশিয়ারি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণার পর হামাসকে কড়া সতর্কতা দিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, হামাস যদি এই চুক্তি প্রত্যাখ্যান করে তাহলে ইসরাইল তার কাজ শেষ করবে। এর মধ্য দিয়ে গাজায় যেভাবে দখলদারিত্ব ও হামলা চালানো হয়েছে তাকে বুঝিয়েছেন তিনি। একই রকম কথা বলেছেন ট্রাম্পও।
নেতানিয়াহু ও ট্রাম্প যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, নতুন শান্তি পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করলে হামাসকে করুণ পরিণতি ভোগ করতে হবে। মিডিয়ার সামনে সংবাদ সম্মেলনে সোমবার বক্তব্য রাখছিলেন এই দু’নেতা। সেখানে ট্রাম্প বলেন, যদি হামাস এই পরিকল্পনা না মানে, তাহলে গাজায় ইসরাইলকে তার কাজ শেষ করায় পূর্ণাঙ্গ সমর্থন দেবেন তিনি। এরপরই ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রশংসা করে নেতানিয়াহু ধারাবাহিক পোস্ট দেন। তাতে তিনি লিখেছেন- মিস্টার প্রেসিডেন্ট যদি হামাস আপনার পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে অথবা ধরুন তারা মেনে নিলো এবং তারপর তারা এটাকে মোকাবিলা করার সব রকম চেষ্টা করল, তখন ইসরাইল তার কাজ শেষ করবে।
ওদিকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হামাস এই পরিকল্পনা পর্যালোচনা করছিল। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্ব নেতারা ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশ আছে।
‘ইসরাইলের কূটনৈতিক ব্যর্থতা’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প নতুন শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করার একদিন পর মঙ্গলবার মন্ত্রীপরিষদের বৈঠকে যোগ দেয়ার কথা ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর। ওই মিটিংয়ে তিনি সমালোচনার মুখে পড়তে পারেন। বিশেষ করে বিরোধী দলের দুই উগ্রপন্থি মন্ত্রী ইতামার বেন গভির এবং বেজেলেল স্মোত্রিচের পক্ষ থেকে সবচেয়ে বেশি বিরোধিতার মুখে পড়তে পারেন। এই চুক্তিকে কূটনৈতিক ব্যর্থতা বলে অভিহিত করেছেন বেজেলেল। মঙ্গলবার এ বিষয়ে দীর্ঘ পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন বেজেলেল স্মোত্রিচ। ট্রাম্পের পরিকল্পনা নিয়ে চারদিকে যে উদযাপন তাকে ‘কূটনৈতিক শত্রুপক্ষের সঙ্গে আলিঙ্গনের’ সঙ্গে তুলনা করেছেন। বলেছেন, তা শেষ হবে কান্নায়। তিনি আরও বলেন, আমাদের সন্তানরা আবারও গাজায় যুদ্ধে যাবে। এটা হলো সত্য থেকে পালানো এক নেতৃত্বের কৌশল।

No comments