সরকারি অনুদান পেতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জালিয়াতি
জানা যায়, জেলার ৫টি উপজেলায় স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা সহ মোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৪৮১টি। এ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চলতি বছরের বিভিন্ন সময়ে মাধ্যমিকের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে আর্থিক অনুদানের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা্থর (ইউএনও) কাছে প্রত্যয়নের আবেদন করে। তার মধ্যে যাচাই বাছাইয়ে রেজিস্টারভুক্ত করে ইউএনও্থরা কয়েকটি বিদ্যালয়কে প্রত্যায়নপত্র প্রদান করেন। যারা প্রত্যয়ন পায়নি তারা সিল ও স্বাক্ষর জাল করে তাদের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে আবেদন জমা করে। মন্ত্রণালয় থেকে আরেক দফা যাচাই বাছাইয়ে ইউএনওদের অবগত করা হলে জালিয়াতির বিষয়টি সামনে আসে প্রশাসনের। জালিয়াতির ব্যাপারে পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করার জন্য সদর উপজেলা থেকে ২টি প্রতিষ্ঠানকে প্রত্যায়নপত্র দেয়া হয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে জানিয়েছে, সেখানে ৮টি আবেদন জমা হয়েছে। এর মধ্যে ৬টি আবেদন জাল পাওয়া গেছে। সেগুলোতে দেখা গেছে স্বাক্ষর, সিল, প্যাড, লোগো ও স্বারক নকল করা হয়েছে। বিষয়টি শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবগত করা হয়েছে। ভুয়া প্রত্যয়নপত্র তৈরি করার দায়ে কেনো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তার জন্য আগামী ১০ দিনের সময় দিয়ে বিদ্যালয়গুলোকে শোকজ করা হয়েছে। তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে রাব্বী বলেন, আমার দায়িত্বের উপজেলা থেকে মন্ত্রণালয়ে ১০টি আবেদন জমা হয়েছিল বলে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে। প্রাথমিক যাচাইয়ে আমাদের অবগত করলে আমরা ১টি প্রত্যায়ন দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে সে প্রতিষ্ঠানের নাম জানিয়েছি। দেখা গেছে বাকি ৯টি আবেদন আমার স্বাক্ষর, সিল, প্যাড, লোগো ও স্বারক নকল করে মন্ত্রণালয়ে জমা করেছে। পরে শিক্ষা কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকদের ডেকে মৌখিকভাবে জালিয়াতির বিষয়টি অবগত করা হয়। এ ব্যাপারে কোনো শিক্ষকের সঠিক উত্তর পাওয়া যায়নি। ফাইল বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাড়া অন্য কারো মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে জমা করার কোনো সুযোগ নেই। এর সঠিক কারণ দর্শানোর জন্য রোববার লিখিত আকারে তাদের শোকজ নোটিশ করা হয়েছে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার নজির বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আবেদনের প্রেক্ষিতে অফিসিয়ালিভাবে ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে প্রত্যায়নপত্র দেয়া হয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয় সেখানে আর্থিক অনুদানের জন্য ৯টি আবেদন জমা হয়েছে। এরপর সেগুলোর কপি পাঠালে জালিয়াতির বিষয়টি নিশ্চিত হই। এখন আবেদনগুলো স্থগিত রেখে তদন্তের জন্য শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। আটোয়ারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাফিউল মাজলুবিন রহমান বলেন, ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আমি প্রত্যয়নপত্র দিয়েছি। কিন্তু মন্ত্রণালয় বলছে ৬টি আবেদন জমা হয়েছে। নিশ্চিত করতে আমার কাছে থাকা আগে পাঠানো ৩টি কপি আবার মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এখন দেখা গেছে অন্য ৩টি আবেদন জাল। এ বিষয়ে শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবগত করে বিষয়টি তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দেবীগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) তুরাব হোসেন বলেন, এ উপজেলায় এখন পর্যন্ত এমন জালিয়াতির কোনো খবর পাইনি। জালিয়াতির এমন বিষয় অবগত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে পঞ্চগড় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল মালেক বলেন, নির্বাহী কর্মকর্তারা আমাকে জালিয়াতির বিষয়টি মৌখিকভাবে অবগত করেছেন। আমি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের তদন্তের জন্য নির্দেশ দিয়েছি। তদন্ত শেষে আমরা আমাদের রিপোর্ট ইউএনও বরাবর জমা করবো। তারা পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
No comments