ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির আরও অভিযোগ

সাবেক স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটর সুইমস্যুট মডেল স্টাসি উইলিয়ামস বলেছেন, ১৯৯০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প তাকে স্পর্শ করেছিলেন। ওই সময় উইলিয়াম দেখা করতে গিয়েছিলেন বহুল আলোচিত যৌন নিপীড়ক জেফ্রে এপস্টেইনের সঙ্গে। সিএনএন থার্সডে অনুষ্ঠানে প্রথমবার ক্যামেরার সামনে এসব অভিযোগ প্রকাশ করেছেন স্টাসি উইলিয়ামস। কীভাবে ওই ঘটনা ঘটেছিল তার সবিস্তারে বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ওই ঘটনা ঘটেছিল ১৯৯০-এর দশকের শুরুর দিকে। তখন স্টাসি উইলিয়ামসের বয়স ছিল ২০-এর কোটায়। তিনি তখন ডেটিং করছিলেন এপস্টেইনের সঙ্গে। ওই সময় নিউ ইয়র্কে ট্রাম্প টাওয়ারে ট্রাম্পের অফিসের বাইরে তাকে স্পর্শ করেন ট্রাম্প। এ নিয়ে স্টাসি উইলিয়ামসের তিনজন বন্ধুর সঙ্গে কথা বলেছে সিএনএন। তারা সবাই জানিয়েছেন যে তাদেরকে যথাক্রমে ২০০৬, ২০১৫ এবং ২০১৮ সালে এসব বিষয়ে জানিয়েছেন স্টাসি উইলিয়ামস। তিনি বলেছেন, এপস্টেইনের সঙ্গে ১৯৯৩ সালে নিউ  ইয়র্কের ফিফথ এভিনিউতে হাঁটছিলেন। এরপর ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করাতে তাকে ট্রাম্প টাওয়ারে নিয়ে যান এপস্টেইন। অফিসের বাইরে তাদেরকে অভ্যর্থনা জানান ট্রাম্প। স্টাসি উইলিয়ামস বলেন, এরপর যা ঘটলো তিনি আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। আমাকে তুলে তার বুকের মধ্যে নিলেন। তার হাত আমার শরীরে। এরপরই তার হাত সচল হয়ে ওঠে। আমার বুকে, কোমরে এমনকি অন্য সব জায়গায় সঞ্চালিত হতে থাকে। পুরোটা সময় এভাবে তার হাত সঞ্চালিত হয়েছে। এতে আমি একেবারে জমে গিয়েছিলাম। কী ঘটতে যাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারিনি। স্টাসি উইলিয়ামস আরও বলেন, ট্রাম্পের হাত যখন এভাবে আমার শরীরে সঞ্চালিত হচ্ছিল তখন  এপস্টেইন এবং ট্রাম্প অব্যাহতভাবে গল্প করে যাচ্ছিলেন। তাদের দু’জনের মুখেই ছিল হাসি। এক পর্যায়ে সম্ভবত ট্রাম্পের একজন সহকারী প্রবেশ করেন রুমে এবং বেরিয়ে যান। সামাজিকতা রক্ষা করতে আমাকে হাসিমুখে থাকতে হয়। সেই হাসি আমার শরীরের ছিল না। বুঝতে পারছিলাম না আমার কথা বলা উচিত কিনা। আমার কোনো প্রশ্নের উত্তর দেয়া উচিত কিনা। স্রেফ জানতাম না। আমার জীবনে সবচেয়ে আকস্মিক ঘটনা এটা।

এই সাক্ষাতের খুব বেশি দিন পরের কথা নয়। ট্রাম্পের কাছ থেকে একটি পোস্টকার্ড পান স্টাসি উইলিয়ামস। তার কাছে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে তার মডেলিং এজেন্সিতে তা ডেলিভারি দেয়া হয়েছে। ওই পোস্টকার্ডটিতে ছিল ফ্লোরিডায় মার-এ-লাগো অবকাশযাপন কেন্দ্রের সামনে পাম বিচের ছবি। পোস্টকার্ডের অন্যপিঠে ট্রাম্প লিখেছিলেন- ‘স্টাসি, ইওর হোম অ্যাওয়ে ফ্রম হোম। লাভ, ডনাল্ড’।
তবে স্টাসি উইলিয়ামসের এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে ট্রাম্পের এবারের নির্বাচনী প্রচারণা শিবির। তারা বলেছে, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিসকে নির্বাচনে বাঁচিয়ে রাখার জন্য জুমকলে এসব তথ্য প্রকাশ করেছেন। ট্রাম্পের প্রচারণা বিষয়ক মুখপাত্র ক্যারোলাইন লিভিট বলেন, নির্বাচনের দু’সপ্তাহ আগে এসব অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা। তিনি আরও বলেন, পোস্টকার্ডে যে হাতের লেখা তা ট্রাম্পের লেখা না।
উইলিয়ামস বলেন, এই ঘটনার এক বছর আগে এপস্টেইনের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়েছিল। ওই সময় তার এজেন্ট তাকে নিউ ইয়র্কে এক নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেখানে উপস্থিত হন এপস্টেন। একই বছর প্লাজা হোটেলে ট্রাম্পের আয়োজনে বড়দিনের এক পার্টিতে এপস্টেনকে আরও একবার দেখেন উইলিয়ামস। এসময় তারা তিনজনে একসঙ্গে কথা বলেন। এর আগে একবার ট্রাম্পের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়েছিল।  উইলিয়ামের ঘনিষ্ঠ একজন সিএনএনকে বলে, এপস্টেনের সঙ্গে সম্পর্কের কথা উইলিয়াম তাদেরকে বলেছিলেন। সিটি প্রপার্টি রেকর্ড বলছে যে, এপস্টেইনের একজন বিশ্বস্ত সহযোগী ১৯৯২ সালে ফিফথ এভিনিউ থেকে একটি ব্রাউনস্টোন কিনেছেন। উইলিয়ামস বলেন, বড়দিনের পার্টির পরে জুমকলে এপস্টেইন আমাকে বলেন যে, আমার প্রতি তার ভীষণ আগ্রহ। আমরা একে অন্যের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ করতে লাগলাম। মাঝে মাঝে আমরা হাঁটতে বের হতাম। এ সময় ঘন ঘন ডনাল্ডের বিষয়ে কথা বলতেন এপস্টেইন। ওই সময় পর্যন্ত এপস্টেইন যে একজন যৌন নিপীড়ক সে সম্পর্কে কেউ জানতোই না। তিনি এমন যদি জানতাম তাহলে তার সঙ্গে এক টেবিলে বসতামই না।
স্টাসি উইলিয়ামস ও এপস্টেইন যখন ট্রাম্প টাওয়ার ছেড়ে আসেন, উইলিয়ামস বলেন, তখন তিনি ছিলেন নীরব। একদিন হাঁটার সময় এপস্টেইন আমাকে স্পর্শ করার সুযোগ ট্রাম্পকে দেয়ার জন্য বাজে কথা শোনান। এরপর আমি ঘটে যাওয়া ঘটনার জন্য লজ্জাবোধ করতে থাকি। সেখানে আমাকে এক দলা মাংসপিণ্ডের মতো ব্যবহার করা হয়েছে। বহুদিন আমি এটাকে বয়ে বেড়াচ্ছি।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.