কমালা-ট্রাম্পের পাল্টাপাল্টি আক্রমণ
রোনাল্ড রিগ্যানের পর ক্যালিফোর্নিয়া থেকে প্রথমবার এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করছেন কমালা হ্যারিস। কিন্তু ওই রাজ্যের সবচেয়ে বড় খবরের কাগজ লস অ্যানজেলেস টাইমস তাকে এখন পর্যন্ত অনুমোদন দেয়নি। এ জন্য এই পত্রিকাটির সম্পাদকীয় বিভাগের সম্পাদক মারিয়েল গারজা পদত্যাগ করেছেন। কলাম্বিয়া জার্নালিজম রিভিউ’কে তিনি বলেছেন, তার বিভাগের বোর্ড কমালা হ্যারিসকে সমর্থন দেয়ার আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। কিন্তু পত্রিকা কর্তৃপক্ষ কোনো পক্ষ নেবে না বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। পত্রিকাটির বিলিয়নিয়ার মালিক প্যাট্রিক সুন-শিওং এক পোস্টে এক্সে জানিয়েছেন- প্রতিজন প্রার্থীর ইতিবাচক ও নেতিবাচক নীতির বিশ্লেষণের খসড়া করার সুযোগ দেয়া হয়েছে এর সম্পাদকীয় পরিষদে। পক্ষান্তরে তাদের বোর্ড নীরবতা অবলম্বন করে এবং তাদের সিদ্ধান্ত আমি মেনে নিয়েছি। লস অ্যানজেলেস টাইমসের এমন প্রতিক্রিয়ার জবাবে কমালা হ্যারিসকে আক্রমণ করে প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্প বলেছেন, এমনকি নিজের ক্যালিফোর্নিয়ার মানুষও তাকে প্রেসিডেন্ট পদে চায় না। তবে এরই মধ্যে নিউ ইয়র্ক টাইমস, বস্টন গ্লোবের মতো বড় মাপের পত্রিকাগুলো থেকে অনুমোদন পেয়েছেন। অন্যদিকে ট্রাম্পকে সমর্থন করছে ওয়াশিংটন টাইমস, লাস ভেগাস রিভিউ-জার্নালের মতো কিছু পত্রিকা।
নির্বাচনের দিন-ক্ষণ ক্রমশ ঘনিয়ে আসছে। এমন অবস্থায় যেসব ভোটার এখনো সিদ্ধান্ত নেননি তারা কাকে ভোট দেবেন- কমালা এবং ট্রাম্পের বর্তমানের মূল লড়াই চলছে তাদেরকে নিয়ে। এসব ভোটারকে আকৃষ্ট করতে তারা বিভিন্ন রকম ইস্যু সামনে আনছেন। তার মধ্যে আছে মুদ্রাস্ফীতি, গর্ভপাত, অভিবাসন এবং অস্ত্র। কমালা হ্যারিস বলেছেন, তিনি নির্বাচিত হলে তার দায়িত্ব গ্রহণের প্রথমদিনে অগ্রাধিকার হবে কর্মজীবী মানুষের জন্য খাদ্য ও গৃহায়ন খরচ কমিয়ে আনা। অন্যদিকে ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি মুদ্রাস্ফীতিকে বিনাশ ঘটিয়ে দেবেন। আরও বলেছেন ডকুমেন্টবিহীন অভিবাসীদেরকে তাদের দেশে ফেরত পাঠিয়ে গৃহায়নের ওপর চাপ কমে যাবে। গর্ভপাত ইস্যুতে কমালা হ্যারিস বলছেন, তিনি এমন আইন করার পক্ষে যা সারা দেশে প্রজনন অধিকারকে সুরক্ষিত রাখবে। ওদিকে প্রথম দফায় ক্ষমতায় থাকাকালে গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকারকে বাতিল করার পথ তৈরি করে ফেলেছিলেন। এই অধিকার ১৯৭৩ সালের একটি রায়, যা পরিচিত ‘রো বনাম ওয়েড’ নামে। এখন তিনি গর্ভপাত ইস্যুতে একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ বার্তা পেতে সংগ্রাম করছেন। অভিবাসন ইস্যুতে কমালা হ্যারিস তার কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। এ সময় তিনি ক্যালিফোর্নিয়াতে একজন প্রসিকিউটর হিসেবে মানব পাচার ইস্যুতে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তা শেয়ার করেন। পক্ষান্তরে সীমান্তে পুরোপুরি দেয়াল নির্মাণ করে তা সিল করে দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন ট্রাম্প। একই সঙ্গে সীমান্তে আইনের প্রয়োগ বৃদ্ধি করবেন। কমালা হ্যারিস অস্ত্র সংক্রান্ত সহিংসতা রোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কঠোর আইন করার কথা বলেছেন। সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনী রক্ষার পক্ষে নিজের কঠোর অবস্থান জানিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। উল্লেখ্য, দ্বিতীয় সংশোধনীর অধীনে অস্ত্র রাখার অধিকার দেয়া হয়েছে।
প্রচারণায় দুই প্রার্থীই কঠোরভাবে লেগে আছেন। এরই মধ্যে কমালা হ্যারিসের প্রচারণায় নেমে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে ইতিহাস সৃষ্টি করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও সাবেক ফার্স্টলেডি মিশেল ওবামা। গতকাল জর্জিয়ার ক্লার্কস্টোনে এক নির্বাচনী প্রচারণায় প্রথমবারের মতো কমালা হ্যারিসের সঙ্গে এক মঞ্চে দেখা যাওয়ার কথা বারাক ওবামাকে। তাদের সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত থাকার কথা শুধু স্প্রিংসটিনের। গতকাল সন্ধ্যায় অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির মুলেট অ্যারিনাতে র্যালি করার কথা ডনাল্ড ট্রাম্পের। পরে তার লাস ভেগাসে যাওয়ার কথা। সেখানে রক্ষণশীল একটি গ্রুপ ‘টার্র্নি পয়েন্ট’-এর আয়োজনে এক র্যালিতে বক্তব্য রাখার কথা।
গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বলা হয়েছে, কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে সাতটি সুইং স্টেটে। তার মধ্যে মিশিগান, নেভাদা, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভ্যানিয়া এবং উইসকনসিনে কমালা এবং ট্রাম্পের মধ্যে জনমত জরিপের ব্যবধান মাত্র এক পয়েন্টে। অ্যারিজোনা এবং জর্জিয়াতে দুই পয়েন্টে এগিয়ে আছেন ট্রাম্প। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে আগাম ভোট দিয়েছেন প্রায় দুই কোটি ৬৫ লাখ মানুষ। এ তথ্য ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডা ইলেকশন ল্যাবের।
No comments