প্রেসিডেন্ট ইস্যু: দলগুলোর সঙ্গে সরকারের আলোচনা চলছে
সিদ্ধান্ত নিতে কতদিন সময় লাগবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নির্ভর করবে। তারা কোন অবস্থানে যাবে। তাদের সঙ্গে আমাদের কী কথা হয়। তাদের আশঙ্কা কোথায়। তাদের আশঙ্কাগুলো আদৌ বাস্তবসম্মত কি না। এটা যে তাড়াহুড়ো করছি তা নয়, আবার বিলম্বিত করাও যাচ্ছে না। এটা এমন একটা পদ সেখানে দীর্ঘদিন ধরে অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে কেউই চাইবে না। যেহেতু গণদাবি তাই বিষয়টি বিলম্বিত করার সুযোগ নেই। কিন্তু কতদিন সেটা বলা কঠিন।
সরকার চাপে আছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সরকার পরিচালনায় পুরোটা অনেক চাপ। বাজেট প্রণয়ন, অর্থনীতি পরিচালনা- বহুমুখী আন্দোলন। সরকার পরিচালনা অনেক বেশি চাপ। তবে এটা নিয়ে অস্বস্তিতে পড়ার কোনো কারণ নেই। বিভিন্ন দাবিতে চলমান আন্দোলনের কারণে নাগরিক জীবনের ভোগান্তি নিয়ে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করি যেন কোনো রকম হিংসাত্মক পর্যায়ে না গিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে। যারা আন্দোলন করেন তারা জনভোগান্তির কথা চিন্তা করছেন না। আমরা আন্দোলন করতে নিষেধ করি না। মানুষের আন্দোলন করার অধিকার আছে। এটাকে আমরা সম্মান করি। পুলিশেরও রাইট আছে কোথায় আন্দোলন করার সেটা নির্ধারণ করার। তাই আমরা বলছি জনভোগান্তি না করে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে করতে। একটা চেঞ্জ অব কালচার-এ আসতে হলে সময় দিতে হয়।
ছাত্রলীগ নিষেদ্ধের কারণ হিসেবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, গেজেটে খুব স্পষ্ট। গণমাধ্যমে ছাত্রলীগকে হেলমেট বাহিনী, হকিস্টিক দিয়ে হামলা, পুলিশের কাপড় পরে হামলার মতো ঘটনা প্রকাশ হয়েছে। আমরা প্রত্যক্ষ করেছি নিরাপদ সড়ক আন্দোলনসহ সব আন্দোলনে ছাত্রলীগকে একটা সন্ত্রাসী ভূমিকায়। তখন যারা ক্ষমতায় ছিল তখন বলা হয়েছে আন্দোলন দমনে ছাত্রলীগ যথেষ্ট। ফলে ছাত্রলীগকে যে সন্ত্রাসী কায়দায় ব্যবহার করা হয়েছে সেটাও স্পষ্ট। সেটা কারও না বুঝার কোনো কারণ নাই। তাদের নিষিদ্ধ করার আরেকটা কারণ জুলাই গণহত্যার পরেও যে তারা থেমে গেছে তা না। আবার আদালত কর্তৃকও তারা বেশ কয়েকবার দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। আমরা আবরার ফাহাদ ও বিশ্বজিতের কথা ভুলে যেতে পারি না। এগুলো সবার চোখের সামনে হয়েছে। এ সিদ্ধান্তটা বর্তমানের প্রাধিকার বিবেচনায় নিতে হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্টেও বলা হয়েছে, জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করতে রাষ্ট্রের স্বার্থের বিরুদ্ধে- এমনকি ৫ই আগস্টের পরও কিন্তু ছাত্রলীগ কর্তৃক হামলা হয়েছে। এটা ডকুমেন্টেড। যেহেতু সরকারকে ক্ষমতা দেয়া আছে একটা সন্ত্রাসী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার। সেখানে সংস্থার রিপোর্ট পাওয়ার পর দেখে বসে থাকার সুযোগ নেই। অন্য কোনো রাজনৈতিক সংস্থাকে নিষিদ্ধ করার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এদের বিরুদ্ধে সুনির্ধারিত অভিযোগ ছিল এবং সেটি আগেও ছিল। তাই এ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের ক্ষেত্রে যেভাবে ডিল করা হয় সেভাবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। নিষিদ্ধ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের লাগাম টানা। আগের অবস্থায় চলে যাওয়ার সুযোগ নেই। আগের অবস্থায় তারাই আছে। ৫ই আগস্টের পরও তারা তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ইতি টানেনি। সংস্থাগুলোর রিপোর্ট এমনই।
পুলিশের ওপর হামলা ও দায়িত্বে অবহেলার বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক জায়গায় ট্রাফিক পুলিশ ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছে না। এটিসহ সেগুলো আলোচনা হয়েছে। যেখানে প্রতিবাদ হচ্ছে সেখানে হামলা প্রতি হামলা হতে পারে। কিন্তু শান্ত পরিবেশ আছে সেখানে দায়িত্বে অবহেলা আছে। এখনো হয়তো আশ্বস্ত হচ্ছে না অথবা সাহস পাচ্ছে না সেগুলো মোকাবিলা করার। পুলিশ ছাড়া চলতে পারবো না। অনেকে কাজে নেমেছে। পুলিশ বাহিনীর অনেকের মধ্যে এখনো নির্লিপ্ততা আছে। আমরা বার বার বলছি দোষী ছাড়া কাউকে বিচারের আওতায় আনা হবে না।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ব্যাপারে কোনো আলোচনা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, এটি হাইকোর্টের রিট পিটিশনে খারিজ হয়ে গেছে। আন্দোলনের ভাষা আর আমাদের ভাষা এক হতে পারে না। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেন, এটা রাজনৈতিক দলগুলোর থেকে আসতে হবে। এটা ডায়ালগের বিষয় বলে মনে করে সরকার। অপরাধীদের ক্ষেত্রে আমরা বিচারের পক্ষে। যারা সন্ত্রাসী তাদেরও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। গ্রেপ্তার থেকে বিচারিক প্রক্রিয়ায়। কোনো মব জাস্টিসকে আমরা সমর্থন করি না। নির্দিষ্ট অপরাধের ভিত্তিতে ব্যবস্থা হবে। অপরাধীদের আরও দ্রুতগতিতে গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া চলবে। রিজওয়ানা হাসান বলেন, কেউ পলাতক ও নিখোঁজ থাকলে বিচার হবে না- এমন না। সবার বিচার হবে। এক বিদেশি মিডিয়ার প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা আলাদাভাবে বলেছি যে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে দৃঢ় ও ভালো সম্পর্ক চায়। এটা যেকোনো বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একে অপরকে শোনা ও বোঝা। বাংলাদেশের মানুষ ভারতের ভিসা সীমিতকরণ নীতির কারণে অখুশি। এটা ভারত সরকার অখুশি বলে মনে হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ভারতকে এখানকার পরিবর্তনের (সরকার) বিষয় জানিয়েছে। এ সরকারের সময় ভারত ব্যতীত কোনো দেশ বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সীমিত করেনি। আবার বাংলাদেশে যারা নানা অপরাধ করেছে ছাত্রদের বিরুদ্ধে ভারত শেল্টার দিয়েছে। তাই ভারতকে এটা পুনঃবিবেচনা করতে হবে। এ ছাড়াও এখন থেকে সরকারি খরচে আর হজের সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া হজ নিয়ে সৌদি বলেছে নৌ পথে পাঠালে তাদের আপত্তি নেই। এটা এখন হাজিরা চাইলে সম্ভব। এবার থেকে শুরু হবে।
No comments