চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২, ৩ বারের বেশি বিসিএস নয়: মিশ্র প্রতিক্রিয়া
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া মানবজমিনকে বলেন, বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের দু’টি সিদ্ধান্তই ভালো হয়েছে। ৩ বার বিসিএস পরীক্ষা দেয়ার বিষয়টি সঠিক হয়েছে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, শুধু বিসিএসের পেছনে ঘুরলে হবে না। চাকরিপ্রত্যাশীদের অন্য চাকরিও খুঁজতে হবে। তারা অন্য চাকরিতে যাক। সেটা তাদের জন্য ভালো হবে। সমাজের ও দেশের উপকার হবে।
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর করা প্রসঙ্গে এ জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ বলেন, এটিও ঠিক আছে। তবে সর্বক্ষেত্রে ৩২ করার দরকার ছিল না। ৪র্থ শ্রেণির চাকরি প্রার্থীদের ৩০ বা ২৭ বছর করলে ভালো হতো। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, এসব চাকরির জন্য এসএসসি ও অষ্টম শ্রেণি পাস যোগ্যতা চাওয়া হয়। এখানে চাকরির সংখ্যাও বেশি। ফলে বয়সের শেষে এসে কেউ যদি তার এমএ পাস ডিগ্রির তথ্য গোপন করে এই শ্রেণির চাকরিতে পরীক্ষা দেন এবং তিনি উত্তীর্ণ হন। চাকরির পরীক্ষাও ভালো করেন এসব প্রার্থীরা। কিন্তু সমস্যাটা তৈরি হয় চাকরিতে প্রবেশের পর। দেখা যায় তখন অফিসে হতাশ হয়ে বসে থাকেন ওই কর্মচারী। নিজের ক্ষতি হয়। কাজে মনোযোগ দেন না। এতে সরকারি কাজে বিঘ্ন ঘটে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতি ড. মো. আনোয়ার উল্ল্যাহ মানবজমিনকে বলেন, এই সিদ্ধান্তে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সদস্যরা হতাশ। তিনি বলেন, চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন জারির আগে এখনো পর্যালোচনা করার সুযোগ আছে। এখানে স্বচ্ছতা থাকা দরকার। সংসদ থাকলে আমরা হয়তো জানতে পারতাম বিষয়টি নিয়ে কি বিতর্ক হয়েছে। কিন্তু আমরা তো এখন জানতে পারলাম না। তিনি বলেন, সব সময় চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর সঙ্গে অবসরের বয়সটাও ঠিক করা হয়। এবার তা ভিন্ন হলো। তিনি বলেন, ছাত্ররা বিশ্বের ১৬২টি দেশের কথা তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশে কোনো সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক চিত্র ও পার্শ্ববর্তী দেশের বিষয়টি যৌক্তিক হিসেবে বিবেচনায় নেয়া হয়। গড় আয়ুর বিষয়টিও দেখা হয়। কিন্তু এবার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সেই যৌক্তিকতা আমলে নেয়া হয়নি বলে তিনি মনে করেন। ছাত্রদের দাবির প্রতি সম্মান দেখানো যৌক্তিক ছিল। তাদের সংগঠন থেকে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ ও অবসরের সময়সীমা যথাক্রমে ৩৫ ও ৬৫ বছর করার দাবি জানানো হয়েছিল। বিসিএস পরীক্ষা ৩বার সীমা দিয়ে আটকানোর বিষয়টিতে অধিকারের প্রতি হস্তক্ষেপের শামিল বলে সংগঠনের সভাপতি এবং সচিব হিসেবে মনে করেন তিনি।
এদিকে সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীদের প্ল্যাটফরম ‘বয়সসীমা ৩৫ প্রত্যাশী শিক্ষার্থী সমন্বয় পরিষদ’। একইসঙ্গে স্থায়ীভাবে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। গতকাল বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে তাৎক্ষণিক এক সংবাদ সম্মেলনে বয়সসীমা ৩৫ প্রত্যাশী শিক্ষার্থী সমন্বয় পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক মো. শরিফুল হাসান শুভ এ ঘোষণা দেন। এসময় শরিফুল হাসান বলেন, আমরা সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা স্থায়ীভাবে ৩৫ করার জন্য দীর্ঘ ১২ বছর ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছি। গত ৩০শে সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত যে সুপারিশ কমিটি গঠন করেছিল সেখানে আমাদের প্রতিফলন ঘটেছিল এবং সরকারকেও ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম। তখন আমরা বলেছিলাম, কমিটির সুপারিশটি যেনো সরকার বহাল রাখে। কিন্তু আজকে সরকার জানিয়েছে, এটি ৩২ বছর করা হয়েছে। এতে আমাদের দাবি-দাওয়ার প্রতিফলন ঘটেনি। এসময় তিনি সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনারা যদি ৩২ বছর রাখতেন, তাহলে কেন সুপারিশ কমিটি করেছিলেন। কেনই বা এতদিন টালবাহানা করলেন। শরিফুল হাসান বলেন, আমরা এই সিদ্ধান্তকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছি। আমরা আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারের বোধোদয় হবে এবং চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করবে। এসময় তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দীর্ঘ ১২ বছর ধরে আন্দোলন করলেও কোনো সরকারই এভাবে আন্তরিকতার সঙ্গে চাকরির বয়স বাড়ায়নি। সেক্ষেত্রে বর্তমান সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। একইসঙ্গে সরকারকে বলবো, বিষয়টি পুনরায় বিবেচনায় নিয়ে স্থায়ী করে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করে দেয়ার জন্য। আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা শিগগিরই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সময়ের মধ্যে আন্দোলনের ঘোষণা দিবো। সেক্ষেত্রে সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তীতে কর্মসূচির বিষয়ে জানিয়ে দেবো।
No comments