ভোল পাল্টালেন তুলসি গাব্বার্ড

ভোল পাল্টে ফেললেন তুলসি গাব্বার্ড। কমপক্ষে ২০ বছর ডেমোক্রেট রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তিনি। কিন্তু আকস্মিক মঙ্গলবার ঘোষণা দিলেন রিপাবলিকান দলে যোগ দিচ্ছেন। একসময় প্রেসিডেন্ট পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন এই ডেমোক্রেট। কিন্তু নর্থ ক্যারোলাইনাতে ঘোষণা দিয়েছেন মঙ্গলবার। বলেছেন, তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে রিপাবলিকান পার্টিতে যোগ দিচ্ছেন। এ খবর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ম্যাগাজিন টাইম। তুলসি গাব্বার্ড বলেন, আমি জনগণের পার্টিতে যোগ দিচ্ছি। আমি যোগ দিচ্ছি সমতার দলে। এই দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে দাসপ্রথার বিরুদ্ধে এবং তার ইতি ঘটানোর লড়াই থেকে। এই দলটি হলো কমন সেন্সের দল। এই দলটির নেতৃত্ব দিয়েছেন এমন একজন প্রেসিডেন্ট, যার আছে শান্তির জন্য উৎসাহ ও শক্তি। তুলসি গাব্বার্ড আরও বলেন, আপনারা জানেন, কমপক্ষে ২০ বছর আমি ডেমোক্রেট ছিলাম। কিন্তু বর্তমানে ডেমোক্রেট পার্টি একেবারে অচেনা। তিনি বলেন, উদাহরণ হিসেবে আপনি যখন কমালা হ্যারিসের দিকে তাকাবেন, দেখবেন তিনি স্বাধীনতা বিরোধী। তিনি সেন্সরশিপপন্থি। তিনি সীমান্ত খুলে দেয়ার পক্ষে। শান্তির তোয়াক্কা না করে তিনি যুদ্ধের পক্ষে। টাইম লিখেছে, তুলসি গাব্বার্ডের বয়স এখন ৪৩ বছর। তিনি এখন রিপাবলিকান। তবে তিনি রিপাবলিকান হওয়াতে কেউই হতাশ হননি। কারণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তার ক্যারিয়ারের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে হাওয়াই রাজ্য থেকে নির্বাচিত সাবেক এই রাজনীতিক প্রকাশ্যে ডেমোক্রেটদের সমালোচনা করেছেন। একই সঙ্গে তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর সমর্থক হয়ে ওঠেন। এখানে উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতেও এশিয়ার মতো দলবদলের ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি রিপাবলিকানদের প্রথম সারির কিছু নেতা দল বদল করে ডেমোক্রেটদের সমর্থন করেছেন। তার মধ্যে আছেন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি ও তার মেয়ে প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক কনফারেন্স চেয়ার লিজ চেনি। তারা এবারের নির্বাচনে এরই মধ্যে সমর্থন দিয়েছেন ডেমোক্রেট প্রার্থী কমালা হ্যারিসকে। এরপরই তুলসি গাব্বার্ডের দল পরিবর্তনের খবর এলো। কমালা হ্যারিসকে ডিক চেনি ও তার মেয়ে লিজ চেনি সমর্থন করা নিয়ে তুলসি গাব্বার্ড বলেছেন, ডেমোক্রেট যে যুদ্ধবাজ একটি দল এর মধ্য দিয়ে সেটাই প্রমাণ হলো।

তুলসি গাব্বার্ড স্থানীয় শিক্ষাবিদ ও ক্ষুদ্র বাণিজ্যের মালিকের মেয়ে। তার পিতামাতা স্থানীয় রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। ফলে তুলসি গাব্বার্ড তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন ২০০২ সালে। ওই সময় তিনি হাওয়াই রাজ্যে এ যাবতকালের সবচেয়ে কণিষ্ঠ পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। ওয়েস্ট ওয়াহুর ডিস্ট্রিক্ট ৪২ থেকে ডেমোক্রেট হিসেবে তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন সেখানে। তিনি আর্মি ন্যাশনাল গার্ডে দায়িত্ব পালনের জন্য রাজনীতি ছেড়ে দেন ২০০৪ সালে। তাকে ইরাক ও কুয়েতে মোতায়েন করা হয়। সেখান থেকে ফিরে তিনি ২০১০ সালে হনুলুলু সিটি কাউন্সিলে নির্বাচন করে জয়ী হন। ২০১১১ সালে তিনি পুরো রাজনীতিতে যুক্ত হন। এ সময় তিনি কংগ্রেসের জন্য হাওয়াইয়ের সেকেন্ড ডিস্ট্রিক্ট আসনের জন্য ডেমোক্রেট প্রাইমারিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ সময় পর্যন্ত তিনি খুব বেশি পরিচিত ছিলেন না। সেখানে তিনি অন্য ৫জন  প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করেন। ফলে ডেমোক্রেট পার্টির একজন উদীয়মান তারকা হিসেবে দ্রুতই আবির্ভাব ঘটে তার। তাকে ডেকে পাঠান প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। ওই সময়কার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কংগ্রেসে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে অনুমোদন করেন। ২০১২ ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে বক্তব্য দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় তাকে। ২০১২ সালে প্রথম হিন্দু, প্রথম আমেরিকান সামোয়ান হিসেবে দ্রুততার সঙ্গে উপরের দিকে উঠে যান তুলসি গাব্বার্ড। ২০১৩ সালে ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কনভেনশনের ভাইস চেয়ার নির্বাচিত হন। তিনি সব সময় দলীয় সীমারেখা মেনে চলেননি। মাঝেমাঝেই তখনকার প্রেসিডেন্ট ওবামার পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করার জন্য ডেমোক্রেট নেতৃত্বের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়েছেন। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় তিনি ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কংগ্রেসের প্রাইমারি প্রক্রিয়ার সমালোচনা করেন। অভিযোগ তোলেন, এ প্রক্রিয়ায় সুবিধা দেয়া হয়েছে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে।  ওই বছর ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কংগ্রেসের ভাইস চেয়ার পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং নির্বাচনে স্বতন্ত্রপ্রার্থী ভারমন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সের প্রচারণায় সমর্থন দেন।  এ কারণে তিনি একজন প্রথম সারি সমর্থক হয়ে ওঠেন।
২০১৬ সালের নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর তুলসি গাব্বার্ড বলেন, প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত (ট্রাম্প)-এর সঙ্গে তার খোলামেলা এবং ইতিবাচক মিটিং হয়েছে। তখন গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, ট্রাম্পের মন্ত্রিপরিষদে সুযোগ পাচ্ছেন তুলসি গাব্বার্ড।  ২০১৯ সালে তিনি নিজে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণা শুরু করেন। ঘোষণা দেন যে, কংগ্রেসের জন্য নতুন নির্বাচন করবেন না। ওই সময়ের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রথম অভিশংসন প্রাস্তাবে ভোটের পর তিনি ডেমোক্রেট শিবিরে সবচেয়ে অপছন্দের প্রার্থী হয়ে ওঠেন।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.