আওয়ামী লীগের ডিএনএতে ফ্যাসিজম আছে: আসিফ নজরুল
বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে আদর্শ প্রকাশনী আয়োজিত ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা : আসন্ন চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এতে সংবিধান সংস্কার কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান, সাংবাদিক মনির হায়দার, সাহেদ আলম, সাইয়েদ আবদুল্লাহ, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম ও উমামা ফাতেমা অংশ নেন।
আলোচনায় ড. আসিফ নজরুল বলেন, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে ঠিক কত লোক মারা গিয়েছে তা আমরা জানি না। যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থানে যে নৃশংসতা ও হত্যার খবর আমরা প্রতিনিয়ত জানতে পারছি তা ভাষায় বর্ণনা কঠিন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা আমাদের নতুন পথ দেখিয়েছে, সাহস জুগিয়েছে। তাদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরাও আগস্ট মাসে মৃত্যুভয় ভুলে গিয়েছিলাম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, শেখ হাসিনা দেশের প্রতিটি সিস্টেমকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছেন। রাষ্ট্রের সমস্ত ভেঙে পড়া কাঠামোর পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সহজ না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগুলো সংস্কারের সময় দিতে হবে। আমরা ১৫ বছর ধৈর্য ধারণ করেছিলাম, এখন যেন অল্পতেই অধৈর্য হয়ে না পড়ি।
নিজের এবং সরকারের সমালোচনাকে সাধুবাদ জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন,সমালোচনা অবশ্যই করবেন, তবে একটু ভালোবাসা দিয়ে করবেন আমরা তো আর আওয়ামী লীগ না। তিনি এ সময় আক্ষেপ করে বলেন, পত্রপত্রিকা, সমাবেশ ও ফেসবুকে এখন সবাই কেবল সরকার ও সমন্বয়কদের সমালোচনা নিয়ে ব্যস্ত। কেউ ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগের অপকর্ম সম্পর্কে বলছে না। আমরা কি তাদের সব অপরাধ ভুলে গিয়েছি,তাদের এত দ্রুত ক্ষমা করে দিয়েছি?
আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সাইয়েদ আব্দুল্লাহ বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর মানুষ এখন নিজেকে প্রজা না ভেবে দেশের নাগরিক ভাবতে শুরু করেছে। এটাই অনেক বড় পরিবর্তন। তিনি বলেন,অন্তর্বর্তী সরকারের এখন এক নাম্বার চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অপকর্মকারীদের বিচার করা। আমি মনে করি যে প্রক্রিয়ায় তা করা হচ্ছে তা সঠিক নয়। সুতরাং সবার আগে বিচার বিভাগের সংস্কার প্রয়োজন। পুলিশ বিভাগের আমূল সংস্কার প্রয়োজন।
আলোচনা সভায় গত ৩টি নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করে গণতন্ত্র হত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
তিনি বলেন, গত ১৬ বছরে ৩টি নির্বাচন এই সংবিধানের ধারাবাহিকতার দোহায় দিয়েই করা হয়েছে। এখন ৫ই আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আন্দোলনকারীদের সে সংবিধান বহন করা কি দায়িত্ব?
হাসনাত বলেন, আমরা গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী একটি ভুল করেছি। আমরা বিপ্লবটিকে সংবিধানের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলেছি। এর কারণে আমাদের নানা জটিলতায় পড়তে হয়েছে। ৫ই আগস্ট ছাত্রজনতা এই মুজিববাদী সংবিধানের বিপক্ষে রায় দিয়েছিল,ফলে ৭২-এর সংবিধান এখন একেবারে অপ্রাসঙ্গিক। তিনি বলেন, দ্রুত ফ্যাসিবাদকে কায়েম রাখার অন্যতম মূল নিয়ামক এই শক্তিকে দ্রুত বাতিল ঘোষণা করতে হবে। কেন্দ্রীয় এই সমন্বয়ক বলেন, শুধু মত প্রকাশের স্বাধীনতা দরকার নেই, দ্বিমত প্রকাশের স্বাধীনতা দরকার। মত আগেও প্রকাশ করা যেতো, তবে সেটা ছিলো সহমত। তাই আমরা শুধু মত নয়, দ্বিমত প্রকাশের স্বাধীনতা চাই।
আলোচনা সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক কমিটির মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার এবং এর একক ন্যারেটিভ দাঁড় করানোর সমালোচনা করেন। এত দ্রুত আন্দোলনের শহীদদের আত্মত্যাগ ভুলে গিয়ে ও রাষ্ট্র সংস্কারের কথা পাশ কাটিয়ে শুধু দ্রুত নির্বাচন চাইলে সেটি জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সাথে বেঈমানি করা হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
No comments