অনিয়ম যেখানে নিয়ম: দালাল সিন্ডিকেটে পোয়াবারো হাসপাতাল-ক্লিনিকের

একাধিকবার উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় উত্থাপনের পরও কোনোভাবেই নির্মূল হচ্ছে না রাজধানীর পার্শ্ববর্তী দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য। প্রতিদিন স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা রোগীরা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সরকারি হাসপাতাল, বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কাছে। কোনো নিয়মের তোয়াক্কা করছেন না উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জসিম উদ্দিন ও বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের মালিক কর্তৃপক্ষ। সব অনিয়ম যেখানে নিয়মে পরিণত হয়েছে। এর সঙ্গে অনেকটা পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলছে অনুমোদনহীন বেসরকারি ক্লিনিক-হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা। এসব ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন যেন মুখে কুলুপ এটে রেখেছেন।

শক্তিশালী এমন দালাল সিন্ডিকেট ভাঙতে সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে মিটিং করেন। একের পর এক উপজেলা আইনশৃঙখলা সভায় বিষয়টি নিয়ে সরব আলোচনা থাকলেও পরবর্তীতে তা যেন অদৃশ্য কারণে নীরবতায় রূপ নেয়। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার দেখানো মাত্র তাদের প্রেসক্রিপশন হাসপাতালের ভিতর থেকেই বেসরকারি ক্লিনিকের দালাল চক্র নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যায় তাদের নির্দিষ্ট বেসরকারি ক্লিনিকে। এতে করে খেটে খাওয়া অনেকে অসহায় মানুষ তাদের স্বাস্থ্যসেবা নিতে গিয়ে বেসরকারি ক্লিনিকে গিয়ে হিমশিম খান। অনেকেই অর্থনৈতিক কারণে পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে না পেরে কোনো রকম ওষুধ কিনে ফিরে যান অল্লাহর উপর ভরসা করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি এক চিকিৎসক জানান, জরুরি বিভাগসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওৎ পেতে থাকেন বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধি (দালাল চক্র)। উন্নত চিকিৎসার নাম করে রোগীদের ভুল বুঝিয়ে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রকাশ্যে এমন কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেলেও ক্লিনিকের মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় এ ব্যাপারে নীরব ভূমিকায় রয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া মালিকপক্ষের সঙ্গে দালালচক্রের যোগসাজশও রয়েছে। শুধু দালালই নয়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে কেন্দ্র করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এর পার্শ্ববর্তী জায়গায় গড়ে উঠেছে ৫টি বেসরকারি ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক ন্টোর। অথচ, সরকারি হাসপাতালের খোদ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তার দিয়েই এ সমস্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান উদ্বোধন করা হয়েছে। যার কারণে সরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররা রোগীদের প্রয়োজন মনে করলে আল্ট্রা, ইকোসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা দিয়ে তারা সরকারি হাসপাতালের ডিউটির সময়ে বেসরকারি ক্লিনিকে গিয়ে সেবা প্রদান করেন। এর ফলে সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ রোগী। শুধু তাই নয় হাসপাতালের অনেক ডাক্তারের সঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক ভালো থাকায় তাদের সরকারি সেবা না দিয়ে বেসরকারি ক্লিনিকে রোগীদের ভালো সেবার কথা বলে সেখানে যেতে উদ্বুদ্ধ করেন। এ সুযোগে সরকারি হাসপাতালের পাশে গড়ে ওঠা পার্শ্ববর্তী ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিকের দালাল চক্র সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন শিপ্টে ভাগ করে বিভিন্ন ডাক্তারের রুম ও  জরুরি বিভাগে অবস্থান করেন। এ ছাড়া প্রশাসন অথবা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সিসি ক্যামেরায় দেখলে প্রতিষ্ঠানটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জসিম উদ্দিন  বিভিন্ন ডাক্তার ও কর্মচারীদের ফোনে সতর্ক করে দেন।

ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, আমাদের কাছে হাসপাতাল বা ডা. জসিম উদ্দিনের ব্যাপারে কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিবো। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জসিম উদ্দিন বলেন, সবসময় তো আমরা বসে বসে দালালদের পাহারা দিতে পারবো না। এ ব্যাপারে সবার সচেতনতা প্রয়োজন। পুলিশ বিভাগ থেকেও সহায়তা দরকার। এ ছাড়া যারা দালাল নিয়োগ করেছেন তাদেরও এ ধরনের অপকর্ম থেকে সরে যাওয়া উচিত। তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.