ইসরাইলের নৃশংসতা, নিরাপদ জোনে হামলা, নিহত ৪০

নৃশংসতার সর্বনিকৃষ্ঠ উদাহরণ সৃষ্টি করছে ইসরাইল। তারাই নিরাপদ জোন আখ্যা দিয়ে সেখানে অবিরাম বোমা হামলা চালাচ্ছে। এতে প্রাণ হারাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। অন্যদিকে যুদ্ধবিরতি বা শান্তিচুক্তির নামে চলছে নাটক। এক বছরের কাছাকাছি সময়ে এই নাটকের নাম করে সময়ক্ষেপণ করে নিরীহ সাধারণ মানুষ, নারী শিশুদের রক্তে রঞ্জিত করছে গাজার শুষ্ক মাটি। সারা বিশ্ব তাকিয়ে তাকিয়ে সে দৃশ্য দেখছে। আর আলোচনার টেবিলে নানা কথা ছুটছে। কিন্তু কেউই নিবৃত করতে পারছে না ইসরাইলকে।

সর্বশেষ সোমবার দিবাগত রাতে তারা নিরাপদ জোন ঘোষিত খান ইউনুসের আল মাওয়াসি শিবিরে হামলা করেছে। এতে কমপক্ষে ২০টি তাঁবুতে আগুন ধরে যায়। নিহত হন কমপক্ষে ৪০ জন। তবে ইসরাইলের সেনাবাহিনীর দাবি ওই আশ্রয়শিবির ছিল হামাসের কমান্ড সেন্টার। বরাবরই তারা হামলা চালিয়ে এই দাবি করে। কিন্তু দেখা যায়, ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করে আনা হচ্ছে শিশু, নারী ও নিরীহ সাধারণ মানুষদের লাশ। রক্তের মিছিলে প্রতিক্ষণ তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিষয়ক কর্মকর্তারা বার্তা সংস্থা এএফপি ও বিবিসিকে বলেছেন, আল মাওয়াসি শিবিরে নিহতের পাশাপাশি আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৬০ জন। তাদেরকে স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। স্থানীয় অধিবাসীরা এবং চিকিৎসকরা বলেছেন, ওই তাঁবুর আশ্রয়শিবিরে কমপক্ষে চারটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন ইসরাইলের নৃশংস যুদ্ধে বাস্তুচ্যুত সাধারণ ফিলিস্তিনিরা। ইমার্জেন্সি বিভাগ বলেছে, কমপক্ষে ২০টি তাঁবুতে আগুন ধরে যায়। ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে কমপক্ষে ৯ মিটার বা ৩০ ফুট গভীর গর্ত হয়ে যায়।

গাজার সিভিল ইমার্জেন্সির এক কর্মকর্তা বলেছেন, আমাদের টিম শহীদদের সরিয়ে নিচ্ছেন। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে ছোটাছুটি করছেন। এ দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে এটা ইসরাইলের নতুন এক গণহত্যা। তবে ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) বলেছে, তারা হামাসের বড় একটি সেন্টারে হামলা করেছে। সেটা ছিল তাদের কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার। সেখান থেকে আইডিএফ সেনা ও ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামলা চালানো হয়েছে। কিন্তু ইসরাইলের এই দাবি যদি সত্যি হয়, তাহলে তো কোনো হামাস কমান্ডার বা সদস্য নিহত হওয়ার কথা। কিন্তু এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তেমন কেউ মারা যাওয়ার কোনোই খবর পাওয়া যায়নি। তাদের এমন দাবিকে উড়িয়ে দিয়েছে হামাস। তারা টেলিগ্রামে দেয়া এক পোস্টে দাবি করেছে, ওই ক্যাম্পে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের উপস্থিতি নিয়ে দখলদার ইসরাইলের যে অভিযোগ তা নগ্ন মিথ্যা। স্থানীয়রা বলছেন, ঘটনাস্থল থেকে নিহত ও আহতদের উদ্ধার করে নিকটবর্তী হাসপাতালে দৌড়াতে দেখা গেছে অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে। তখনও মাথার ওপর দিয়ে ইসরাইলি যুদ্ধবিমান চক্কর দিচ্ছিল। উল্লেখ্য, গাজার প্রায় ২৩ লাখ মানুষকেই কমপক্ষে একবার তাদের বাড়িঘর থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা হয়েছে। অনেকে ১০ বার এমন ঘটনার শিকার হয়েছেন। গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে আল মাওয়াসিতে অবস্থান নিয়েছিলেন কয়েক লাখ মানুষ। গত বছর ৭ই অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে আল মাওয়াসি ক্যাম্পে বেশ কয়েকবার ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরাইল।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.