মিথ্যাচার নির্ভর রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে সরে আসতে হবে: ইফতেখারুজ্জামান

মিথ্যাচার নির্ভর রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ের সামনে এক মানববন্ধনে এ আহ্বান জানান তিনি। ডিবি ‘হেফাজতে’ আটক থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৬ সমন্বয়কারী ও সকল শিক্ষার্থীর মুক্তি চেয়ে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। যদিও মানববন্ধন শুরু হওয়ার আগে ৬ সমন্বয়কারীকে ছেড়ে দেয় ডিবি। মানববন্ধনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, নাগরিক সমাজ ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

চলমান কোটা আন্দোলন প্রসঙ্গে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘শুধুমাত্র এই ৬ জন আটকের বিষয় নয়, সার্বিকভাবে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে এই সংস্থাগুলো, তার পেছনে মূল বিষয় হলো দীর্ঘকালীন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের মধ্যে একটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা হয়েছে। সেই ধারণা হচ্ছে-তারা বিচারহীনতা উপভোগ করতে পারবে চিরদিন। যদি তাই হয়, তাহলে আপনি কেন মিথ্যা কথা বলছেন। বন্ধ করুন মিথ্যা কথা। আপনি বলুন-আমি নির্বিচারে গুলি করেছি। ছাত্রদের হত্যা করেছি।
এই মিথ্যাচার নির্ভর সরকার ও রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে সরে আসতে হবে। কারণ দেশবাসী জেনে গেছে, এটা মিথ্যাচারের কারাগার।’

সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে সকল প্রতিষ্ঠানগুলো মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছে। প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। প্রতিটা বিষয়ে জনগণকে মূর্খ মনে করেছে, অথচ নিজেরা যে মূর্খতার পরিচয় দিয়েছে সেটা তারা ভুলে গেছে। এই মূর্খতা, অন্ধত্ব এবং মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়ে তারা যে কাজগুলো করেছে সেটা সম্পূর্ণভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করেছে, আইনের লঙ্ঘন করেছে।’

সরকারি বিভিন্ন সংস্থাকে উদ্দেশ্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যে পেশাগত উৎকর্ষের কথা তারা বলে থাকেন, যে প্রশিক্ষণ তারা পেয়েছেন সেগুলোকে পদদলিত করে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তারা ভুলে গেছে তাদের মানদণ্ডে দেশবাসীকে বিচার করার কেনো সুযোগ নেই। দেশবাসী তাদের মতো মূর্খ নয়। তারা যে মিথ্যাচার করেছে, মূর্খতা দেখিয়েছে সেটা দেশবাসী বুঝে গেছে।’

জাতিসংঘের অধীনে তদন্তের আহ্বান জানিয়ে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচারে মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল বলেন, এই হত্যার বিচার করতে হবে। হুমকিদাতাদেরও বিচার করতে হবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি পুলিশ চাই না। আমরা বাংলাদেশের পুলিশ চাই। আপনার (পুলিশ) জনগণের জন্য কাজ করবেন। বাংলাদেশের পুলিশ হবেন।’

মানববন্ধনে আরও অংশ নেন অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, মানবাধিকারকর্মী শিরীন হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গীতি আরা নাসরীন ও সামিনা লুৎফা প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.