সাংবাদিক মেহেদীর ভাইয়ের প্রশ্ন কার বিরুদ্ধে মামলা করবো by মরিয়ম চম্পা

কার বিরুদ্ধে মামলা করবো? রাষ্ট্রের? রাষ্ট্রের সঙ্গে লড়াই করে টিকতে পারবো তো। কেউ পেরেছে এখন পর্যন্ত। গণমাধ্যমকর্মীদের জীবনের নিরাপত্তা কে দেবে? আমরা অসহায়। মেহেদীর দুই শিশু কন্যা, তার স্ত্রীর এবং বৃদ্ধ বাবা-মায়ের এখন কী হবে সেটা ভেবেই আমরা চারদিকে অন্ধকার দেখছি। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা টাইমস-এর নিহত সাংবাদিক হাসান মেহেদীর ছোট ভাই জাহিদ হাসান আশিক। মানবজমিনের সঙ্গে আলাপকালে আশিক বলেন, আমরা তিন ভাই। মেহেদী ছিল সবার বড়। ছোট ভাই সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। বাবাও পেশায় একজন গণমাধ্যমকর্মী ছিলেন। মা গৃহিণী। দীর্ঘদিন চাকরি করার পর আমরা বাবাকে সাংবাদিকতা থেকে অবসর নিতে বলি। হাসান মেহেদীর গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার বাউফলে। রাজধানীর একটি কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে সাংবাদিকতায় যোগ দেন। আশিক বলেন, ভাইয়া তার স্ত্রী এবং দুই কন্যা সন্তানকে নিয়ে কেরানীগঞ্জের ভাড়া বাসায় থাকতেন। ঘটনার দুই দিন আগে বাসা থেকে অফিসের কথা বলে বেরিয়ে আসেন। ১৮ই জুলাই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর হঠাৎ একটি ফোন পেয়ে আমরা হাসপাতালে ছুটে আসি। এসে দেখি সব শেষ। ভাইয়ার মরদেহ ঢাকা মেডিকেলের একটি ট্রলিতে পড়ে আছে। তার বুক- পেট-গলা-মাথাসহ পুরো অংশ গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমি পেশায় একজন অভিনেতা। আমি আর ভাইয়ার টাকায় মূলত আমাদের সংসার চলতো। বাবা-মা ছোট ভাইকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি থাকেন। ঘটনার পর তারা ঢাকায় এসেছেন। এরপর থেকে তারা দু’জনেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বাবার হার্টের সমস্যা রয়েছে। প্রতি সপ্তাহে তাকে অনেক টাকার ওষুধ খেতে হয়। মায়ের শরীর ভালো নেই। ভাইয়ার অবর্তমানে এখন সংসারের পুরো দায়িত্ব আমার কাঁধে। অভিনয় করে তেমন কোনো আয়- রোজগার নেই যেটা দিয়ে তিনটি পরিবারের খরচ চালাবো। তিনি বলেন, মেহেদীর স্ত্রী তার দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে গত রোববার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় ভাবীর হাতে একটি দশ লাখ টাকার চেক ডিপোজিট ও নগদ ৫০ হাজার টাকা তুলে দেয়া হয়।

ভাইয়ার অফিস থেকে তারা সহায়তা করার চেষ্টা করেছেন। এই অবস্থায় মেহেদীর অসহায় পরিবারের প্রতি কোনো বিত্তবান ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পাশে দাঁড়িয়ে তাদের দায়িত্ব নিলে হয়তো দুই সন্তান এবং স্ত্রী-বাবা-মা তারা মোটামুটি একটি স্বাভাবিক জীবন পেতেন। এবং আমার জন্য উপকার হতো। এর আগে পটুয়াখালীর হোসনাবাদ গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। মেহেদী অনলাইন সংবাদমাধ্যম ঢাকা টাইমসে কর্মরত ছিলেন। ১৮ই জুলাই সন্ধ্যায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) হাসপাতালে আনা হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। এ বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মী ইমাম হোসেন ইমন জানান, ওইদিন অন্য সাংবাদিকদের সঙ্গে থেকে পুলিশের পাশে দাঁড়িয়েই সংবাদ সংগ্রহ করেন হাসান মেহেদী। বিকালে পুলিশের একটি এপিসি থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে টিয়ারশেল ও গুলি ছোড়া হচ্ছিল। এ সময় হাসান মেহেদী গুলিবিদ্ধ হন। তার মুখ, গলা ও বুক ও শরীরে অসংখ্য ছররা গুলির চিহ্ন দেখা যায়। ঢাকা টাইমসের সিনিয়র রিপোর্টার হাসান মেহেদী দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিটে কর্মরত ছিলেন। ঢাকায় তিনি কেরানীগঞ্জ এলাকায় পরিবারসহ থাকতেন। তার সাত মাস ও চার বছর বয়সী দুই কন্যা শিশু রয়েছে। ঢাকা টাইমস-এর নিউজ এডিটর দিদার মালিকি মানবজমিনকে বলেন, যেহেতু তার বাসা কেরানীগঞ্জে তাই যাত্রাবাড়ী এলাকায় সংঘর্ষ চলাকালে মেহেদী সেখানে ডিউটি করেন। এবং কিছুক্ষণ পরপর অফিসে আপডেট দিচ্ছিলেন। বিকাল ৪টা ৪৩ মিনিট পর্যন্ত তাকে ফোনে পাওয়া যায়। এ সময় সর্বশেষ তিনি জানান, একটি মৃতদেহ রাস্তায় পড়ে আছে। এরপর আর তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। ফোনটি বারবার বন্ধ দেখাচ্ছিল। পরবর্তীতে আমরা ভেবে নেই হয়তো চার্জ ছিল না। কিন্তু সন্ধ্যার দিকে তার সঙ্গে থাকা এক সাংবাদিক অফিসে বিষয়টি জানালে আমরা ছুটে যাই। মেহেদীর নিথর দেহ হাসপাতালে পড়ে থাকতে দেখি। তিনি বলেন, একজন সহকর্মী হিসেবে সে অত্যন্ত কর্মনিষ্ঠ ছিলেন। কিন্তু এরকম একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা আমারই সহকর্মীর সঙ্গে ঘটবে এমনটা প্রত্যাশা করিনি। বিষয়টি আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনার। আমরা অফিসের পক্ষ থেকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ওর পরিবারের পাশে থাকার চেষ্টা করছি।

No comments

Powered by Blogger.