বাংলাদেশ পরিস্থিতি সতর্কতার সঙ্গে মনিটরিং করছে যুক্তরাষ্ট্র -পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিং
তার কাছে সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারি জানতে চান- স্বৈরাচার (সাবেক) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেখামাত্র গুলির নির্দেশের অধীনে কয়েক শত মানুষের প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ মুক্তি লাভ করেছে। কিন্তু পরিস্থিতি এখনও পরিষ্কার নয়। একটি বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে ছাত্র, নেতারা, বিরোধী দলগুলো এবং সেনাবাহিনী। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সম্পর্কে আপনি কি আরও কিছু জানাতে পারেন? জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, প্রথমত, গত সপ্তাহগুলোতে সহিংসতায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের প্রতি আমাদের সমবেদনা। আমরা এখন দৃষ্টি দিয়েছি সহিংসতা বন্ধে এবং জবাবদিহিতায় সমর্থনে। অন্তর্বর্তী সরকার হওয়া উচিত গণতান্ত্রিক নীতি, আইনের শাসন ও জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী। এ পর্যায়ে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, আপনি জবাবদিহিতার কথা বলেছেন। শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে চলে গেছেন। পশ্চিমা কোনো দেশে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন তিনি। তিনি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছেন। এর প্রেক্ষিতে তাকে কি যুক্তরাষ্ট্র অনুমোদন দেবে? জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, এমন কোনো আবেদনের বিষয়ে আমি অবহিত নই।
এরপর তার কাছে অন্য একজন সাংবাদিক জানতে চান, (শেখ হাসিনার) পতনের পর, আপনি এরই মধ্যে জানেন যে, বাংলাদেশে সরকারের পতনের পর ব্যাপক সহিংসতা ও বিশৃংখলা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে এবং সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে নৃশংসতার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ কি? জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমি পরিষ্কার করেছি যে, সহিংসতা এবং জবাবদিহিতার আহ্বান জানিয়েছি আমরা। এই জবাবদিহিতা হওয়া উচিত বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী। স্পষ্টতই সহিংসতা এবং আইন ভঙ্গ করার জন্য যারাই দায়ী হবেন তাদের বিরুদ্ধে জবাবদিহিতার ব্যবস্থা নিতে হবে।
মিলারের কাছে জানতে চাওয়া হয়, বাংলাদেশের জনগণ ফ্যাসিস্ট শাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলনকালে হাজারো মানুষ নিহত হয়েছেন। আপনি এরই মধ্যে জানিয়েছেন তিনি পালিয়ে অন্য দেশে চলে গেছেন। জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমি এ কথা বলিনি। আমি বলেছি, আমরা দেখতে পেয়েছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, হ্যাঁ, তিনি পদত্যাগ করেছেন। তিনি পালিয়ে যাওয়ার পর খবর শোনা যাচ্ছে অনেক মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেকে ব্যাপক নৃশংসতা ঘটিয়েছেন। কিছু মানুষ বলছেন তারা প্রেসিডেন্টের কাছে যাচ্ছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের জন্য। জবাবে মিলার বলেন, কয়েক সপ্তাহে যে সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ড হয়েছে তার প্রেক্ষিতে বলি এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়- এসব মৃত্যুর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আমাদের পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তদন্ত রয়েছে। দ্বিতীয়ত, অন্তর্বর্তী সরকার ইস্যুতে আমি শুরুতেই পরিষ্কার করেছি যে, এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, বাংলাদেশের জনগণের আকাক্সক্ষায় জোর দিয়েছি আমরা। একই সঙ্গে একটি গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার পথের দিকে আমাদের দৃষ্টি আছে।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমরা চাই- বাংলাদেশি সরকারের ভবিষ্যত বাংলাদেশি জনগণের সিদ্ধান্ত।
বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো রিপোর্ট নেই। আমাদের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ থাকতে পারে। তবে ঘোষণা দেয়ার মতো কোনো তথ্য আমার কাছে নেই।
একজন সাংবাদিক জানতে চান, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু হলো রোহিঙ্গা। আপনার কি মনে হয় এসব ঘটনায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বসবাসে কোনো প্রভাব পড়বে?
ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমার মনে হয় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে এসব শরণার্থীর জন্য প্রায় ২০০ কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছে। সরকার পরিবর্তন হলে এসব কর্মসূচিতে কোনো রকম প্রভাব পড়বে কিনা তাৎক্ষণিকভাবে তা বলতে পারছি না। আমি নিশ্চিতভাবে আশা করি, প্রভাব পড়বে না। আমি মনে করি এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, এসব শরণার্থীকে সেবা দেয়া অব্যাহত রাখবে বাংলাদেশ। এটা করতে তাদের সঙ্গে আমরা অব্যাহতভাবে কাজ করবো।
তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, মার্কিন দূতাবাস কি সেখানে কাজ করছে? সেখানে কি অব্যাহতভাবে সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রশ্ন আছে। ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমরা সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণায় জেনেছি পদত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি কিভাবে পদত্যাগ করেছেন সে সম্পর্কে আমাদের কাছে আর কোনো বাড়তি তথ্য নেই। আর্থিক সাপোর্টের বিষয়ে বলি ২০২৩ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় অর্থনীতি, উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য বিষয়ে কমপক্ষে ২১ কোটি ২০ লাখ ডলার সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশকে।
No comments