হাসিনার পরিণতি ভারতের জন্য শিক্ষা -ডনের প্রতিবেদন

বিষয়টা কাকতালিয় মনে হতে পারে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ঢাকা থেকে পালাতে বাধ্য করার মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগেও ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ২০২৯ সালের পরেও তাদের ক্ষমতা স্থায়ী হবে বলে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি এমনভাবে কথা বলেছেন মনে হয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি না থাকলে দিল্লি ধ্বংস হয়ে যাবে। ৪ আগস্ট ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, বিরোধী দল বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টায় ব্যস্ত। তাদেরকে স্পষ্ট করে দিতে চাই, ২০২৯ সালের পরেও মোদিই আবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসবে। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে আগে এমন বক্তব্য দিয়েছেন অমিত।

পাকিস্তানের ডন পত্রিকা ১৮ই আগস্ট ‘নেইবারস: হাসিনা’স লেসন ফর নিউদিল্লি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ভারতের এখন হাসিনার পরিণতি থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত। অর্থাৎ যারা ভারতে এমন ক্ষমতার ভবিষ্যদ্বানি করছেন তাদের হাসিনাকে দেখে নিজেদের শুধরে নিতে হবে। কেননা ১৫ বছর ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পরও হাসিনাকে লজ্জাজনকভাবে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে হয়েছে।
ডনের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রাথমিক উদ্দেশ্য হচ্ছে কয়েক মাস আগে দেশটিতে যে নির্বাচন হয়েছে সেখানে যারা সাংসদ হয়েছেন তাদের এই বার্তা দেয়া যে, নির্বাচনে ভোটাররা মোদির শাসনের বিরুদ্ধে যে তিরস্কার করেছে তা খুব বেশি গুরুত্বের সাথে নেয়ার কিছু নেই। যেহেতু ভারতের পার্লামেন্টে এখন একটি উদ্দীপ্ত বিরোধী দল রয়েছে তাই মোদির দল বেশ উদ্বিগ্ন।

কেননা আগের মতো এবার বিচার বিভাগ এবং আমলাতন্ত্রের অনেকেই মোদির প্রতিহিংসামূলক এজেন্ডা বাস্তবায়নে উৎসাহী নাও হতে পারে। মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) মধ্যেও অবাধ্যতার গুঞ্জন রয়েছে যা জনগণের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

শেখ হাসিনাও মোদির মতো এ বছরের শুরুতে একক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায় এসেছিলেন। সেই নির্বাচনে বিশ্বাসযোগ্যতার বড়ই অভাব ছিল। নির্বাচনে কোনো বিরোধী দল ছিলনা। কেননা তারা হাসিনার অধীনে নির্বাচন বর্জন করেছিল। অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের কোনো লক্ষণ ছিল না হাসিনার নির্বাচনে। অনেকেই অভিযোগ করেছেন মোদিও নির্বাচন কমিশনের উপর প্রভাব বিস্তার করে ক্ষমতায় এসেছেন। বিজেপি চেয়েছিল ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী দলগুলো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে দূরে থাকুক। এছাড়া বিরোধী দলের অনেক নেতাকেই বিভিন্ন মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছিল মোদি প্রশাসন। কিন্তু ঢাকায় কিছুদিন আগে যা ঘটে গেল তা থেকে মোদি এবং তার দলকে শিক্ষা নেয়া উচিত।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস শেখ হাসিনা সরকারের বিষয়ে তার পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন করেছিলেন। সেখানে তিনি বলেছেন, হাসিনা সরকার ছিল একটি মিথ্যা তৈরির কারখানা। একের পর এক মিথ্যা বলে নিজেদের মত প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন হাসিনা। যা প্রতিটি স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের পলিসি।

একই ধরণের পলিসি মোদি সরকারের তথ্য ও পরিসংখ্যানের দৃষ্টিভঙ্গিতে স্পষ্ট হয়েছে। তবে এমন আচরণ আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের পরিপন্থি। এতে গণতন্ত্রিক স্বাস্থ্যও খারিজ হয়ে যায়। যারমাধ্যমে প্রবল অস্থিরতা তৈরি হয়। মোদি সরকার এখন ডিজিটাল পাল্টফর্মে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। বিগত দশ বছরে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে যে জাতীয় শাসনের সমস্যা এবং জাটিলতা নিরসনে মোদি সরকার ব্যর্থ। মোদির গত দশ বছরের শাসনের পর সমাজে অন্যায় এবং বৈষম্য আরও প্রকট হয়েছে। দেশে অগণতান্ত্রিক ধারা সৃষ্টি হয়েছে। অমিত শাহ যাই বলেন না কেন তাদের বাংলাদেশের পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত। কেননা বাংলাদেশে স্পষ্ট হয়েছে যে, কুক্ষিগত ক্ষমতা কিভাবে গণতন্ত্রের কাছে ফিরিয়ে আনতে হয়। 

No comments

Powered by Blogger.