মেট্রোরেল: যাত্রীদের জিম্মি করে দাবি আদায়ের ধর্মঘট
মেট্রোরেল পরিচালনা প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্রে জানা যায়, মেট্রোরেল চালু করার জন্য কারিগরি কোনো ত্রুটি নেই। শুধুমাত্র ক্ষতিগ্রস্ত মিরপুর-১০ ও কাজিপাড়া স্টেশন যাত্রীসেবা দেয়া ছাড়া মতিঝিল থেকে উত্তরা পর্যন্তই মেট্রো চালানো যাবে। দীর্ঘদিন মেট্রোরেল বন্ধ থাকায় যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য কয়েকদিন ট্রায়াল রান করতে হয়।
তারপর যাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে মেট্রোরেল। কিন্তু মেট্রোরেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতির কারণে সেটি আটকে রয়েছে। মেট্রোরেলের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, ট্রেন অপারেটর, স্টেশন কন্ট্রোলার, টেকিনিশিয়ানরা ধর্মঘট দিয়েছে। এই কারণে মেট্রোরেল চালানো যাচ্ছে না। মেট্রোরেলের ট্রায়াল রানের জন্য তাদের লাগবে। যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য ৫-৬ দিন ট্রেন চালিয়ে পরীক্ষা করতে হবে। কিন্তু তারা কাজে না ফেরায় আমরা সেটা করতে পারছি না।
গত ১৭ই আগস্ট মেট্রোরেল চলাচল করার কথা ছিল। কিন্তু ১৫ই আগস্ট ডিএমটিসিএল সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১৭ই আগস্ট থেকে মেট্রোরেল পুনরায় চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মেট্রোরেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছয় দফা দাবি মেনে না নিলে তারা কাজে ফিরবেন না। এসব দাবিতে বেতন বৃদ্ধি, বকেয়াসহ সিপিএফ সুবিধা, পদ্দোন্নতি, চাকরি স্থায়ীকরণ, পরিবহন ব্যবস্থা ও বৈষম্যমূলক বহিঃপ্রকাশ বন্ধ করার কথা উল্লেখ করা হয়। বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় এখন পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। সরকার পতনের পর মেট্রোরেল বন্ধ রেখে এসব দাবি করে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করা হয়েছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে আগামী সাতদিনের মধ্যে মেট্রোরেল চালু করার কথা বলেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মেট্রোরেল চালু করতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানের কাজ চলছে। এটার (চালু করতে) দুটো সমস্যা ছিল। একটা সমস্যা ছিল যে বোর্ডের সদস্য ছিল না। সেটা আমরা আজই করে ফেলেছি। ওই বোর্ডের একটা সভা হবে কাল (সোমবার)। সভার পরে লাইনগুলো চেক করতে দুই-চারদিন লাগবে। আমাদের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাহেব আছেন, তিনি আমাদের সময় দিয়েছেন এটা আগামী সাতদিনের মধ্যে চালু করার চেষ্টা করবেন।
মেট্রোরেল বন্ধ থাকার কারণে ঢাকার সড়কে বেড়েছে যানজট। বিশেষ করে মতিঝিল থেকে উত্তরা পর্যন্ত মেট্রোরেলের রুটে পরিবহনের চাপ বেড়েছে। শাহবাগ, বাংলামোটর, ফার্মগেট, বিজয়সরণি, মিরপুর এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। যানজটের মধ্যে গরম আর লক্কর-ঝক্কর বাসে চলাচল করায় ভোগান্তি বেড়েছে এই রুটের যাত্রীদের। তারা বলছেন, সড়কে শূঙ্খলা ফেরাতে শিক্ষার্থীরা মাঠে পরিশ্রম করছে, অথচ মেট্রোরেল বন্ধ রেখে যাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেলে কর্মচারীরা বেতন বৃদ্ধির দাবি করছেন। তারা মেট্রোরেল চালু রেখে তাদের দাবির ব্যাপারে সোচ্চার হতে পারতেন। তামিম ইসলাম নামে এক মেট্রোযাত্রী বলেন, মেট্রোরেল দ্রুত চালু করে দেয়া উচিত। যাদের জন্য এখনো মেট্রোরেল চালু করা সম্ভব হচ্ছে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলবো কর্তৃপক্ষকে। জাবেদ ইকবাল নামের আরেক যাত্রী বলেন, অনেক দিন ধরে শুনছি মেট্রোরেল চালু করা হবে। কিন্তু তাও করা হচ্ছে না।
এখন তো সবকিছু স্বাভাবিক চলছে তাহলে মেট্রোরেল বন্ধ রেখে জনভোগান্তি করার কোনো মানে নেই।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে গত ১৮ই জুলাই ঢাকায় মিরপুর-১০ এলাকায় ব্যাপক সংঘাত হয়। একপর্যায়ে মিরপুর-১০ পুলিশ বক্সে অগ্নি সংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। ওই আগুন ছড়িয়ে পড়ে ওভারব্রিজের ওপর। সংঘর্ষ চলমান থাকায় তখন মেট্রোরেলের মিরপুর ১০, মিরপুর ১১, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া স্টেশন বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে ওই সময়ে অন্য স্টেশনগুলোতে চলছিল মেট্রোরেল। একইদিন বিকাল ৫টার দিকে ডিএমটিসিএল এক বিজ্ঞপ্তিতে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘অনিবার্য কারণবশত জননিরাপত্তার স্বার্থে মতিঝিল মেট্রোরেল স্টেশন থেকে সর্বশেষ মেট্রো ট্রেন বিকাল ৫টা ৩০ মিনিটে উত্তরা উত্তর মেট্রোরেল স্টেশনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। আজ (ওইদিন) আর কোনো মেট্রো ট্রেন চলাচল করবে না।’ তবে ওই বিজ্ঞপ্তির পর থেকে এখন পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ রয়েছে।
No comments