বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেই লাশ হলো রাব্বি by মো. আল-আমিন সরকার
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় ফার্মেসি মালিক আবুল খায়ের জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে কারফিউ এর প্রথমদিন বেলা ১২টার পর শেখেরচর মাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিজিবির টহল টিম এসে হঠাৎ রাস্তায় চলাচলকারী লোকদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। এ সময় ভয়ে সবাই দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করলে বাজারের সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে দোকান খুলে তিনি রাস্তার ওপরে একাধিক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে থাকার খবর পান। এদের মধ্যে একশ’ গজ ব্যবধানে পড়ে থাকা আলী হোসেন ও নাহিদ নামে ২ ব্যক্তি ঘটনাস্থলেই মারা যায়। অন্যদিকে মুন্না নামে একজন আহত হয়ে রাস্তার উপরে পড়েছিল। সে শেখেরচর বাজারে কাপড়ের দোকানে কাজ করতো। কিছুক্ষণ পর রাব্বি এসে ঘটনাস্থল থেকে কয়েকজনের সহযোগিতায় তার বন্ধু মুন্নাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে।
এ সময় রাব্বি বাজার থেকে মুন্নার চিকিৎসার জন্য কিছু টাকা উত্তোলন করে। উক্ত টাকা মুন্নার সঙ্গে হাসপাতালগামী লোকদের হাতে বুঝিয়ে দিতে গেলে বিজিবি টহল টিম পুনরায় এসে গুলিবর্ষণ শুরু করে। এতে বুকের ডানপাশে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাব্বি ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায়।
রাব্বির বাবা জানান, তার ২ মেয়ে ১ ছেলের মধ্যে রাব্বি ছিল মেজো। আর্থিক অস্বচ্ছলতার জন্য অস্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়িয়ে ছেলেকে আর পড়াতে পারেনননি। অটোরিকশা চালিয়ে তিনি পরিবারের ভরণপোষণ চালাতেন। গেল কোরবানির ঈদের বারোদিন আগে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন তিনি। ছিনতাইকারীরা তাকে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে রাস্তায় ফেলে রেখে অটোরিকশাটি নিয়ে পালিয়ে যায়। দীর্ঘদিন তিনি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তখন স্থানীয় একটি সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে পুনরায় একটি অটোরিকশা কিনে নিজেই সেটা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহের মাধ্যমে পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয় রাব্বি। তিনি আর জানান, ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে শিগগিরই রাব্বির ব্রুনাই চলে যাওয়ার কথা ছিল। অনেক কষ্টে ধারদেনা করে ছেলের বিদেশ যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ইতমধ্যে এজেন্সিতে রাব্বির কাগজপত্রও চলে এসেছিল। সে বলেছিল বিদেশ গিয়েই তার বাবাকে আর কাজ করতে দিবে না, বিশ্রাম দিবে; কিন্তু সেই সুখ কপালে আর আসলো না।
রাব্বির মা শামসুন্নাহার জানান, সকালে তার সঙ্গে নাস্তা সেরে বাড়ির পাশেই ক্যারাম খেলছিল রাব্বি। এ সময় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দিক থেকে ছুটে আসা লোকজনের কাছ থেকে মুন্না নামে তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় রাব্বি। সেখানে গিয়ে গুলিবিদ্ধ বন্ধুকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারলেও নিজেকে বাঁচাতে পারেনি সে। বিজিবির ছোড়া গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় রাব্বি। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ঘরটা শূন্য হয়ে গেল। কি দোষ ছিল আমার ছেলের? আমি কার কাছে বিচার চাইবো?’ এভাবে যেন আর কোনো মায়ের বুক খালি না হয় তিনি দেশের নীতিনির্ধারকদের প্রতি এই আকুতি জানান।
No comments