যেভাবে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এলেন সিলেটের রুবায়েদ by ওয়েছ খছরু
ওরা আমাকে নির্মমভাবে কুপিয়েছিল।’ রুবায়েদ ইসলামের বাড়ি সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার আটগাঁওয়ের নিজগাঁও গ্রামে। নগরের নয়াসড়কের রান্না বিরানী হাউসে কর্মচারী হিসেবে কাজ করছিল। ঘটনার দিন মসজিদে আসরের আজান হওয়ার একটু পর নামাজ পড়তে যান রুবায়েদ। বাইরে তখন শান্ত পরিবেশ। কিন্তু নামাজ চলার সময়ই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে নয়াসড়ক এলাকা। নামাজ শেষ করে যখন মুসল্লিরা বের হচ্ছিলেন তখন তাদের উপর হামলা চালায় কয়েকজন সশস্ত্র কর্মী। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে দৌড়ে দোতলায় উঠে যান তিনি। এমন সময় ছাত্রলীগের ৬-৭ জন সশস্ত্র কর্মী তাদের অনুসরণ করে দোতলায় ওঠে। হাতের কাছে পেয়ে যায় রুবায়েদকে। রামদা দিয়ে প্রথমেই রুবায়েদের মাথায় কয়েকটি কোপ দেয়। এরপর শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতারি কোপ। অজ্ঞান হয়ে পড়েন রুবায়েদ। কিছু বলতে পারেননি। এরপর দু’জন তার হাত ও পায়ে ধরে দোতলা থেকে নিচে আঁচড়ে ফেলে। এতে শরীরের বিভিন্ন স্থান থেতলে যায়। গতকাল মানবজমিনকে রুবায়েদ জানান, সশস্ত্র ছাত্রলীগ কর্মীরা হায়েনার মতো আমার চুল ধরে টেনে টেনে সড়কে নেয়। এরপর কয়েকজন লাথির পর লাথি মারতে থাকে। এমন সময় আমার জ্ঞান ফিরলে দেখি আমাকে সড়কে ফেলে ফুটবলের মতো লাথি দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তারা কাজিটুলা পিউরিয়ার সামন পর্যন্ত নিয়ে যায়। ওখানে একটি ভবনে আমাকে ফেলে চলে যায়। তিনি জানান, এ সময় আমি উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও পারিনি। শরীর দিয়ে অবিরত রক্ত ঝরছিল। ভবনের মালিক আমাকে টেনে একটি রিকশায় তোলেন। এরপর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। একদিন পর আমার জ্ঞান ফিরলে দেখি হাসপাতালের আইসিইউতে আছি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রুবায়েদ ইসলামকে গুরুতর অবস্থায় রিকশায় করে পার্শ¦বর্তী সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ার কারণে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। অজ্ঞান অবস্থায় থাকার একদিন পর তার জ্ঞান ফিরে। পরে তার চিকিৎসা শুরু করা হয়। রুবায়েদ এখন হাসপাতালের ২৩নং ওয়ার্ডের ১ নম্বর বেডে ভর্তি আছেন। তার বেডের পাশে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে জাতীয় পতাকা। কোপানোর ফলে তার গোটা শরীরই ক্ষত বিক্ষত। বামহাত ভেঙে গেছে। ডান হাতের কয়েকটি আঙ্গুলও ভেঙে গেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার চিকিৎসা ব্যয় বলতে কিছুই নিচ্ছেন না। তবে, ওষুধের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে তাকে নিজেই। জানালেন, আইসিইউতে থাকার সময় বিল হয়েছিল ২৩ হাজার টাকা। সেটি পরিশোধ করেন তার দোকানের মালিক। ওষুধ কিনতে অনেকেই সহযোগিতা করছেন। কিন্তু এখনো শরীরে শক্তি পাচ্ছেন না। দু’একদিনের মধ্যে তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড় দেয়া হবে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যাওয়া হতে পারে। সব মিলিয়ে তাকে নিয়ে পরিবার এখন দুশ্চিন্তায়। হাসপাতালে দেখতে গতকাল গিয়েছিলেন খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মো. মুনতাসির আলীসহ দলের কর্মীরা। রুবায়েদের উপর চলা নির্যাতনের বর্ণনা শুনে তিনি নিজেই আপ্লুত হয়ে পড়েন। এভাবে কোনো মানুষ অন্য আরেকজন মানুষের উপর অত্যাচার করতে পারে তিনি ভাবতেও পারছেন না। তবে; বাস্তবে রুবায়েদের উপর তাই ঘটেছে। মো. মুনতাসির আলী মানবজমিনকে জানিয়েছেন, হাসপাতালে যারা এখনো জীবিত অবস্থায় ভর্তি আছেন তাদের একেকজনের গল্প খুবই মর্মান্তিক। তৎকালীন সরকারের ছত্রছায়ায় তাদের পোষ্য বাহিনী যে নির্যাতন চালিয়েছে তা অতীতে কখনোই হয়নি। এত মানুষের প্রাণও যায়নি। তিনি বলেন, আমাদের উচিত যারা হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। আমাদের এই বীরদের শক্তি ও সাহস দেয়া সবার কর্তব্য। তারাই আমাদের নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছে।
No comments