এবার কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় চাইলেন সিনহা

গত ৪ঠা জুলাই কানাডায় প্রবেশ করেছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। এর পরপরই তিনি শরণার্থী বা আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে দেশটিতে আবেদন করেছেন। কানাডার টরেন্টো থেকে প্রকাশিত ইতালিয়ান ভাষার পত্রিকা কোরিয়েরে কানাডিজ এ সংবাদ দিয়েছে। এর আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রেও রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিলেন বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল।

কোরিয়েরে কানাডিজ পত্রিকায় সিনহার এই সংবাদ একটু ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদক জো ভোলপে লিখেছেন, আপনারাও নিশ্চয়ই আমার মতো এই সংবাদ শুনে মেঝে থেকে লাফ দিয়ে উঠছেন! কেননা, তিনি কোনো সাধারণ নাগরিক নন। তিনি একটি দেশের সর্বোচ্চ বিচারপতি ছিলেন।

এতে বলা হয়, সিনহার দেশ, বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ২০ কোটি।
কিছুদিন আগেও বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত হতো। তবে এখনও এটি বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি। এখানে সহিংসতা কোনো অস্বাভাবিক কিছু নয়। নিজ দেশের এমন বর্ণনা এই বিচারপতিকে কষ্ট দেয়। কিন্তু সত্য হলো, দেশের অপরিপক্ব আর্থ-সামাজিক অবকাঠামোকে ব্যক্তিগত বা কর্পোরেট বা রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করার মতো লোকের অভাব সেখানে নেই। খোদ কানাডার এসএনসি লাভালিন কোম্পানিও এই গোষ্ঠীগুলোর একটি।

সংবাদে বলা হয়, সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা ভারতীয় উপমহাদেশের এক উত্তাল সময়ের মধ্যে বড় হয়েছেন। সেখানে বিদেশি দখলদারিত্ব তিনি যেমন দেখেছেন। তেমনি দেখেছেন, স্থানীয়, জাতিগত ও ধর্মীয় বিভেদ। বৃটিশ ও পাকিস্তানি দখলদারিত্ব শেষ হলেও, বাংলাদেশে এখনো এমন পরিস্থিতি আছে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাঠামোর বর্ণনা দিয়ে পত্রিকাটিতে লেখা হয়, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এখনও অতটা পরিপক্ব নয়। ফলে সরকারের বিভিন্ন শাখা, অর্থাৎ আইনসভা, নির্বাহী ও বিচার বিভাগ এখনও সম্পূর্ণ পৃথক হতে পারেনি। আইনসভা ও নির্বাহী বিভাগ নির্বাচনের ভিত্তিতে ঠিক হয়। তবে খ্যাতনামা সংবাদমাধ্যমগুলো সাহসের সঙ্গে প্রতিবেদন প্রচার করে দেখিয়েছে, কীভাবে ভয়ভীতি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও দলীয় নেতাকর্মীদের গুণ্ডামির মাধ্যমে নির্বাচন প্রভাবিত হয়।

এমন এক পরিস্থিতিতে ২০১৫ সালের ১লা জানুয়ারি এসকে সিনহা প্রথম হিন্দু হিসেবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের সাংবিধানিক বিচারালয় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আপিল বিভাগে পদোন্নতি পাওয়ার পর থেকেই সিনহা সরকারের বিভিন্ন শাখার পূর্ণাঙ্গ পৃথক্‌করণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, আইনের শাসন প্রয়োগ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেন। এরপর থেকেই তিনি সরকারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠেন। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধান বিচারপতি ও শাসক দলের বিভেদ প্রকাশ্যে চলে আসে যখন সিনহা ৭৯৯ পৃষ্ঠার একটি বিচারিক মতামত প্রকাশ করেন, যার মাধ্যমে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করা হয়। এতে করে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অপসারণে পার্লামেন্টের ক্ষমতা বাতিল হয়। এরপর সরকার থেকে সিনহার বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু হয়। তার পরিবার ও বন্ধুরাও চাপে পড়ে যান। ২ সপ্তাহের মধ্যে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের সম্মান ও শান্তির কথা চিন্তা করে সিনহা সাময়িক ছুটিতে যান। কিন্তু তারপরেও অশান্তি তার পিছু ছাড়েনি। ১৭ই নভেম্বর তিনি বিদেশ থেকে পদত্যাগপত্র দাখিল করেন। বাংলাদেশ থেকে প্রথমে তিনি সিঙ্গাপুরে যান, এরপর অস্ট্রেলিয়া ও পরে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি ও তার স্ত্রী কানাডায় আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন।

গত ফেব্রুয়ারিতে সিনহা যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় প্রার্থনা করেন, তবে তার স্ত্রী করেননি। কিন্তু সিনহার সাক্ষাৎকার কখনওই নেয়া হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের উদাহরণ টেনে, পত্রিকাটি কানাডার অভিবাসন, শরণার্থী ও নাগরিকত্ব বিষয়ক মন্ত্রী আহমেদ হোসেনের (যিনি নিজেও সাবেক শরণার্থী) কাছে প্রশ্ন রেখেছে, ‘তার কাছেও কী (সিনহার আবেদন) সমস্যা মনে হবে?’

No comments

Powered by Blogger.