শপথ নেননি ঐক্যফ্রন্টের বিজয়ীরা নির্বাচন বাতিল চেয়ে ইসিতে আবেদন

একাদশ সংসদ নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের বিজয়ী প্রার্থীরা শপথ নিচ্ছেন না। নির্বাচন বাতিল চেয়ে গতকাল নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি দিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট। স্মারকলিপির সঙ্গে নির্বাচনের অনিয়ম ও জালিয়াতির বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ জমা দেয়া হয়েছে কমিশনে। ফ্রন্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে কিছু তথ্য জমা দেয়া হয়েছে। পরে আরো বিস্তারিত তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরা হবে। গতকাল সকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠক করেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। বৈঠকে আলোচনা করে বিজয়ী প্রার্থীদের শপথ না নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসে।
পরে স্মারকলিপি নিয়ে নির্বাচন কমিশনে যান ঐক্যফ্রন্টের সাত নেতা।
সকালে বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব ও ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এই নির্বাচনের ফলাফল আগেই প্রত্যাখ্যান করেছি। ইতিমধ্যে শপথ অনুষ্ঠান হয়ে গেছে। সেখানে আমরা যাইনি। শপথ নেয়ার প্রশ্নই আসে না। কারণ আমরা এই নির্বাচন ও নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদের যেসব প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন তারাও শপথ নিচ্ছেন না। মির্জা ফখরুল বলেন, প্রার্থীরা নির্বাচনের বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ জানিয়ে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করবেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে নিষ্ঠুর ও প্রহসনের নির্বাচন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। আমরা এই নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছি।
এদিকে বিএনপি মহাসচিব ও ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) হাতে স্মারকলিপি তুলে দেয়। স্মারকলিপিতে ঐক্যফ্রন্ট অভিযোগ করেছে, নির্বাচনের আগের রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের সহায়তায় আওয়ামী লীগের কর্মী ও সন্ত্রাসী বাহিনী ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ ভোট কেটে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে। এ অবস্থায় ভোটের ফল বাতিল করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানানো হয়েছে জোটের পক্ষ থেকে।
ঐক্যফ্রন্টের এই প্রতিনিধি দলের মধ্যে আরো ছিলেন বিএনপির একাদশ জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, বাংলাদেশের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু।
পরে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনের নামে জাতির সঙ্গে তামাশা করা হয়েছে। দেশকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের জয়ীরা শপথ নেবেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছি। শপথ নেয়ার প্রশ্ন আসবে কেন? যেখানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন সেখানে কারচুপি হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, সেগুলোতেও ডাকাতি হয়েছে, তবে তারা কুলিয়ে উঠতে পারেনি। ঐক্যফ্রন্টের দাবি মানা না হলে পরবর্তী কর্মসূচি কী হবে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা জানবেন পরে।
এই নির্বাচনে এটাই প্রমাণ হলো যে, ২০১৪ সালে নির্বাচন বর্জন করেছিলাম, সেটাই সঠিক। দলীয় সরকারের অধীনে কখনই সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। অনতিবিলম্বে নির্বাচন বাতিল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জোর দাবি জানিয়েছি স্মারকলিপিতে। ইতিমধ্যে নির্বাচনের গেজেট প্রকাশ হয়েছে, শপথও হয়েছে। এ রকম অবস্থায় সরকারের কাছে না গিয়ে ইসিতে কেন আসল ঐক্যফ্রন্ট- এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ইসিই তো নির্বাচন করেছে, তাদের কাছে আমাদের দাবি জানালাম। এরপরে আমরা অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। ইসি কি বলেছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, স্মারকলিপি দিতে আসলেও কমিশনের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো কথা হয়নি। তারা শুধু স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। তারা কি বলবেন? তাদের তো কোনো কথা নেই।
স্মারকলিপিতে যা বলেছে ঐক্যফ্রন্ট
স্মারকলিপিতে ভোটের তফসিল ঘোষণার পর থেকে শুরু করে এই নির্বাচনে নানা অনিয়মের অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়, ইসি সকল দল ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ও পরামর্শ না করেই সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। প্রথমেই ইসি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদের ব্যত্যয় হয়েছে বলে অভিযোগ ঐক্যফ্রন্টের। অভিযোগে আরো বলা হয়, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের ভেটিং ও হয়রানি করা হয়েছে। ভেটিংয়ের মাধ্যমে সরকারদলীয় কর্মকর্তাদের তালিকা চূড়ান্ত করে রিটার্নিং অফিসারদের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকা মোতাবেক তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে অভিযোগ করা হলেও ইসি নীরব ভূমিকা পালন করেছে।
ঐক্যফ্রন্টের দলীয় প্রার্থী মনোনয়নেও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ জোটটির। এ অভিযোগের প্রসঙ্গে বলা হয়, দলীয় মনোনয়ন বিতরণে বাধা প্রদান এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দলীয় নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মনোনয়নপত্র বাছাই এবং আপিলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ইসির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ঐক্যফ্রন্ট। এতে বলা হয়, সর্বাধিক সংখ্যক মনোনয়ন ঠুনকো অজুহাতে বাতিল করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন আট শতাধিক আপিল নজিরবিহীনভাবে তাড়াহুড়ো করে নিষ্পত্তি করেছে। ইসির এই দ্রুততা ও পরবর্তীতে আদালতের মাধ্যমে ঐক্যফ্রন্টের ১৮ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলে তাদের ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। অভিযোগে আরো  বলা হয়, ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর থেকেই শুরু হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মামলা দায়েরের হিড়িক।
গণমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও সরকার বা কমিশন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তফসিল ঘোষণার পর থেকে ঐক্যফ্রন্টের ১৬ প্রার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রার্থীদের পক্ষ থেকে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারে এমন নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে কারারুদ্ধ করা হয়। নির্বাচন পর্যবেক্ষণেও অনিয়ম হয়েছে বলে স্মারকলিপিতে দাবি করেছে ঐক্যফ্রন্ট। এতে বলা হয়, ইসির বিতর্কিত নির্দেশনায় দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের কাজের ক্ষেত্র সীমিত করে দেয়া হয়। ভিন্ন মতের অভিযোগ তুলে অনেক স্বনামধন্য পর্যবেক্ষক সংস্থাকে পর্যবেক্ষণ হতে দূরে রাখা হয়। পর্যবেক্ষকদের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়। পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে  বিদেশে অবস্থিত দূতাবাসগুলোতে পর্যবেক্ষকদের আগমন নিরুৎসাহিত করে কালবিলম্ব করার নির্দেশনা দেয়া হয়।
বিদেশি পর্যবেক্ষক সংস্থা আনফ্রেল এর ৩২জন সদস্যকে ভিসা দেয়া হয়নি। সরকার দলের নিয়ন্ত্রণাধীন নামসর্বস্ব সংস্থা সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন বা দেশীয় সংস্থাকে প্রতারণামূলকভাবে বিদেশি সংস্থা হিসেবে চালানো হয়। অনেক বিদেশি পর্যবেক্ষক সংস্থা আগ্রহ প্রকাশ করলেও সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অনাগ্রহের কারণে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মী আগমনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। স্মারকলিপিতে প্রচার-প্রচারণায় বাধা, সরকারের সাজানো প্রশাসন ও পুলিশের রদবদল না করাসহ আরো বেশ কিছু অভিযোগের উল্লেখ করা হয়। সরকার ও নির্বাচন কমিশন তাদের পরিকল্পিত জাল-জালিয়াতি আড়াল করতে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও গোয়েন্দা নজরদারি আরোপ করে বলে অভিযোগ করা হয়। সরকার প্রধান থেকে শুরু করে মন্ত্রী-এমপি ও সরকারি দলের প্রার্থীদের উপর্যুপরি আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলেও ইসি ছিল নির্বিকার।
ঐক্যফ্রন্টের স্মারকলিপিতে বলা হয়, ২৪শে ডিসেম্বর সেনাবাহিনীকে মাঠে নামানো হলেও তাদের নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়। ফলে ওইদিন থেকে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন ও হামলার পরিমাণ আরো বেড়ে যায় এবং নির্বাচনের দিন পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। এছাড়া স্মারকলিপিতে ২৯ ও ৩০শে ডিসেম্বর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় ক্ষমতাসীন দল ভোট-ডাকাতি ও তাণ্ডব করেছে বলে অভিযোগ করা হয়। এই দুইদিনের অনিয়মের কিছু চিত্র তুলে ধরা হয়। বলা হয়, ভোটের আগের রাত নয়টার মধ্যে সকল দোকানপাট বন্ধ করে সারা দেশে ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরি করা হয়। ওই রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার সহায়তায় ৩০-৬০ শতাংশ ভোট কেটে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা হয়। নির্বাচনের দিন সকালে ভোটকেন্দ্র এবং কেন্দ্রের আশেপাশের মোড়ে সরকারি লাঠিয়াল বাহিনী মহড়া দেয় এবং ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা দেয়। এবিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সকল স্তরের সদস্যদের কাছে সহযোগিতা চাইলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
অনেক ক্ষেত্রেই ভোটারদের ভোট না দিয়ে ফিরে যেতে বাধ্য করা হয়। নির্বাচনের আগের দিন সরকারবিরোধী সাধারণ ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি-ধমকি দেয়া হয় এবং ভোটকেন্দ্রে গেলে গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তারের ভয় দেখানো হয়। নির্বাচনের আগের দিন ও রাতে পোলিং এজেন্ট এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের নানারকম হুমকি-ধমকি, ভয়ভীতি, হয়রানি ও গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাদেরকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করা হয়। নির্বাচনের দিন সকালে পোলিং এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা দেয়া হয় এবং ক্ষেত্রবিশেষে ভোটকেন্দ্রে আসলেও নিয়োগপত্র রেখে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়। অনেক পোলিং এজেন্টকে মারধর, হয়রানি ও গ্রেপ্তার করা হয়। ভোটকেন্দ্রে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট না থাকায় বিষয়টি দুইজন নির্বাচন কমিশনার গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন।
রাতে ভোট কাটার পর ক্ষমতাসীন দল অবশিষ্ট ব্যালট পেপার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় জাল ভোটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করে। শত বাধা উপেক্ষা করে কিছু ভোটার ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করলেও তাদেরকে প্রকাশ্যে নৌকায় সিল দিতে বাধ্য করা হয়। প্রায় সকল ভোটকেন্দ্রেই দুপুরের মধ্যে ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যায়। ব্যালট পেপার না থাকায় ভোটারদের কেন্দ্রে ঢুকতে বাধ্য করাসহ নানাভাবে হয়রানি করা হয়। দুপুরের দিকে আসা ভোটারদের ব্যালট দিতে না পারার কারণে বেআইনিভাবে মধ্যাহ্নভোজের বিরতির নামে কালক্ষেপ করা হয় এবং ভোটকেন্দ্রের মূলফটক বন্ধ করে দেয়া হয়। নজিরবিহীনভাবে জুডিশিয়াল ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্বাচনী দায়িত্বে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয় এবং শত অনিয়ম সংঘটনের অভিযোগ পাওয়ার পরও ন্যূনতম পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
অসংখ্য ভোটকেন্দ্রে শতভাগ ভোট কাস্ট করা হয়। যা ছিল নজিরবিহীন এবং বাস্তবে একেবারেই অসম্ভব। বিদেশি পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মীদের দেখানোর জন্য ঢাকাসহ অন্যান্য সকল মেট্রোপলিটন এলাকায় তাদের আশপাশের এলাকা থেকে লোকজন এনে জড়ো করে লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার নয়। আওয়ামী লীগের পদধারী বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ভোটের আগের রাতে কোনো কোনো প্রিজাইডিং অফিসার ভোট কাটতে অস্বীকৃতি জানালে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে এবং জোর করে ভোট কাটতে বাধ্য করে। আগের রাতেই ভোট কাটার কারণে দেশের অনেক ভোটকেন্দ্রেই বিকাল ৪টার আগেই ভোটগণনা শুরু হয়। যা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি।
সারা দেশে প্রকাশ্যে শান্তিপূর্ণভাবে জালভোটের মহোৎসব চললেও দেশের কোথাও একজন জালভোট প্রদানকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বা আইনের আওতায় আনা হয়নি। নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মাঠপর্যায়ের কোনো স্তরেই নির্বাচন কমিশনের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। একজন নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যে তা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। শতভাগ কাস্টিং ভোটকেন্দ্রের আংশিক তালিকা ইসির কাছে হস্তান্তর করে ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি দল। সকল অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্মারকলিপিতে বলা হয়, দীর্ঘ দশ বছর পর ভোটাধিকার বঞ্চিত জনগণকে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে আবারও বঞ্চিত করার দায় ইসিকেই বহন করতে হবে। এজন্য অনতিবিলম্বে নির্বাচন বাতিল করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি করা হয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে।
এর আগে বেলা ১১টায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে প্রার্থীদের নিয়ে এ বৈঠক শুরু হয়। চলে প্রায় দুপুর ২টা পর্যন্ত। বৈঠকের শুরুতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাগত বক্তব্য দেন। প্রক্যেক প্রার্থীর কাছে তাদের নিজ এলাকার ভোটের পরিস্থিতি এবং পরবর্তী করণীয় কি হতে পারে তা বিস্তারিতভাবে বলতে প্রার্থীদের প্রতি অনুরোধ করেন। এ সময় বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা সবকিছুতেই ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা হলো জাতীয় ঐক্যের সবচেয়ে বড় সফলতা। এই ঐক্য যেকোনো মূল্যে আমরা রক্ষা করবো। নির্বাচনে অংশ নেয়া এবং শেষ পর্যন্ত থাকার বিষয়ে যৌথ সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখানে আমাদের চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। আমরা কোনো ব্যক্তিবিশেষ এই সিদ্ধান্ত নিইনি। নির্বাচন ও নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিএনপির যদি কারো কোনো ক্ষোভ থাকে আমরা আমাদের দলীয় ফোরামে সেটা শুনব।
চেষ্টা করবো আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সেই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করার। তিনিও সবার কথা শুনবেন। আমরা দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যাপারে অনুমতি চেয়েছি। সাক্ষাৎ পেলে তার অনুমতি নিয়ে বাকি সিদ্ধান্ত নেব। বৈঠকে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, এতদিন শেখ হাসিনাকে জননেত্রী বলতাম, আজ থেকে সেখান থেকে তার নামটা প্রত্যাহার করে নিলাম। আওয়ামী লীগ নৈতিকভাবে পরাজিত হয়েছে। প্রশাসনকে ব্যবহার করে জনগণের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে। প্রশাসন আওয়ামী লীগকে ভোট ছিনতাই করতে সহযোগিতা করেছে। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমাদের এই দুঃসময়ে জাতি হিসেবে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। কিন্তু সরকার প্রশাসনকে ব্যবহার করেছে। এই জন্য আমরা এই নির্বাচনে জয়লাভ করিনি।
বৈঠকে বিএনপির পাশাপাশি জেএসডি, গণফোরাম, খেলাফত মজলিশের প্রার্থীরা থাকলেও জামায়াতে ইসলামের কোনো প্রার্থী উপস্থিত হননি। বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মাহবুবুর রহমান, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, বৈঠকে ১৭৪ জন প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে বিজয়ী পাঁচজন প্রার্থীও ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.