সরবরাহ খরায় বেড়েছে সবজির দাম

একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে-পরে পরিবহন সংকটে রাজধানীতে বেড়েছে সবজির দাম। দুই দিনের ব্যবধানে একাধিক সবজির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা। অথচ এখন শীতকালীন সবজির ভরা মৌসুম। ফলে বিপাকে পড়েছে ভোক্তারা। তবে চাল, ডাল, তেল ও মাছ-মাংসের দাম অপরিবর্তিত আছে। রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে পরিবহন সংকট থাকায় রাজধানীতে পর্যাপ্ত সবজি আসেনি। এর প্রভাবে সব ধরনের সবজির দাম সামান্য বেড়েছে।
তবে এটা সাময়িক। এখন স্বাভাবিক হয়ে যাবে। ক্রেতাদের অভিযোগ বাজারে পর্যাপ্ত সবজি থাকা সত্ত্বেও বিক্রেতারা দাম বাড়িয়েছে।
জানা গেছে, সোমবার প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৪০-৬০ টাকা, শিম ৪০-৫০ টাকা, শসা ৪০-৫০ টাকা, নতুন আলু ৪০ টাকা। অথচ দুই দিন আগে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হয়েছে ৩০-৪০ টাকা, শিম আকার ও মান ভেদে ৩০-৪০ টাকা, নতুন আলু ২৫ টাকা। গত সপ্তাহে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া গাজরের দাম বেড়ে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে কাঁচামরিচ কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৮০ টাকা। এ ছাড়া বাজারে প্রতি কেজি গাজর ৪০-৫০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৫০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, বেগুন ৫০-৬০ টাকা, কচুর লতি ৪০-৫০ টাকা, করলা ৪০-৬০ টাকা, শালগম ৪০ টাকা, কাঁকরোল ৪৫-৬০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। আর বাজারে প্রতি পিস বাঁধাকপি ও ফুলকপি বিক্রি হয় ৩০-৪০ টাকায়, লাউ ৪০-৬০ টাকা, জালি কুমড়া ৪০-৫০ টাকা।
সপ্তাহের ব্যবধানে আমদানি করা পিয়াজের দাম বেড়েছে। আমদানি করা ভারতীয় পিয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পিয়াজের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা।
কাওরান বাজারের সবজি বিক্রেতা আনিস বলেন, নির্বাচনের কারণে সারা দেশে গাড়ি চলেনি। যার কারণে রাজধানীর পাইকারি বাজারে সবজির সরবরাহ কম। যে কারণে চাহিদার তুলনায় পণ্য কম থাকায় পাইকারি ব্যবসায়ীরা বেশি দামে সবজি বিক্রি করছেন। যার প্রভাব পরেছে খুচরা বাজারে।
বাজার করতে আসা কবির বলেন, নির্বাচনের কারণে বাজারে সবজি কম। যে কারণে বিক্রেতারা বেশি দামে বিক্রি করছে। কিন্তু বাজারে তেমন ক্রেতা নেই। চাহিদার তুলনায় সবজির সরবরাহ বেশি। তবুও বিক্রেতারা কেজিতে একাধিক সবজিতে ১০-২০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করছে, যা কখনোই কাম্য না। এজন্য বাজার মনিটরিং বাড়াতে হবে।
এদিকে বাজারে মাছ ও মাংসের বাজার দর স্থিতিশীল রয়েছে। গত সপ্তাহে  কিছুটা বাড়লেও এ সপ্তাহে অপরিবর্তিত রয়েছে মাছ ও মাংসের দাম। বাজারে মাঝারি সাইজের প্রতিকেজি রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, বড় সাইজের ৩৫০ টাকা থেকে ৩৮০ টাকা। তেলাপিয়া মাছ ছোট সাইজের ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা ও বড় সাইজের ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা, পাবদা মাছ প্রতিকেজি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। ইলিশ মাছ ১ কেজি ওজনের বাজার ভেদে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির। গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়। এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। গরুর মাংস প্রতিকেজি ৪৭০ টাকা থেকে ৪৮০ টাকা। এবং খাসির মাংস ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় নতুন বছরের জানুয়ারিতে কিছু নিত্যপণ্যের দাম কমেছে আবার কিছু পণ্যের দাম বেড়েছ। টিসিবির হিসেবে গত বছরের এই সময়ের তুলনায় চলতি বছর সরু চালের দাম ৭.৯৪ শতাংশ, মাঝারি মানের চাল ৭.৬৯ শতাংশ, মোটা চাল ১১.১১ শতাংশ, ভোজ্য তেলের দাম ৬.৩৬ শতাংশ, মসুর ডাল ১৬.৬৭ শতাংশ, মুগ ডাল ১৬ শতাংশ, আলু ১৪ শতাংশ, পিয়াজ ৬২.৫০ শতাংশ, চিনি ৪.০৪ শতাংশ কমেছে। তবে দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে ময়দা, রুই, ইলিশ মাছ ও দেশি মুরগি। গত বছরের এই সময়ের তুলনায় পণ্যগুলো যথাক্রমে ৩.৮০ শতাংশ, ২৪ শতাংশ, ২১.৪৩ শতাংশ ও ১২.৩৩ শতাংশ বেড়েছে।

No comments

Powered by Blogger.