চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমা ৫০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত হচ্ছে

বর্তমানে সাত নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমা। যেখানে নোঙর করা জাহাজ থেকে রাজস্ব আদায় করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর বাইরে জাহাজ নোঙর করা হলেও রাজস্ব পাচ্ছে না অর্থনীতির চাকা খ্যাত দেশের প্রধান এই সমুদ্র বন্দরটি।
ফলে রাজস্ব আয় বাড়াতে এবং ক্রমবর্ধমান পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের চাপ সামলানোর সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সাত নটিক্যাল মাইল থেকে ৫০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত জলসীমা বিস্তৃত করার উদ্যোগ নিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এমনটাই জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক।
ওমর ফারুক জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান জলসীমা সাত নটিক্যাল মাইল। ২০১১ সালে আলফা, ব্রেভো এবং চার্লি নামে তিনটি অ্যাংকারেজে বিভক্ত করে বন্দরের এই সীমানা বাড়ানো হয়। প্রায় ৪০০ বছর আগে ৫ নটিক্যাল মাইল জলসীমা নিয়ে বন্দরটির যাত্রা শুরু হয়।
কিন্তু ক্রমবর্ধমান চাহিদা, মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনাল ও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকে কেন্দ্র করে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল বৃদ্ধির কারনে এই সমুদ্র বন্দরের জলসীমা আবারও বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ওমর ফারুক জানান, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দরের জলসীমা সাত নটিক্যাল মাইল থেকে বাড়িয়ে ৫০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত করার একটি প্রস্তাব গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাবটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় থেকে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতি চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ার পর গেজেট হবে। আর এটি অনুমোদন পেলে বন্দরের জলসীমা চট্টগ্রামের পতেঙ্গা উপকূলের উত্তরে কাট্টলী থেকে সীতাকুন্ড এবং দক্ষিণে আনোয়ারার গহিরা থেকে মহেশখালীর সোনাদিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। তাতে চট্টগ্রাম বন্দরের দৈনিক রাজস্ব আয় অন্ত:ত এক কোটি টাকা বাড়বে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসের জন্য বর্তমানে বছরে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি জাহাজ আসে। এরমধ্যে বন্দরের প্রধান ১৬টি জেটিতে ভিড়তে পারে সীমিত সংখ্যক জাহাজ। অনেক জাহাজকে নোঙর করতে হয় বর্হিনোঙরে।
কারণ নাব্যতা সংকটের কারণে সাড়ে নয় মিটার গভীরতা ও ১৯০ মিটার দীর্ঘ জাহাজই কেবল চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে ঢোকার অনুমতি পায়। এর বড় জাহাজগুলো কুতুবদিয়া কিংবা বর্হিনোঙরে এসে অপেক্ষায় থাকতে হয়। এরচেয়ে বড় জাহাজ কুতুবদিয়ায় আসার পর লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে কিছু পণ্য খালাস করে সেটিকে হালকা করে তারপর বন্দর সীমানায় আসার অনুমতি মেলে।
এ অবস্থায় বন্দর সীমানার বাইরে কুতুবদিয়া হয়ে মহেশখালী পর্যন্ত সাগরে শত শত জাহাজের অবস্থান করলেও তাদের কোন মাশুল দিতে হয় না। কিন্তু পুরো এলাকা বন্দরের সীমানায় এলে বছরে তিনশ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় বাড়ার সম্ভাবনা দেখছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের সীমানায় অবস্থানকারী জাহাজগুলোকে প্রতি জিআরটি (গ্রস টন) হিসেবে বন্দর কর্তৃপক্ষকে দশমিক ২৪ ডলার হারে মাশুল পরিশোধ করতে হয়। প্রতিটি জাহাজকে ৮০০ থেকে ১ হাজার জিআরটি পরিমাপ ধরা হয়।
চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. আবু জাফর বলেন, কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ি ঘিরে এলএনজি টার্মিনাল ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকে কেন্দ্র করে প্রচুর জাহাজ আসা-যাওয়া শুরু হয়েছে। আর এমনিতে পণ্যবাহী জাহাজ আসার পরিমাণ তো বাড়ছেই। সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমা বাড়ানোর বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে। এ কারনে বন্দরের জলসীমা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

No comments

Powered by Blogger.