সরকারে থাকার সিদ্ধান্ত জাপার

একাদশ জাতীয় সংসদে সরকারে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। গতকাল সংসদ সচিবালয়ে সংসদীয় দলের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। দলটির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, আমরা মহাজোটগতভাবে নির্বাচন করেছি। তাই বেশির ভাগ এমপিই সরকারের সঙ্গে থাকতে চায়। এ ব্যাপারে মহাজোটের মহানেত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত নেবেন তাই-ই চূড়ান্ত। এদিকে  জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে রওশন এরশাদই থাকবেন নাকি নতুন মুখ দেখা যাবে, সে সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি দলটির নবনির্বাচিত এমপিরা। দলের নীতিনির্ধারণী মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান দলের কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের। এর আগে দলের নবনির্বাচিত ২১ জন এমপি শপথ নেন।
অসুস্থজনিত কারণে এইচ এম এরশাদ গতকাল শপথ নিতে পারেন নি। শপথ অনুষ্ঠানে রওশন এরশাদের ডান পাশে ছিলেন কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। বাঁ-দিকে ছিলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ,  সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও কাজী ফিরোজ রশীদ। এ ছাড়া রানা মোহাম্মদ সোহেল, আহসান আদেলুর রহমান, পনির উদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, নাসরিন জাহান রত্না, রুস্তম আলী ফরাজী, ফকরুল ইমাম, মুজিবুল হক চুন্নু, লিয়াকত হোসেন খোকা, সেলিম ওসমান, পীর ফজলুর রহমান মেজবাহ, মাসউদ উদ্দিন চৌধুরী, নুরুল ইসলাম তালুকদার ও গোলাম কিবরিয়া টিপু শপথ নেন। শপথ অনুষ্ঠানের পরে দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সংসদ কার্যালয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন জাতীয় পার্টির এমপিরা।
ওই বৈঠক শেষে মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, আমরা ২০০৮, ২০১৪ এবং এবারও মহাজোটগতভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। সুতরাং আমরা মহাজোটের সঙ্গেই আছি। আগামী দিনেও আমরা মহজোটের সঙ্গে থাকবো। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি না থাকায় আমরা সরকার ও বিরোধী দলে ছিলাম। একসঙ্গে সরকারি ও বিরোধী দলে থাকাটা প্রধানমন্ত্রীর নতুন ফরমেট ছিল। দেশের উন্নয়নের জন্য আমরা সেভাবেই ছিলাম। তিনি বলেন, মহাজোটের আসন সংখ্যা হচ্ছে ২৮৮টি। দেশের জনগণ চায় না যে সংসদে বড় ধরনের কোনো বিরোধী দল থাকুক।
জনগণ সরকারের ওপর সন্তুষ্ট। সে কারণেই তারা মহাজোটকে ভোট দিয়েছে। মহাজোটই আগামী ৫ বছর ক্ষমতায় থাকবে। জাতীয় পার্টি কি তাহলে সরকারে থাকছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি মহাজোটে আছে। মহাজোটের মহানেত্রী আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আছেন, তিনি আমাদের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সঙ্গে আলোচনা করে যে সিদ্ধান্ত নেবেন- সেটাই হবে আমাদের সিদ্ধান্ত। তবে সরকারে বা বিরোধী দলে থাকতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু আমাদের সংসদ সদস্যরা তাদের এলাকা ও দেশের উন্নয়নে মহাজোটের সঙ্গে সরকারেই থাকতে আগ্রহী।
তাহলে সংসদে বিরোধী দলের নেতা কে হবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা আমাদের বিষয় নয়। এটা সংসদের নেতা ঠিক করবেন। সংসদে জাতীয় পার্টির নেতা কে হবেন জানতে চাইলে পার্টির কো- চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, সংসদে আমাদের পার্টির নেতা কে হবেন সেটা দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হবে। সে মিটিংটা কবে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা আমরা পরে জানিয়ে দেবো। তিনি বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনের সময়ও ছিলাম, সরকারেও থাকবো। সেটাই আমরা চূড়ান্ত করেছি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২৮৮টি আসনে বিজয়ী হয়েছে, জোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি পেয়েছে ২২টি আসন।
শপথ নেননি এরশাদ
এদিকে গতকাল জাতীয় পার্টির ২২ সদস্যের মধ্যে ছিলেন না কেবল এইচ এম এরশাদ। অসুস্থ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বিকালে স্পিকারের কক্ষে শপথ নেবেন বলে সংসদ সচিবালয় থেকে জানানো হয়েছিল। তবে বিকালেও এরশাদ শপথ নিচ্ছেন না বলে তার ছোট ভাই ও পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের জানান। তিনি বলেন, তিন-চার দিনের মধ্যে তার শপথ নেয়ার কথা রয়েছে। তা না হলে বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যেই শপথ নেবেন পার্টির চেয়ারম্যান। ৮৮ বছর বয়সী এরশাদ নির্বাচনের আগে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর ঘুরে এসেছেন। রংপুরের যে আসন থেকে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন, সেখানে ভোট দিতেও যাননি তিনি। নির্বাচনী প্রচারেও নিজের এলাকায় যাননি এইচ এম এরশাদ।

No comments

Powered by Blogger.