আন্তর্জাতিক মহলের কেউ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেনি: সিইসি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কোনো দেশ বা আন্তর্জাতিক সংস্থা কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করেন নি বলে দাবি করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক মহল বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনকে সফল নির্বাচন হিসেবেই উল্লেখ করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে নির্বাচন  ভবনে জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী ধন্যবাদ জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সিইসি। কে এম নূরুল হুদা বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন জাতির জন্য একটা বিরাট অনুষ্ঠান। আমরা আসলে বার বার বলেছি নির্বাচনটা আসলে শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, সারা বিশ্বের জন্যও। আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন নির্বাচন যখন সমাপ্ত হলো, তারপর থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন কমিউনিটি থেকে আমাদের নির্বাচনের ব্যাপারে তারা কমেন্ট করেছেন। তারা তাদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এবং তারা এ নির্বাচনকে সফল নির্বাচন হিসেবেই উল্লেখ করেছেন।
নির্বাচন কেউ প্রত্যাখ্যান করেনি।
বেশ কয়েকটি দেশের অভিনন্দন ও স্বীকৃতির কথা উল্লেখ করে সিইসি বলেন, সাইবেরিয়ার সেই রাশিয়া থেকে শুরু করে ভলগা নদীর পাড় দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের ওপারে আমেরিকা, ইউরোপ সব জায়গাতেই সর্বত্র আমরা এ নির্বাচনের বার্তা পৌঁছে দিয়েছি। এসময় নির্বাচনের আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে প্রশ্ন করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো দেশ বা কোনো সংস্থা এ নির্বাচনের বিরূপ কোনো মন্তব্য করেছে? নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেছে? এ সময় সমস্বরে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলে উঠেন ‘না, স্যার’। এর কারণ হিসেবে সিইসি বলেন, ‘এটা আপনাদের সার্থকতা।
এটা আমাদের সকলের সাফল্য। নির্বাচন সফল করতে গত মাসের জুলাই মাস থেকে প্রতিটি দিন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করেছেন বলেও উল্লেখ করেন সিইসি। নাইজেরিয়ার সাম্প্রতিক নির্বাচনের উদাহরণ টেনে নূরুল হুদা বলেন, তারা বলে এ বিগ ইলেকশন অব টেন মিলিয়ন পিপল। আর আমাদের ১০৪ মিলিয়ন পিপল। ১০ মিলিয়ন যদি বিগ হয়, তাহলে আমাদেরটা কি? ১০ মিলিয়নে যদি হয় বিগ, তাহলে ১০৪ মিলিয়নে কি হবে? এরকম একটা দেশে, এরকম একটা নির্বাচন আমরা সম্পন্ন করেছি, আপনারা সম্পন্ন করেছেন।’ নানা গুরুত্বের আঙ্গিকে বাংলাদেশের নির্বাচন ভিন্ন, গুরুত্বপূর্ণ ও বিশাল বলে মন্তব্য করেন সিইসি।
কারণ হিসেবে বাংলাদেশে একদিনে প্রায় ১০ কোটি ৪১ লাখ ভোটারের ভোটগ্রহণ ও পুরো নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করতে হয় বলে উল্লেখ করেন সিইসি। তিনি বলেন, পৃথিবীর বহু উন্নত দেশে এত সংখ্যক ভোটার নেই। এবং সেখানে ২/৩ দিন ধরে ভোটগ্রহণ হয়। এমন কারণে বাংলাদেশের নির্বাচনকে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ বলে আখ্যা দেন সিইসি। তিনি বলেন, সে কারণেই নির্বাচনটা এত গুরুত্বপূর্ণ, সে কারণেই নির্বাচন এত কঠিন। কিন্তু সেই কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে আমরা সফল ধাপে নিয়ে এসেছি। এখন আমাদের পরিশ্রমের ফল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের হাতে- যারা দেশ পরিচালনা করবেন তাদের হাতে আপনারা তুলে দিয়েছেন। তাদের দায়িত্ব হবে দেশকে কতখানি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন সেটা।
ইভিএমের প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, আমাদের প্রথমবার ভুলভ্রান্তি হয়েছে, হবে। কাজ করতে গেলে ভুলভ্রান্তি হবে। কাজ করতে গেলে সবকিছু সঠিকভাবে আনা যাবে না। তবুও এটা যদি আমরা সার্থকভাবে ব্যবহার করতে পারি বহু দেশ আমাদের থেকে দৃষ্টান্ত  নেবে, বিভিন্ন দেশে নিয়ে যাবে দেখানোর জন্য। এরমধ্যেই মিশর থেকে এনআইডি প্রকল্পের বিষয়ে সহযোগিতা চেয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে সে দেশে একটি প্রদর্শনী করতে অনুরোধ করা হয়েছে বলেও জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন,  নেপাল সরকার নির্বাচন কমিশনের কাছে একই ধরনের সহযোগিতা চেয়েছে। নির্বাচন কমিশনের এসব নীরব কাজ দেশের জন্য একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে বলেও উল্লেখ করেন সিইসি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কমিশন সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে জানিয়ে নূরুল হুদা বলেন, একটা চ্যালেঞ্জও আমরা আনটাচ রাখিনি। সব ধরনের চ্যালেঞ্জ আমরা মোকাবিলা করতে পেরেছি।
সিইসির বক্তব্যের শুরুতে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদকে দক্ষ সচিব, সুযোগ্য সচিব, ক্ষিপ্র সচিব বলে আখ্যা দেন। তার নেতৃত্বে এত বিশাল একটি কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন হওয়ায় ধন্যবাদ জানান নূরুল হুদা। তিনি বলেন, নির্বাচন একটা হয়ে গেছে, সামনে যে নির্বাচনগুলো আসবে সেগুলোও কিন্তু কম নয়। গুরুত্বের দিক দিয়ে এবং এর পরিধির দিক দিয়ে মোটেই কম নয়। সেসব নির্বাচনের জন্য আমাদের প্রস্তুতি থাকবে। অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.