বজ্রপাত বেড়েই চলছে: তালগাছ থিওরি কার্যকর হচ্ছে না by দীন ইসলাম

সারা দেশে বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। গত দুইদিন ৩০ জন বজ্রপাতে মারা গেছেন। এ জন্য নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বজ্রপাতে মৃত্যুর কারণ উদঘাটনে আবার নড়াচড়া শুরু করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। বজ্রপাত ঠেকাতে কি করা যায় এনিয়ে প্রতি বছরের মতো এবারও সভা, সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে এবার বজ্রপাত ঠেকাতে তালগাছ থিওরি সামনে আনছে না দুর্যোগ মন্ত্রণালয়। কারণ তালগাছ থিওরি খুব একটা কাজে দিচ্ছে না। এজন্য নতুন করে ভিয়েতনামের মতো টাওয়ার নির্মাণের চিন্তাভাবনা চলছে। হাওরপ্রবণ এলাকায় এসব টাওয়ার নির্মাণের চিন্তাভাবনা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গেল বছর থেকে বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধে সারা দেশে তালগাছের চারা রোপণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এরপর সরকারি উদ্যোগে ১০ লাখ তালগাছের চারা রোপণ করা হয়। ওই সময় নারিকেল গাছের চারা রোপণেরও পরিকল্পনা করা হয়। সরকারি কর্মকর্তারা বিশেষজ্ঞদের মতামত না নিয়েই ওই সময় বলেন, গ্রামেগঞ্জে প্রচুর পরিমাণে তালগাছ ও নারিকেল গাছ থাকলে সেগুলো বজ্রনিরোধক হিসেবে কাজ করতে পারে। এর ফলে বজ্রপাতে নিহত হওয়ার ঘটনা এড়ানো যাবে। তখন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, আগে বজ্রপাত হলে তা তালগাছ বা অন্য কোনো বড় গাছের ওপর পড়তো। বজ্রপাত এক ধরনের বিদ্যুৎ রশ্মি। তাই বজ্রপাতের ওই রশ্মি গাছ হয়ে তা মাটিতে চলে যেত। এতে জনমানুষের তেমন ক্ষতি হতো না। কিন্তু এখন গ্রামের পর গ্রাম ঘুরলেও আর তাল গাছ দেখা যায় না। একইভাবে বড় আকারের গাছও এখন তেমন নেই। সারা দেশে বনায়ন হলেও তা আকারের দিক থেকে বড় হয়ে ওঠেনি। এসব কারণেই বজ্রপাতে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। দুর্যোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে বজ্রপাতের ঘটনা আগের চেয়ে বেড়েছে। ২০১৬ সালে দেশে বজ্রপাতে নিহত হন প্রায় সাড়ে চারশ’ মানুষ। এর মধ্যে একদিনেই মারা যান ৮২ জন। বিষয়টি তখন সংবাদমাধ্যমসহ সর্বত্র ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। এদিকে গত দুইদিনে বজ্রপাতে নারায়ণগঞ্জে চার জন, জামালপুরে দুই জন, পাবনায় একজন ও মৌলভীবাজারে দুই জনসহ নয় জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে রোববার বজ্রপাতে ১৮ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে বেশিরভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে হাওর অঞ্চলের নয়টি জেলায়। বজ্রপাতে গবাদিপশু মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বজ্রপাতে মৃত্যু কমাতে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের ফর্মুলা অনুযায়ী চলছে সরকার। থাইল্যান্ডের বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে সরকার জেনেছে, থাইল্যান্ডে তাল গাছ লাগিয়ে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে।
এছাড়া ভিয়েতনামের বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে জানা গেছে, সেখানে টাওয়ার দিয়ে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার কমানো গেছে। এদিকে দেশের জনসাধারণকে দিনের শুরুতেই ঘর থেকে বের হওয়ার আগে ১০৯০ নম্বরে ফোন করে আবহাওয়া সম্পর্কে জেনে যেতে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এজন্য কোনো অপারেটর থেকেই চার্জ দিতে হবে না বলে জানা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.