মেইল এসকর্ট by রুদ্র মিজান

‘ডিয়ার লেডিস, আর ইউ লোনলি হাউজওয়াইফ, ডিভোর্সেড লেডি, সিঙ্গেল গার্ল, ফরেনার লেডি? লুকিং ফর ফুল বডি ম্যাসেজ, ট্রাভেল, ফান সার্ভিস, পাসটাইম? উইথ ফুললি প্রাইভেসি অ্যান্ড সিক্রেসি। প্লিজ কন্টাক্ট মি। হোপ ইউ উইল গেট হাই সেটিসফেকশন উইথ মি। ফিল ফ্রি টু ইনবক্স মি। সো লেডিস...। অনলি ফর লেডিস।’ এভাবেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন পেইজে বিজ্ঞাপন দিয়ে নারীদের আকৃষ্ট করে তারা। দীর্ঘদিন যাবৎ এভাবেই অনৈতিক কার্যকলাপ করে এই বিপথগামী চক্র। তারা প্রত্যেকেই সুদর্শন। লম্বা, ফর্সা। ইংরেজিতে দক্ষ। বয়স ২৫ থেকে ৩৫ বছর। পেশাদার যৌনকর্মী। ভার্চুয়াল জগতে ছদ্মনামে পরিচিত তারা। ঢাকায় রয়েছে এরকম শতাধিক মেইল এসকর্ট। তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধশত ছেলের তথ্য পেয়েছেন সিটিটিসি’র সাইবার ক্রাইম ইউনিট। এরমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এক যুবককে। ২৫ বছর বয়সী এই যুবক মেইল এসকর্ট হিসেবে সাব্বির আহমেদ নামে পরিচিত। তার প্রকৃত নাম আবদুল হাকিম। উচ্চতা পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চি।
জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে হাকিম। আবদুল হাকিমের দেয়া তথ্যে চমকে গেছেন গোয়েন্দারা। রাজধানীর ঢাকার মধ্যেও রয়েছে আরেক ঢাকা। সেই ঢাকার কালচার, যৌনজীবন ইউরোপের বিভিন্ন দেশের চেয়েও বেপরোয়া। সাধারণত যৌনকর্মী হিসেবে নারীদের কথা প্রায় সবার জানা থাকলেও পুরুষ এসকর্টদের সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা নেই অনেকের। জিজ্ঞাসাবাদে এসকর্ট জীবনের শুরু থেকে বর্তমান সময়ের নানা তথ্য দিয়েছে হাকিম। এসকর্ট ব্যবসার জন্য ছদ্মনামে ফেসবুকে এডমিন হিসেবে পাঁচটি পেইজ পরিচালনা করতো। নারী ক্লায়েন্টদের আকৃষ্ট করতে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন প্রমোট করতো। এমনকি নারীদের ফেসবুকের ইনবক্সেও পাঠানো হতো এ সংক্রান্ত ক্ষুদেবার্তা। ক্ষুদেবার্তা-বিজ্ঞাপনের সূত্রধরেই হাকিমের ডাক পড়তো অভিজাত এলাকার নারীদের বাসায়। পরবর্তী যোগাযোগ হতো হোয়াটসঅ্যাপে। নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট স্থানে সুন্দর পোশাকে সেজেগুজে অপেক্ষা করতো হাকিম। অতঃপর দেখা হয় নির্দিষ্ট নারীর সঙ্গে। তাদের সঙ্গে রাতযাপন করে ফিরতেন আট থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে। এসব নারীরা মূলত উচ্চবিত্তশালী। কেউ কেউ ভিনদেশি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এডমিন হিসেবে অন্তত পাঁচটি এডাল্ট পেইজ পরিচালনা করতো আবদুল হাকিম। এসব পেইজে জাহিদ হাসান, সায়মা হক ও তানভীর আহমেদ নামেও এডমিন রয়েছে।
অনৈতিক এই পেশায় জড়ানো প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদে হাকিম জানিয়েছে, অর্থের নেশাই তাকে বিপথগামী করেছে। এইচএসসি পাস যুবক আবদুল হাকিম অল্পতেই বিপুল অর্থের মালিক হতে হাঁটতে থাকে ভিন্নপথে। ইংরেজি লেখায়-বলায় ও কম্পিউটারে পারদর্শী হাকিম কয়েক বছর আগে কাজ নেয় রাজধানীর পল্টনের একটি দোকানে। কম্পিউটারের ওই দোকানে মূলত অনুবাদের কাজ করতো হাকিম। বেশিরভাগ সময় কাটাতো কম্পিউটারে-ইন্টারনেটে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় হয় চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সদস্য মাহতাব রফিকের সঙ্গে। ব্যবসায়ী রফিকের কাছে কাজ খুঁজছিলো হাকিম। মাহতাব রফিক তাকে ফিমেইল এসকর্ট প্রোভাইডার হিসেবে কাজ করতে পরামর্শ দেয়। এতে বসে বসেই প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা আয় করা সম্ভব বলে জানায় মাহতাব রফিক। ব্যস, সেই অন্ধকার পথেই হাঁটতে থাকে হাকিম। বিভিন্ন মাধ্যমে ফিমেইল এসকর্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ফিমেইল এসকর্টদের মুখঢাকা ছবি-বিজ্ঞাপন প্রচার করে মাহতাব রফিকের এসকর্ট সংক্রান্ত ওয়েবসাইট। ক্লায়েন্ট যোগাযোগ করে। এভাবেই জড়িয়ে যায় অনৈতিক বাণিজ্যে। ভিনদেশি নারী ও দেশের মধ্যে ওয়েস্টার্ন কালচারে বেড়ে ওঠা নারীদের কথা চিন্তা করেই ফিমেইল এসকর্টের পাশাপাশি শুরু করে মেইল এসকর্টের কাজ। নিজের যৌবন ও শরীরকে কাজে লাগিয়ে রাতারাতি এক শ্রেণির নারীদের কাছেও প্রিয় হয়ে উঠে হাকিম।
গ্রেপ্তারের পর রিমান্ড শেষে গত ২২শে এপ্রিল আদালতে হাজির করা হয় হাকিমকে। আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন। হাকিমের বাসা গোড়ানে। স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে তার পরিবার। সিরাজগঞ্জের এক কৃষক পরিবারের সন্তান হাকিম। তিন ভাইয়ের মধ্যে ছোট। এক ভাই চাকরি করেন বিশেষ একটি বাহিনীতে, আরেক ভাই পুলিশে এএসআই পদে কর্মরত।
সিটিটিসি’র সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সহকারী পুলিশ কমিশনার ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে, পেইজ, আইডিসহ নানাভাবে অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িতদের বিষয়ে আমরা তদন্ত করছি। ইতিমধ্যে মেইল এসকর্ট হাকিমসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। তাদের দেয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে জড়িত অন্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

No comments

Powered by Blogger.