চট্টগ্রামে অরক্ষিত বিস্তীর্ণ উপকূল

কাজের ধীরগতি ও সংস্কারের অভাবে অরক্ষিত রয়ে গেছে চট্টগ্রামের উপকূলীয় বেড়িবাঁধগুলো। চলতি মৌসুমে বড় ধরনের কোনো জলোচ্ছ্বাস বা ঘূর্ণিঝড় হলে সংশ্লিষ্ট উপজেলায় প্রাণহানিসহ বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
উপকূলবাসীর ভাষ্য, উপকূল রক্ষাবাঁধগুলো সংস্কার ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো)। এতে চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন উপকূলবাসীরা। তবে বেড়িবাঁধগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের দাবি, কোথাও দুর্বল বাঁধ নেই।
পাউবো চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী স্বপন বড়ুয়া বলেন, ১৯৯১ সালের ২৯শে এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ে অরক্ষিত বা ঝুঁকিতে থাকা এমন কোনো বাঁধ নেই চট্টগ্রাম উপকূলে। ঝুঁকিতে থাকা বাঁধের মধ্যে চট্টগ্রাম শহর রক্ষা বাঁধকে ঘিরে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ করছে।
উপকূলীয় এলাকাগুলোতেও বেড়িবাঁধকে ঘিরে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে এলাকার সাধারণ লোকজন ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, লবণাক্ত পানি প্রবেশ, জলাবদ্ধতা হ্রাস, বাঁধের ভাঙন রক্ষা, আবাদি জমি, ফসল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও মূল্যবান সমপদ রক্ষা করা সহজ হবে। উপকূলীয় এলাকায় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচনেও প্রকল্পগুলো সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের বাঁশখালী, সীতাকুণ্ড, সন্দ্বীপ ও মিরসরাই একাংশ মিলিয়ে ২৬৫ দশমিক ২৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে বাঁশখালী উপজলায় ১৪১ দশমিক ১৪ কিলোমিটার, সীতাকুণ্ড উপজেলায় ৩৩ দশমিক ৬২ কিলোমিটার, সন্দ্বীপ উপজেলায় ৫৮ কিলোমিটার, মিরসরাই উপজেলায় ৩২ দশমিক ২০ কিলোমিটার, আনোয়ারায় ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে।
যদিও স্থানীয় লোকজন এসব বেড়িবাঁধ এখনো অরক্ষিত এবং যেখানে প্রকল্পের কাজ চলছে সেগুলোও খুব ধীরগতিতে চলছে বলে অভিযোগ করেন।
লোকজনের মতে, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে পুরোপুরি বিলীন হয়ে গিয়েছিল আনোয়ারা উপকূলের ১৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। এরপর বিভিন্ন সময় বেড়িবাঁধ সংস্কার ও রিং বাঁধ নির্মাণের নামে পানি উন্নয়ন বোর্ড বিপুল অর্থ বরাদ্দ দিলেও তাতে দুঃখ ঘুচেনি উপকূলবাসীর। দীর্ঘদিন পর পানি উন্নয়ন বোর্ডের চলমান ২৮০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে আনোয়ারা উপকূলীয় বাঁধের জন্য। তবে অভিযোগ কাজের ধীরগতি নিয়ে।
সরজমিনে দেখা যায়, আনোয়ারা উপকূলীয় বাঁধের দক্ষিণ ও উত্তর পরুয়া পাড়া ও বারআউলিয়া অংশে ব্লক বসানো হলেও বাঁধের বিরাট অংশ রয়েছে ভাঙাচোরা অবস্থায়। পূর্ব গহিরা অংশে ফকিরহাট ও হাড়িয়াপাড়া এলাকায় ৭১০ মিটার এলাকা বেড়িবাঁধ নির্মাণের পাশাপাশি ব্লক বসানোর কথা থাকলেও সেখানে কোনো কাজ শুরু হয়নি।
উপকূলীয় উপজেলা বাঁশখালীতে ২৫১ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। ৬টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৩৪টি প্যাকেজে বাঁশখালীর উপকূলীয় বেড়িবাঁধের কাজ পায়। ২০১৫ সালের মে থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত এ বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ আছে। অভিযোগ আছে প্রকল্পের কাজ চলছে ধীরগতিতে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠে। বাঁধ এলাকার লোকজন অভিযোগ করেছেন, অনেক জায়গায় বাঁধ সংলগ্ন স্থান থেকে স্কেভেটর দিয়ে মাটি তুলে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে।
পতেঙ্গায় চট্টগ্রাম শহর রক্ষা বাঁধের দৈর্ঘ্য ২১ কিলোমিটার। এর বাইরে রাউজান, হাটহাজারী, রাঙ্গুনিয়া ও ফটিকছড়িতে বেড়িবাঁধ না থাকলেও সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন হালদা ও কর্ণফুলী নদীর ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে।
বোয়ালখালী ও রাউজান অংশে কর্ণফুলী নদী এবং খালের ভাঙনরোধে ৩৫৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছিল পাউবো। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় প্রকল্পটি এখনো আটকে আছে। এর মধ্যে তাড়াহুড়া করে নেয়া হয়েছে ৩১ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প। এ প্রকল্পে বাদ দেয়া হয়েছে রাউজান অংশকে। বৃহৎ আকারের প্রকল্প বাদ দিয়ে ছোট আকারের প্রকল্প গ্রহণের পিছনে আগামী নির্বাচনই উদ্দেশ্য বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়, পরবর্তীতে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু ও মোরার আঘাতে বাঁশখালীর ৬টি ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। এরপর আড়াইশ’ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় বাঁশখালী উপকূলীয় বেড়িবাঁধে ১৭ লাখ ৮ হাজার ৪৭১টি ব্লক ও ৫ লাখ ৭৮ হাজার ১৫৭টি জিও ব্যাগ তৈরির কাজ চলছে।

No comments

Powered by Blogger.