কৃষি বাঁচাতে ‘জৈব সার’ by পিয়াস সরকার

খাদ্যের পুষ্টিগুণ রক্ষায় অন্যতম হাতিয়ার জৈব সার। রাসায়নিক সার ব্যবহারে ফলন বেশি হলেও ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায় জমির গুণাগুণ। বাংলাদেশের জমিতে জৈব সারের উপাদান থাকা উচিত স্থানভেদে তিন থেকে পাঁচ শতাংশ। কিন্তু বর্তমানে তার পরিমাণ দুই শতাংশ কোথাও কোথাও তার থেকেও কম। জৈব সারের মাত্রা এই ভাবে কমতে থাকলে ভবিষ্যতে রাসায়নিক সার ব্যাপক মাত্রায় প্রয়োগ করা হলেও উৎপাদন করা সম্ভব হবে না ফসল। কৃষিবিদ পাপিয়া শারমিন যূথী বলেন, রাসায়নিক সার ব্যবহারে প্রথমে জমিতে ফলন তুলনামূলক বৃদ্ধি পায়। কিন্তু ধীরে ধীরে তা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দীর্ঘদিন জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে জমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়। এমনটি হলে অধিক পরিমাণ রাসায়নিক সার প্রদান করলেও আসবে না কাঙ্ক্ষিত ফসল।
প্রাকৃতিক সারে রয়েছে বহুমুখী গুণ। ফসলি জমির দীর্ঘ মেয়াদি আবাদের জন্য জৈব সার ব্যবহার করা অতীব জরুরি। কারণ রাসায়নিক সার ব্যবহারে ধীরে ধীরে জমির কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। জৈব সার মাটির উপকারী পতঙ্গদের বাঁচিয়ে রাখতে ও বংশবৃদ্ধিতে সহায়তা করে। মাটির রস ধরে রাখতে সহায়ক হয় যার ফলে অধিক সেচের প্রয়োজন হয় না। জৈব সার যেমন ফসলের ফলন ধরে রাখতে সহায়ক ঠিক তেমনি খাদ্য দীর্ঘদিন সংরক্ষণ ও গুদামজাত করতেও সহায়ক হয়। গ্রীষ্মকালে মাটির তাপমাত্রা কমাতে এবং শীতকালে তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে জৈব সার। ফসলের শিকড় বৃদ্ধি এবং মজবুত করে ফলে ফসল দুর্যোগে সহনশীল রূপ ধারণ করে। জৈব সারের প্রভাব ৬ থেকে ১৮ মাস ধরে মাটিতে থেকে যায়, যার কারণে দুই বা তিন ফসল ধরে এর গুণাগুণ অক্ষত থাকে। দীর্ঘদিন রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে জমিতে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করে এবং জৈব সার ব্যবহারের ফলে রাসায়নিক সার কম মাত্রায় প্রাদান করলেও চলে। জৈব সারে কীটনাশক প্রদান করতে হয় কম এবং অধিক প্রদানে মাটির গুণাগুণে কোনো ক্ষতি হয় না।
অনেক ধরনের জৈব সার হয়ে থাকে যেমন কেঁচো সার, গোবর সার, গৃহস্থালির বর্জ্য পচিয়ে সার, মিশ্র সার (গোবর ও বর্জ্য) গাছের পাতা-গুল্ম-কাণ্ড পচিয়ে সার, মানুষের মলমূত্র দিয়ে প্রস্তুতকৃত সার ইত্যাদি। তবে গোবর সার সর্বাধিক ব্যবহ্রত হয় বাংলাদেশে। এসব সারের পাশাপাশি বাসাবাড়িতে ফুল বাগানে তরল জৈব সারের ব্যবহারো করেন অনেকে।
ধীরে ধীরে রাসায়নিক সার মুক্ত খাদ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে সচেতন মানুষদের মাঝে। ঢাকা শহরে বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠছে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক মুক্ত খাদ্য পণ্যের দোকান। প্রাকৃতিক কৃষি বিপণন কেন্দ্রের প্রধান দেলোয়ার জাহান বলেন, রাসায়নিক সারমুক্ত খাদ্য দ্রব্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। রাসায়নিক সার সমৃদ্ধ খাদ্যে থাকে নানান ধরনের রোগের শঙ্কা তাই সচেতন ব্যক্তিরা সামান্য অর্থ বেশি খরচ করে ঝুঁকছেন জৈব সারে উৎপাদিত খাদ্যের দিকে।
ডা. ফাহমিদা আক্তার দৃষ্টি বলেন, দীর্ঘ দিন রাসায়নিক সারে আবাদ হওয়া ফসল খেলে অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে। রাসায়নিক উপাদন শরীরে যাবার ফলে ধীরে ধীরে লান্স, কিডনি কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। সেই সঙ্গে ক্যানসার হবার শঙ্কাও থেকে যায়।
অনেক কারণে কৃষকরা ফসলি জমিতে জৈব সার ব্যবহার করেন না। যেমন জৈব সারের অপ্রতুলতা অন্যদিকে কৃষকরা অর্থের বিনিময়ে খুব সহজেই পাচ্ছেন রাসায়নিক সার। আবার জৈব সার তৈরিতে পোহাতে হয় নানান জটিলতা। রাসায়নিক সারে প্রথম দিকে ভালো ফলন হবার কারণে তা আর ছাড়তে চায় না কৃষক। রাসায়নিক সার ব্যবহার করার পর জৈব সারে কৃষক ফিরলে প্রথম দিকে আগের তুলনায় ফলন কম হওয়া আরেকটি কারণ। গ্রামাঞ্চলে গো-বিচরণ ক্ষেত্র কমবার ফলে কমে যাচ্ছে গরু পালন। তাই দেখা দিচ্ছে গোবর সংকট। বাজারে গোবর মিললেও রাসায়নিক সারের তুলনায় তার মূল্য অনেক বেশি। মাঠপর্যায়ে কৃষক জৈব সারের পাশাপাশি ব্যবহার করেন রাসায়নিক সার। ফসলের চারা রোপণের আগে জমি চাষ দেবার সময় দেন জৈব সার। এক্ষেত্রে প্রায়শই তারা ব্যবহার করেন গোবর সার ও মিশ্র সার। নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার কৃষক অলিয়ার রহমান জানান, জৈব সারে ফসল আবাদ করলে জমির রস থাকে অনেক দিন। কিন্তু দামের কারণে ব্যবহার করা সম্ভব হয় না।

No comments

Powered by Blogger.