রাজাকারের বাচ্চাদের দেখে নেবো: কোটা সংস্কার নিয়ে মতিয়া

সরকারি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের তুলোধুনা করেছেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। সোমবার সংসদ অধিবেশনে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, পরিষ্কার বলতে চাই, মুক্তিযুদ্ধ চলছে, চলবে। রাজাকারের বাচ্চাদের আমরা দেখে নেবো। তবে ছাত্রদের প্রতি আমাদের কোনও রাগ নেই। মতলববাজ, জামায়াত-শিবির, তাদের এজেন্টদের বিরুদ্ধে সামান্য শৈথিল্য দেখানো হবে না।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী কোটা সংস্কারের আন্দোলন নিয়ে পয়েন্ট অব অর্ডারে আলোচনার সূত্রপাত ঘটান। পরে বিষয়টি নিয়ে সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও কয়েকজন এমপি বক্তব্য রাখেন। কেউ কেউ কোটা সংস্কারকে যৌক্তিক উল্লেখ করে বিষয়টি বিবেচনার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী রাতের আঁধারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসায় হামলার কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘এটা শিক্ষার্থীদের জন্য একটা কলঙ্কজনক ইতিহাস। প্রতিবাদ করতে মুখোশ কেন পরতে হবে? মুখোশ কারা পরে? যারা ভণ্ড, প্রতারক তারাই মুখোশ পরে। সাহস থাকলে মুখটা দেখাও। ইতর হওয়ার একটা সীমা আছে।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে বলে বগুড়ায় যে তাণ্ডব হয়েছিল সেটা দেখতে তিনি গিয়েছিলেন। ওই ঘটনায় বগুড়া আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিনের পরিবারের সদস্যরা ছাদের ওপর দিয়ে অন্য বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। একই স্টাইলে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরের সেই শক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসায় হামলা চালিয়েছে।
মতিয়া চৌধুরী বলেন, যারা দেশের জন্য জীবন বাজি রাখেন, পৃথিবীর সব দেশে তাদের জন্য বিশেষ সুযোগ থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানেরা সুযোগ পাবে না, রাজাকারের বাচ্চারা সুযোগ পাবে? তাদের জন্য মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংকুচিত হবে? রাজধানীকেন্দ্রিক একটি এলিট শ্রেণি তৈরির চক্রান্ত চলছে। তারই মহড়া গতকাল আমরা দেখলাম।
তিনি বলেন, যারা সাঈদীকে চাঁদে নিয়ে যায়, মুখোশ পরে হামলা করে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলব তাদের কোনও ক্ষমা নেই। তাদের ক্ষমা করা যাবে না। এই দেশে হয় তারা থাকবে, না হয় আমরা থাকবো।
রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, কোটা সংস্কারের দাবি যুক্তিসঙ্গত। নাগরিকদের দাবি জানাবার, আন্দোলন করার অধিকার আছে। কিন্তু উপাচার্যের বাড়িতে যে তাণ্ডব চালানো হয়েছে, তা কি ভুল নাকি অনুপ্রবেশ; সেটা একটা বিষয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমনটা ঘটেনি। সন্ত্রাস, নৈরাজ্য কেন?
স্বতন্ত্র এই এমপি কোটা সংস্কারের দাবির প্রতি নৈতিক সমর্থন জানান। তিনি বলেন, এ নিয়ে মন্ত্রিসভা ও সংসদে আলোচনা হতে পারে। সংসদীয় একটি কমিটি করা যেতে পারে। এই কমিটি সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরর নেতৃত্বে যে আলোচনা চলছে, এর সহায়ক হবে। ন্যায়সঙ্গত একটা সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, উপাচার্যের বাড়িতে রাতে প্রবেশ করে ফ্রিজ, আলমারি ভাঙা মালামাল তছনছ করাকে দাবি আদায়ের আন্দোলন বলতে পারি না।
ইমরান এইচ সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে তারানা হালিম বলেন, একজন ব্যক্তির ফেসবুক পেজে আহত একজনকে নিহত বলে পোস্ট দেওয়া হয়েছে। যিনি মারা গেছেন বলে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া হলো, ওই ব্যক্তি পরে নিজে পোস্ট দিয়ে জানিয়েছেন তিনি বেঁচে আছেন।
তারানা হালিম বলেন, দাবি যৌক্তিক বা অযৌক্তিক হতে পারে। তবে সহিংসতা যৌক্তিক হতে পারে না।
বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) এমপি আবুল কালাম আজাদ বলেন, কোটা সংস্কারের আন্দোলন আর স্বাভাবিক আন্দোলনে সীমাবদ্ধ নেই। এটি বহুমাত্রিক ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। অতি উৎসাহী পুলিশ এই কার্যক্রমকে বেগবান করেছে। এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কাজ করেছে। আন্দোলনকারীদের উত্তেজিত না করে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কাজ করতে হবে। একইসঙ্গে তিনি একটি সংসদীয় কমিটি গঠনের দাবি জানান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশে সংরক্ষিত নারী আসনের সরকারদলীয় এমপি সাবিনা আক্তার তুহিন বলেন, গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক ইমরান এইচ সরকারের বিরুদ্ধে কেন মামলা হচ্ছে না? কেন তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না?
তিনি বলেন, ইমরানের ফেসবুক পোস্টের কারণে সারা দেশে আন্দোলনকারীরা ফুঁসে উঠে। ইমরান একের পর এক সরকারের বিরুদ্ধে নাটক সাজাচ্ছে। আমরা আর ঘরে বসে থাকব না। প্রতিরোধ করবো।

No comments

Powered by Blogger.