কোটার সংস্কার প্রয়োজন- জাফর ইকবাল

বিশিষ্ট লেখক, শিক্ষাবিদ ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, ‘একই কোটা বারবার ব্যবহার করা ফেয়ার না। একই কোটা একবার ব্যবহার করা উচিত। এক কোটা আমি যদি চারবার পাঁচবার ব্যবহার করি তাহলে   অন্যরা সুযোগটা কম পাবে। কোটা যত কম থাকা যায় তত ভালো। একান্ত প্রয়োজন না হলে কোটা সিস্টেমটা ভালো না।’ সোমবার দুপুরে আইআইসিটি ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, ‘কোটার অনুপাতটা ঠিক নাই। ১০০ এর মধ্যে ৫৬ শতাংশ কোটা থাকে। এত বেশি কোটা থাকে এটা কেমন করে সম্ভব। আমার কাছে সবচেয়ে বেশি দুঃখ লাগতেছে যে, একটা বড় অংশের মানুষের কাছে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা নিয়ে। মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা এত সম্মান করি এত ভালোবাসি। এই জিনিসটার (কোটা) মাধ্যমে তাদের একটা অসম্মান করার সুযোগ পাচ্ছে। কেন মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অসম্মানের একটা ব্যাপার আসবে। এই কোটা ব্যাপারটার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান যাতে নষ্ট না হয়, তাদের অবদানকে যেন ছোট করে দেখা না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। মুক্তিযোদ্ধাদের কোটাকে আমরা যদি একটি পরিমিত জায়গাতে রাখতাম, তাহলে মুক্তিযোদ্ধারা এভাবে অসম্মানিত হতেন না। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানকে অক্ষুণ্ন রাখার জন্য কোটাকে সংস্কার করা উচিত।’
ড. জাফর ইকবাল আরো বলেন, ‘আমি চাই না মুক্তিযোদ্ধারা অসম্মানিত হোক। অনেক মুক্তিযোদ্ধা  আছেন যারা আগে অনেক কিছু পান নাই। ১৯৭৫ থেকে ৯৬ পর্যন্ত অনেক মুক্তিযোদ্ধারা ভাতা পান নাই। আমি চাই এদের ভাতা, চিকিৎসা ও সম্মান দেয়া হোক। কিন্তু জিনিসটা করতে গিয়ে যদি তাদেরই অসম্মান করার সুযোগ হয়। তাহলে সেটা কাম্য নয়।’
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শুধু শিক্ষার্থী নয়। যেকোনো মানুষের ওপর হামলা আমার ভালো লাগে না। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা মনে হচ্ছে যে একটু বাড়াবাড়ি পর্যায়ে হয়ে গেছে। এই রকম (শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা) জায়গাতে আসা উচিত হয় নাই। আগে বিষয়টার মীমাংসা করা উচিত ছিল। আগেই মীমাংসা হলে শিক্ষার্থীদের বিস্ফোরণ হতো না। কয়েকদিন ধরে পত্রপত্রিকায় দেখছি শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবেই আন্দোলন করে যাচ্ছিল। হঠাৎ করে কি এমন হলো যে, এমন বিস্ফোরণ হলো। স্টুডেন্টদের গায়ে হাত তুলা এ সমস্ত বাহিনীর কাছে গ্রহণ যোগ্য নয়। আমাদের দেশে আগে কখনো পুলিশ ক্যাম্পাসে যেত না। এখন কিভাবে কি যেন হয়েছে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে প্রচুর পুলিশ যায়। আগে পুলিশ ক্যাম্পাসে ঢোকার আগে প্রক্টরের অনুমতি নিতে হতো। যদি প্রক্টর অনুমতি দিতেন তাহলেই কেবল পুলিশ ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারতো। এখন দেখি ক্যাম্পাসগুলোতে প্রচুর পুলিশ থাকে।
তিনি আরো বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গাতেই কোটা আছে। কোনো গ্রুপ যদি অবহেলিত হয় তাহলে তাদের সামনে নিয়ে আসার জন্য অনেক জায়গাতেই কোটা সিস্টেম রয়েছে। কিন্তু সেটাতো একটি নিয়মের মধ্যে, সামঞ্জস্যপূর্ণ, যুক্তিপূর্ণ এবং দেশের প্রয়োজনের সঙ্গে মিল হতে হবে। পৃথিবীর যেকোনো জায়গাতে কোটা সংস্কার হয়। আমাদের এখানে কোটা সংস্কার করা যেতে পারে।’
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কার বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’র সারা দেশে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে রোববার রাতে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ঢাকায় সংঘর্ষ হয়।
১০ ভাগের বেশি কোটা থাকা উচিত নয়
প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক  আনিসুজ্জামান মনে করেন সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগের বেশি কোটা সংরক্ষণ করা উচিত না। বিদ্যমান ব্যবস্থায় যে ৫৬ ভাগ  কোটা রয়েছে তা অন্যায়। তবে কোটা সংস্কারের নামে কোনো সহিংস আন্দোলন গ্রহণযোগ্য নয়। আলাপ- আলোচনার মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। গতকাল মানবজমিনকে তিনি বলেন, রোববার যা দেখলাম তাতে মনে হচ্ছে আন্দোলন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। সব সময় শুভ বুদ্ধি জাগ্রত রাখা দরকার। তারা একটা দাবি করছে বলে অন্যায় উপায়ে দাবি আদায় করবে- এটা ঠিক নয়। দাবিটাও ন্যায্য হতে হবে, পথটাও ন্যায্য হতে হবে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান হতে হবে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব-সরকারকেও  বুঝতে হবে কখন কি করতে হবে। সরকারেরও তো বিবেচনা থাকে। আমি শুধু ছাত্রদের বলবো তারা যেন সহিংসতার পথ ত্যাগ করে শান্তিপূর্ণভাবে দাবি তুলে ধরে। বিষয়টি সমাধান করতে সরকারকেও সময় দিতে হবে। কারণ এ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.