বেনজির বিক্ষোভ, পরীক্ষা-নিরীক্ষার আশ্বাস

এক অন্যরকম বিক্ষোভের সাক্ষী হলো বাংলাদেশ। আন্দোলন চলছে দীর্ঘদিন ধরে। নানা কর্মসূচি। দাবি কোটা সংস্কারের। রোববার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শাহবাগে অবস্থান। যদিও এটা অন্য এক শাহবাগ। বাধা দেয়ার চেষ্টা পুলিশের। সন্ধ্যা নামতে নামতে অ্যাকশন। শাহবাগের দখল ছাড়লেও ক্যাম্পাসের দখল ছাড়েননি বিক্ষোভকারীরা। তাদের ওপর নির্বিচারে টিয়ার শেল আর রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ। ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে পাল্টা জবাব দেয়  বিক্ষোভকারীরা। মিনিট বা ঘণ্টার ছবি এটি নয়। এ দৃশ্য পুরো রাতের। আতঙ্ক জাগানিয়া এক রাত। বেনজির সংঘর্ষ। নানা গুজব। দৃশ্যপটে আবির্ভাব ছাত্রলীগের। আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা। কোনো কিছুতেই টলানো যায়নি তাদের। গভীর রাতে শ’ শ’ ছাত্রী যোগ দেন বিক্ষোভে। যে দৃশ্য আগে কখনো দেখা যায়নি। ঢাবি ভিসির বাসাতেও হয় নজিরবিহীন হামলা। রাতভর সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিকসহ আহত হন দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। গ্রেপ্তারের শিকার হন অনেকে।
আতঙ্ক, উত্তেজনা আর সংঘর্ষের রাতের পর নতুন সূর্য। পুলিশের অ্যাকশনে কিছুটা বিরতি। ফের আন্দোলনকারীদের দখলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সকাল সকাল এ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সারা বাংলাদেশে। ক্যাম্পাস থেকে ক্যাম্পাস। তারুণ্যের প্রতিবাদ। বড় বড় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই যোগ দিয়েছেন এ বিক্ষোভে। ক্ষমতাসীনদের টানা প্রায় দশ বছরের মেয়াদে এমন ঘটনা আর ঘটেনি। বিকালে আন্দোলনকারীদের ডাক পড়ে সচিবালয়ে। তাদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বসেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে নেতারা। বৈঠক শেষে উভয়পক্ষ থেকে বলা হয়, কোটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসান মামুন এক মাসের জন্য কর্মসূচি স্থগিতের কথা জানান। কিন্তু রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা সেটা মানতে নারাজ। রাতে এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করছিলেন তারা।
পরীক্ষা-নিরীক্ষার আশ্বাসে আন্দোলন ৭ই মে পর্যন্ত স্থগিতের ঘোষণা বৈঠককারীদের: বিকালে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে সরকারের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সচিবালয়ে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আন্দোলনকারীদের প্রায় পৌনে ২ ঘণ্টা বৈঠকের পর কোটা পদ্ধতি পরীক্ষা-নিরীক্ষার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। বৈঠক শেষে সরকার পক্ষের নেতৃত্বদানকারী সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকার রিজিট অবস্থানে নেই। আমি তাদের আশ্বস্ত করেছি। তাদের দাবির যৌক্তিকতা আমরা ইতিবাচক ভাবেই দেখবো। মে মাসের ৭ তারিখের মধ্যে সরকার রিভিউ বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। রেজাল্ট কী আসে আমরা সেটা জানিয়ে দেবো। তারা কথা দিয়েছেন, ওই পর্যন্ত তারা তাদের চলমান আন্দোলন স্থগিত রাখবেন। ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন কোটা সংস্কারের বিষয়টি আমলে নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, কোটাব্যবস্থা সংস্কারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যৌক্তিক সংস্কার করার জন্য জনপ্রশাসন সচিবকে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। এ সংস্কার আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ছাত্রছাত্রীদের জানিয়ে দেয়া হবে। তাই আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এ আন্দোলন স্থগিত করা হলো। কোটা সংস্কারের বিষয়টি আমলে নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। আটক ও আহতদের সম্পর্কে তিনি বলেন এখন পর্যন্ত আমার যে ভাইবোনেরা গ্রেপ্তার হয়েছেন সকলকে নিঃশর্তভাবে মুক্তি দিতে হবে।
পাশাপাশি যারা আহত হয়েছেন তদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রোববার রাতে সংঘাত চলাকালে উপাচার্যের বাসভবনে তাণ্ডবের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের ‘শাস্তি পেতে হবে’ বলে সভা শেষে জানিয়ে দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আমি ব্রাইট অ্যান্ড ব্রিলিয়ান্ট তরুণদের কাছে জানতে চেয়েছি, কোটা সংস্কারের সঙ্গে ভিসি কীভাবে জড়িত? তিনি আর তার পরিবার কেন আক্রান্ত হবে?... তারা একমত। তারা বলেছে, এর মধ্যে অনুপ্রবেশকারী বহিরাগত সন্ত্রাসী থাকতে পারে। আমি পুলিশ কমিশনারকে বলেছি, নিরীহ কাউকে যেন ধরা না হয়। ভিডিও ফুটেজ দেখে এ কাজটি করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদিন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কনফারেন্স রুমে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে এ বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব- উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এনামুল হক শামীম, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, মুক্তযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এস এম কামাল হোসেন, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে মামুনের নেতৃত্বে বৈঠকে পরিষদের ২০ সদস্যের মধ্যে কানিজ ফাতেমা, আফসানা সাফা, একরামুল হক, আল ইমরান হোসাইন, লীনা মিত্র, আরজিনা হাসান, লুবনা জাহান প্রমুখ ছিলেন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সরকার পক্ষের সঙ্গে বৈঠকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে পাঁচ জন বক্তব্য রাখেন। তারা কোটা পদ্ধতি কেন সংস্কার করা হবে তার যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। এর বিপরীতে সরকার পক্ষের প্রতিনিধিরা চুপচাপ ছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের মধ্যে ওবায়দুল কাদের আন্দোলনকারীদের বুঝানোর চেষ্টা করেন। সাংবাদিকদের কাছে লিফলেট দেন আন্দোলনকারীরা। ওই লিফলেটে তাদের পাঁচ দফা দাবির কথা উল্লেখ করা হয়। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে কোটা ব্যবস্থা সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা, কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ না দেয়া, চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহারের সুযোগ না দেয়া, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন কাট মার্কস ও বয়সসীমা নির্ধারণ করা ও কোটায় যোগ্যপ্রার্থী পাওয়া না গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধায় নিয়োগ দেয়া।
আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা: সচিবালয়ে বৈঠকের পর সন্ধ্যা সাতটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য এলাকায় শিক্ষার্থীদের অবস্থানে ফিরে আসেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। আহ্বায়ক হাসান আল মামুন এসময় আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে বৈঠকের সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী এই মাসে দুইবার বিদেশ সফরে যাবেন। যে কারণে আগামী মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত থাকবে। তখন শিক্ষার্থীরা মানি না, মানি না বলে চিৎকার করতে থাকেন। তখন মামুন বলেন, আমরা পরিস্থিতির  প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরে বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা ও বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়ে  বৈঠকে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে চলে যান। রাত আটটার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বাংলা একাডেমির সামনে অবস্থান নেয়। পাশেই তিন নেতার মাজার এলাকায় ছিল পুলিশের অবস্থান। শিক্ষার্থীদের অন্য অংশ রোকেয়া হলের সামনে অবস্থান নেয়। বিপরীত পাশে লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগের  নেতাকর্মীরা।
দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক দফায় ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীরা রাতে দফায় দফায় টিএসসি এলাকায় মিছিল করেন। তাদের হাতে লাঠিসোটাও দেখা যায়। আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে রাতে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করে। রাতে আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দেন সরকারের তরফে দিন তারিখ দিয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে আন্দোলন থামানো যাবে না। আন্দোলনকারীদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। এদিকে রাত সাড়ে ৯টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি ঘোষণা করে অবস্থান ছেড়ে দেন। তারা আগের কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে নতুন আহ্বায়কের নাম ঘোষণা করেন। তারা জানান, এখন সাধারণ শিক্ষার্থী বিপাশা চৌধুরী কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করবেন। আজ রাজু ভাস্কর্যের পাশে অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি দাবি মানা না হলে ১৬ই এপ্রিল ‘ঢাকা চলো’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন।
বিক্ষোভে উত্তাল দেশ: কোটা সংস্কারের দাবিতে গতকালও উত্তাল ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন স্থানে সড়ক- মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এতে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হয়। রাতভর সংঘর্ষ, বিক্ষোভের পর গতকাল ভোর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে উপস্থিতি। বেলা পৌনে ১১টার দিকে শাহবাগ মোড়ে দেখা যায়, ব্যাপক সংখ্যক র‌্যাব-পুলিশের সতর্ক উপস্থিতি। প্রস্তুত দাঙ্গা পুলিশ। সঙ্গে জলকামান ও সাঁজোয়া যান। অপেক্ষমাণ বেশকিছু পুলিশ ভ্যান। র‌্যাবের গাড়ি। তাদের একটা অংশ যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে ব্যস্ত। আর বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন দিক থেকে শিক্ষার্থীরা পায়ে হেঁটে ক্যাম্পাসের দিকে এগুতে থাকেন। বেলা ১১টার দিকে ঢাবির টিএসসি মোড়ে দেখা যায়, সেখানেও ব্যাপক পুলিশ সদস্যদের জমায়েত।
সঙ্গে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁজোয়া যান। বেলা ১১টার পর সহস্রাধিক আন্দোলনকারী বিক্ষোভ শুরু করে। বেলা পৌনে ১২টার দিকে শিক্ষার্থীদের মিছিলটি শাহবাগের দিকে যাত্রা শুরু করে। তখন তাদের স্লোগান ছিল ‘কোটা কোটা, সংস্কার সংস্কার। আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেবো না।’ মিছিলটি ১১টা ৫০ মিনিটে পৌঁছে শাহবাগ মোড়ের কাছে। শাহবাগ থানার প্রধান ফটকের কাছে রাস্তায় আগে থেকে পুলিশ সদস্যরা পথ আগলে দাঁড়ান। পুলিশি বাধার মুখে পড়ে মিছিলটি আবার ক্যাম্পাসের দিকে ফিরে আসে। সেখান থেকে টিএসসি মোড়ে রাজু ভাস্কর্যের পাশ দিয়ে দোয়েল চত্বরের দিকে এগোতে থাকে। দোয়েল চত্বর হয়ে প্রবেশ করে ঢাবির ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে। সামনে দিয়ে প্রবেশ করে অপর পাশ দিয়ে বের হয়ে আবার দোয়েল চত্বর হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে যায়। সেখান থেকে পলাশী মোড় হয়ে যায় আজিমপুর মোড়ে। এরপর নীলক্ষেত মোড় হয়ে আবার শাহবাগ মোড়ে। এ সময় মিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের সামনে দিয়ে যায়।
পরে আবার গিয়ে পৌঁছে শাহবাগ মোড়ে। শাহবাগ মোড় অতিক্রম করে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের একটি অংশ আবার টিএসসির সামনে রাজু ভাস্কর্যের সামনে হাজির হয়। বিক্ষোভ করতে থাকে। তখনও তাদের অপর একটি ছোট অংশ শাহবাগ মোড়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। পুলিশ তাদের ঘিরে রাখে। পুলিশ বেষ্টনীর মধ্যে তারা বেশ কিছুক্ষণ মিছিল-স্লোগান দেয়। দুপুর সোয়া ১টার পর তারাও গিয়ে আবার টিএসসিতে যোগ দেয়। টিএসসিতে আগে থেকেই পুলিশের অবস্থান ছিল। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের বচসা হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা পুলিশ যাতে সরে যায় সেজন্য বিক্ষোভ করতে থাকে। পরে পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছোঁড়া হলে টিএসসি এলাকা ছাড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বিক্ষোভের মুখে পুলিশ সেখান থেকে দূরে সরে যায়। রাজু ভাস্কর্যের মোড়ে চলতে থাকে শিক্ষার্থীদের স্লোগান। বেলা ২টার পর বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে বেশ কিছু ছাত্রী সমাবেশে যোগ দেন।
এদিকে বেলা দু’টার পর আন্দোলনকারীদের এক প্রতিনিধি দল সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। অন্যদিকে তারা না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের সঙ্গে সংযুক্ত চারটি সড়কে ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষার্থীদের অবস্থান।
আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. রাশেদ খান মানবজমিনকে বলেন, ৯০ ভাগ শিক্ষার্থীর দাবি হলো কোটা বাতিল করা। আমরা অহিংস পদ্ধতিতে সে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। গত রোববার পর্যন্ত আমরা ৬টি কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করি। আমরা রোববার শাহবাগে অবস্থান নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে আমাদের মেসেজটি পৌঁছাতে চেয়েছি। কিন্তু প্রথম থেকে আমাদের ন্যায্য আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে ষড়যন্ত্রকারীরা গত রাতে ভিসি চত্বরে গিয়ে আগুন দেয় ও ভাঙচুর করে।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক নুরুল হক বলেন, রোববার আন্দোলনে গণপদযাত্রার অংশ হিসেবে আমরা শাহবাগে অবস্থান নিই। কিন্তু রাতে পুলিশ আমাদের ওপর হামলা চালায়। গুলি, টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এতে ২১৭ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এর মধ্যে ৪০ জন ছাত্রী। পুলিশি হামলা থেকে আত্মরক্ষার্থে শিক্ষার্থীরা ঢাবির বিভিন্ন স্থাপনা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে পড়ে। সেখানে ঢুকে তাদেরকে মারধর করেছে পুলিশ। অথচ আমাদের দেশের ৯৫ ভাগ মানুষের সমর্থন আছে কোটাবিরোধী এই আন্দোলনে। 
চিকিৎসা নিয়েছেন আহত ১৮০ শিক্ষার্থী: গত রোববার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরতদের ওপর পুলিশের হামলায় ২১৭ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয় ১৬৩ শিক্ষার্থীকে। গতকাল বিকাল নাগাদ তাদের মধ্যে ১৬২ জনই চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছাড়েন। তাদের আঘাত ছিল হালকা ও মাঝারি। তাদের সবাই ভালো আছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ডা. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন। আহতদের মধ্যে বাকি দু’জন আসিকুর রহমান ও সাকিল ঢামেকে জরুরি বিভাগের ক্যাজুয়ালিটি ইউনিটে পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। তাদের অবস্থাও গুরুতর নয় বলে জানা গেছে।
তাদের একজনকে সোমবার ও অন্যজনকে মঙ্গলবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া হতে পারে। আহতদের ম?ধ্যে আরো ১৭ জনকে নেয়া হয় ঢাকা বিশ্ব?বিদ্যালয় হাসপাতালে। তবে হালকাভাবে আহত ৩৮ জনকে হলে তাদের কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। নিজেদের ব্যবস্থায় তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আহত মো. আবুবকর ছিদ্দিকের চোখে রাবার বুলেট লেগেছে। তিনি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এরপর হলে চলে যান বলে জানান আন্দোলনরত শিক্ষার্থী সোহেল রহমান।
এদিকে সকাল সাড়ে ১১টায় পরিসংখ্যান বিভাগ ও শহিদ মিনারের সামনে মৌন মিছিল ও মানববন্ধন করে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, রোববার রাতে পুলিশ ক্যাম্পাসের মধ্যে প্রবেশ করে নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর যে বর্বর নির্যাতন চালিয়েছে তার প্রতিবাদ জানাতেই মৌন মিছিল করছি। এ সময় মুজাহিদ নামে এক শিক্ষার্থী জানায় ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের দুই শিক্ষার্থী রাকিবের মাথায় রাবার বুলেট ও সালামের চোখসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে অসংখ্য রাবার বুলেট বিদ্ধ হয়। তারা দুজনেই ক্যাম্পাসের ভেতরে ছিল, হঠাৎ করে পুলিশ তাদের ওপর টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। আহত শিক্ষার্থীদের প্রতি নির্যাতনের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা শান্তিপূর্ণ এই আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মো. ফজলুল হক বলেন, পড়াশোনা শেষ করে একজন শিক্ষার্থীর বেকার জীবনযাপন করাটা কি যে দুর্বিষহ সেটা শুধুমাত্র একজন শিক্ষিত বেকার ছেলে বা মেয়েই জানে। আমরা তো কোনো গাড়ি ভাঙচুর করিনি। রোববার দুপুর তিনটা থেকে আমরা গণপদযাত্রা শুরু করি। পুলিশ হঠাৎ করেই নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়ে রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস ও লাঠিচার্জ করে। এর আগেও আমরা প্রায় ৪-৫ বার শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেছি। প্রতিবারই সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক আশ্বাস পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম।
আহত অশ্বিনী কুমার পাল বলেন, ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্ট থেকে এমবিএ করছি। গতকাল রাতে আন্দোলনে অংশ নিলেও কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুলিশের লাঠির আঘাতে আমার মাথা ফেটে যায়। পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন অংশে পুলিশের লাঠিচার্জের আঘাত রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই কোটাধারী আর কোটাবিহীন কোনো বৈষম্য না রেখে সবার জন্য সমান ব্যবস্থা করা হোক।
সোমবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সকল ক্লাস বর্জন করেছে শিক্ষার্থীরা। ক্লাস বর্জনের পাশাপাশি নগরীর ষোলশহর এলাকায় জড়ো হয়ে শাটল ট্রেন অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন বলেও জানিয়েছেন আন্দোলনকারী ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ওয়াহেদ আনোয়ার। তিনি জানান, ক্লাস বর্জনের কারণে ক্লাসরুমগুলো খালি ছিল। ক্যামপাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কম ছিল। তবে সব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীরা নগরীর ষোলশহর রেলস্টেশন এলাকায় সমবেত হয়ে আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন বলে জানান তিনি। ষোলশহর রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জাকির হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আন্দোলনরত প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী কোটা সংস্কার দাবিতে শাটল ট্রেন অবরোধ করে রাখে। সকালের সব ট্রেন ছেড়ে গেলেও অবরোধের কারণে সকাল ১০টা ৪০ মিনিটের বিশ্ববিদ্যালয়গামী ট্রেনটি ষোলশহর স্টেশনে অবস্থান করে। তিনি জানান, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ষোলশহর রেল স্টেশন ও চবির ক্যাম্পাসে বিপুল পরিমাণ পুলিশ সতর্ক অবস্থানের রয়েছে। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলে জানান তিনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মহসিন মজুমদার বলেন, পাবলিক লাইব্রেরির সামনে কয়েকটা মিছিল দেখেছি। অপ্রীতিকর কিছুই ঘটেনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আলী আজগর চৌধুরী বলেন, সব বিভাগে ক্লাস বর্জন হয়নি। অনেকগুলো ক্লাস ও পরীক্ষা হয়েছে। কিছু শিক্ষার্থী ক্যামপাসে মিছিল করছে।
কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে খুলনায় শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে। রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ৮টা থেকে মহানগরীর জিরো পয়েন্টে সড়ক অবরোধ করে রাখে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের খুলনা জেলা শাখা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট), সরকারি বিএল কলেজসহ সরকারি-বেসরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা এতে অংশগ্রহণ করে। শিক্ষার্থীরা হঠাৎ সড়ক অবরোধ করলে খুলনা-ঢাকা, খুলনা-সাতক্ষীরা, খুলনা-যশোর, খুলনা-বাগেরহাট, খুলনা-মংলা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
কোটা সংস্কার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে কুমিল্লা নগরী। সোমবার নগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে নগরীর কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। এ সময় তারা কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনে ঢাকাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানায়। পরে শিক্ষার্থীরা কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি দাখিল করে। পাঁচ দফা দাবিতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ কুমিল্লা জেলা শাখার ব্যানারে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে যাচ্ছে। দুপুরে সংগঠনের প্রতিনিধি দল কুমিল্লা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দাখিল করে। এরপর শিক্ষার্থীরা কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে অবস্থান নিয়ে দাবি আদায়ে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এ সময় আন্দোলনকারীরা ঢাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার বিচার দাবি করেন। শিক্ষার্থীরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা অহিংস আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। দুপুর আড়াইটার দিকে পুলিশের কড়া পাহারায় শিক্ষার্থীরা নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল করে এবং পূবালী চত্বরে কয়েক শ’ শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।
কোটা সংস্কারসহ পাঁচ দফা দাবিতে দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে দিনাজপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেছে। সোমবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টাব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দিনাজপুর-দশমাইল মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। এতে দিনাজপুরের সঙ্গে ঢাকাসহ উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়ায় কোনো  বিভাগে ক্লাস কয়েকটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি সোমবার। এর আগে রোববার বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এর আগে শিক্ষার্থীরা দলে দলে মিছিল নিয়ে অবরোধে যোগ দেয়। অবরোধ চলাকালে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে দুপুর একটার দিকে সড়ক অবরোধ তুলে নেয়া হয়।
কোটা সংস্কার এবং পাঁচ দফা দাবিতে সারা দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো  ইবিতেও ক্লাস বর্জন করেছে শিক্ষার্থীরা। সকাল দশটায় আন্দোলনকারীরা মীর মশাররফ হোসেন একাডেমিক ভবন থেকে মিছিল করে। তারা প্রধান ফটক অতিক্রম করে মহাসড়কে উঠতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরা বাধা দেয়। পরে মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিবের সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় প্রধান ফটকের বাইরে পুলিশকে বাড়তি নিরাপত্তায় সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে।
কোটা সংস্কার করে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনাসহ পাঁচ দফা দাবিতে ক্লাস বর্জন ফের মহাসড়ক অবরোধ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। সোমবার সকাল ১০টা থেকে এ প্রতিবেদন লিখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের প্রবেশপথগুলোতে অবস্থান নেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় কোনো শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কক্ষে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। এরপর সোয়া ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হতে থাকেন তারা। সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বিভিন্ন একাডেমিক ভবনের সামনে দিয়ে চারুকলা অনুষদে যায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা দলে দলে মিছিলে যোগ দিতে থাকেন। পরে মিছিলটি স্টেশন বাজার দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। আন্দোলনের সমন্বয়ক মাসুদ মুন্নাফ বলেন, ‘আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ ক্লাস বর্জন করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছি। দাবি না আদায় হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে ক্যাম্পাসের ভেতরেই কর্মসূচি পালন করা হবে।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারসহ পাঁচ দফা দাবিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা। সোমবার সকাল ১১টায় সড়ক অবরোধ করে মডার্ন মোড়ে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ কমিটির ব্যানারে প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এ সময় ঢাকার সঙ্গে  উত্তরাঞ্চলের সাতটি জেলার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন একাডেমিক ভবনের প্রবেশ পথে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়ায় কোনো বিভাগে ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়নি। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও রংপুর বিভাগীয় কমিটির সমন্বয়ক ওয়াদুদ সাদমান বলেন, ‘আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ ক্লাস বর্জন করা হয়েছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করছি। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে। এর আগে রোববার বিকাল ৪টা থেকে ৮টা এবং রাত দেড়টায় দুই দফা মহসড়ক অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে সোমবার বিকাল ৪টা থেকে নারায়ণগঞ্জে চাষাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হতে থাকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কারের দাবিতে প্ল্যাকার্ডে বিভিন্ন স্লোগান লিখে প্রতিবাদ জানায় তারা। শহীদ মিনারে  সমাবেশের পূর্বে চাষাড়ায় গণসংযোগে নামেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বেশ কিছু সাধারণ শিক্ষার্থী তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে। সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি তোলারাম কলেজ, নারায়ণগঞ্জ কলেজ, কদম রসুল কলেজ, হাজি মিছির আলী কলেজ সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিল। এদিকে বর্তমানে প্রচলিত কোটা প্রথা সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর রাষ্ট্রীয় জুলুম বলে আখ্যা দিয়েছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা নারায়ণগঞ্জ জেলার নেতৃবৃন্দ। প্রচলিত কোটা প্রথা সংস্কারের দাবিতে ও এ দাবির পক্ষে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে রোববার বিকালে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র সেনা নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখা।
বাকৃবিতে সোমবার সকাল থেকেই সকল ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চত্বরে জমা হতে থাকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সেখানে তারা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন নিয়ে কোটা সংস্কারের পক্ষে স্লোগান দিতে থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। পরে সকাল ১০টার দিকে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি বঙ্গবন্ধু চত্বর থেকে শুরু হয়ে অনুষদীয় করিডোর ও প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে মুক্তমঞ্চের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এরপর সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরের রেললাইন অবরোধের ঘোষণা দেয় শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ঢাকা-ময়মনসিংহগামী রেল যোগাযোগ বন্ধ করে দেন শিক্ষার্থীরা। পরে ময়মনসিংহ পুলিশ প্রশাসন এসে শিক্ষার্থীদের বুঝানোর চেষ্টা করে। শিক্ষার্থীদের বুঝাতে ব্যর্থ হলে দুপুর ২টার দিকে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার মো. আল-আমিনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টাসহ প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে। এ সময় শিক্ষার্থীরা  দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থানের সিদ্ধান্ত জানায়। পরে প্রশাসন চলে যায়। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রেল-লাইন অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছে।
মঙ্গলবার বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজে তাদের নিয়মিত কর্মসূচি পালনের জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীরা জড়ো হলে পুলিশ তাদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি এবং হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের বলা হয়েছে কোনোভাবে যদি কেউ রাস্তায় নামে তাহলে তাদের পা ভেঙে ফেলা হবে। ফলে পুলিশের ভয়ে তারা ক্যাম্পাসের বাইরে যেতে পারেনি। স্বল্প পরিসরে তারা ক্যাম্পাসের মধ্যেই বিক্ষোভ করেছে। মঙ্গলবারের বিক্ষোভে তারা তাদের পূর্বের দাবি মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। সেই সঙ্গে রোববার আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশি হামলার তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে নেতারা।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশি নির্যাতনের ঘটনায় দিনব্যাপী ছাত্র ধর্মঘটে সমর্থন দিয়ে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। সোমবার ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে সকাল থেকেই প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। স্লোগান এবং বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক।  ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকাল সাতটা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান করে আন্দোলন করেছে শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। বাসগুলোকে শিক্ষার্থীদের না নিয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে দেখা যায়। এ ছাড়া, দুপুর দেড়টার দিকে কয়েক সহস্রাধিক শিক্ষার্থী প্রধান ফটক থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে আবার ফটকে ফিরে গিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে শেষ করে। এদিকে সোমবার সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ শাবি ইউনিটের আহ্বায়ক মো. নাসির উদ্দিনকে শাখা ছাত্রলীগ কর্তৃক আটকে রাখার অভিযোগ ওঠে। আটকের বিষয় অস্বীকার করে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান খান বলেন, তাকে আটকে রাখা হয়নি। আমরা তার সঙ্গে আন্দোলন নিয়ে কথা বলেছিলাম। পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
কোটা পদ্ধতি সংস্কারসহ পাঁচ দফা দাবি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার চেয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে। সোমবার সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সড়ক অবরোধ করায় বরিশাল পটুয়াখালী সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গত দুই ঘণ্টা ধরে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি চললেও বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে শুরু করে বিএম কলেজ শিক্ষার্থীরা। একইভাবে পবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে। বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন বলেন, সকাল সাড়ে ৯টার পর থেকেই কীর্তনখোলা নদীর ওপরে শহীদ আব্দুর রব সেনিয়াবাত সেতু সংলগ্ন বিশ্ব বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তায় শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়। আর তখন থেকেই চলছে তাদের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ। এতে করে রাস্তার দুই প্রান্তে অসংখ্য যানবাহন আটকে রয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।
কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সমর্থন এবং গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির দাবিতে গতকাল সন্ধ্যায় মৌলভীবাজারে প্রায় হাজারখানেক সাধারণ শিক্ষার্থী শহরে মশাল হাতে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এই সময় কোটাবিরোধী স্লোগান দেয় তারা। বিক্ষোভ মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক ঘুরে চৌমোহনা চত্বরে সমাবেশ করে। এই সময় বক্তব্য রাখেন ছাত্র ইউনিয়নের মৌলভীবাজার জেলা সংসদের সভাপতি প্রশান্ত দেব, মৌলভীবাজার কলেজ সংসদের সুভিনয় শুভ এবং অর্থনীতি বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এম এ সামাদ প্রমুখ। এই সমাবেশ থেকে আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় মৌলভীবাজারে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা কোটা পদ্ধতির সংস্কার দাবিতে বরিশাল-বাউফল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে তারা মহাসড়ক অবরোধ করলে বরিশাল থেকে বাউফল, দশমিনা ও  দুমকিতে সড়কপথে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কোটা পদ্ধতির সংস্কার দাবিতে শিক্ষার্থীরা প্ল্যাকার্ড ফেস্টুন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম গেটের সামনে অবস্থান করে স্লোগান দেয়। পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম গেটে এসে শেষ হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় তারা রাস্তার ওপর আগুন জ্বালিয়ে ও আড়াআড়িভাবে ট্রাক রেখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সড়ক অবরোধ করে রাখে। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে দুই ঘণ্টা পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অবরোধ তুলে নেয় শিক্ষার্থীরা।
কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে ও পাঁচ দফা দাবিতে কক্সবাজারের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছেন। সোমবার (৯ই এপ্রিল) দুপুর ৩টায় শহরের কলাতলীর মোড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অংশ নেন।
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সোমবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন তারা। এতে গুলিস্তান থেকে সদরঘাট ও মাওয়া রোডে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে কোটা সংস্কারের দাবি সম্বলিত বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রায়সাহেব বাজার মোড়ে জড়ো হতে থাকে তারা। যৌক্তিক দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা সংস্কার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হামলার প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা সোমবার ক্যাম্পাস সংলগ্ন ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে। এদিন সকাল ১০টা থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে এক কিলোমিটার দূরে ঢাকা খুলনা মহাসড়কে অবস্থান নেন। মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনকারীরা ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘পিতা তুমি ফিরে এসো, বৈষম্য দূর করো’সহ নানা স্লোগান দেন। অবরোধের জন্য মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মহাসড়কের দু’পাশে কয়েক কিলোমিটার অংশে যানজটের সৃষ্টি হয়।
কোটাব্যবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে বর্তমান কোটাব্যবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে নিয়মিত এজেন্ডা সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। এরপর কোটা সংস্কারের বিষয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কোটা নিয়ে আসলে তো কোনো সমস্যা নেই। এখন যে কোটাব্যবস্থা এক্সিসটিং (বহাল) রয়েছে সেখানে মেধা কোটা ৪৫ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ, নারী কোটা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কোটা ৫ শতাংশ, ক্ষেত্রবিশেষে জেলা কোটা ১০ শতাংশ, ক্ষেত্রবিশেষে প্রতিবন্ধী কোটা ১ শতাংশ। তিনি বলেন, মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত দিয়েছিল, মুক্তিযোদ্ধা বা অন্যান্য কোটাগুলো যদি পূরণ করা সম্ভব না হয় তবে তা মেধাতালিকার শীর্ষে অবস্থানকারী প্রার্থীদের দিয়ে পূরণ করতে হবে। সেটা পূরণ করা হয়েছে। ৩৩তম বিসিএসে মেধা কোটায় পূর্ণ হয়েছে ৭৭ দশমিক ৪০ শতাংশ, ৩৫তম বিসিএসে ৬৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ মেধা তালিকা থেকে এসেছে। ৩৬তম বিসিএসে ৭০ দশমিক ৩৮ শতাংশ মেধা কোটায় নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি বলেন, কোটার মাধ্যমে মেধা অবহেলিত হয়নি। কোটার ক্ষেত্রেও যারা মেধাতালিকায় ভালো তারা আসছেন। এমন না যে, মেধাতালিকায় যারা আছেন তারা অবহেলিত আছেন, পেছনে পড়ে যাচ্ছেন। কোটার দ্বারা কারও মেধা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। বিভিন্ন কোটায় প্রার্থী পাওয়া যায় না, তাহলে কোটা সংস্কারে সমস্যা কোথায় জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যেটা মডিফাই করা হয়েছে অর্থাৎ পদ পাওয়া না গেলে মেধাতালিকার শীর্ষে যারা আছেন তাদের দিয়ে পূরণ করা হবে। এটাই তো একটা সংস্কার। কোটা হচ্ছে একটা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা।
এর মাধ্যমে অনগ্রসর যারা আছেন তাদের সামনে আনা হয়। মন্ত্রিসভার বৈঠকে কোটার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যা আলোচনা হয়েছে তা জানিয়েছি তো। কোটার কারণে যারা মেধাবী তারা খুব বেশি বঞ্চিত হয়নি। আপনাদের তো তিনটা বিসিএসের রেজাল্ট দিয়ে দিলাম। কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধাতালিকা থেকে তা পূরণের সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভা দিলেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত ব্যাখ্যায় জানিয়েছে, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদের ক্ষেত্রে কোনো কোটা পূরণ না হলে অন্যান্য কোটা দিয়ে পূরণ করতে হবে। এ জন্য আন্দোলন হচ্ছে। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশটি আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবো। কোটা সংস্কারের বিষয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে শফিউল আলম বলেন, না মন্ত্রিসভা বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয় আছে। অনির্ধারিত আলোচনা তো এরকম কিছু হয়ই। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হলো এটার স্টেক হোল্ডার। তারা এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবে। দেখে অবহিত করবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এ ক্ষেত্রে তিনি কোনো নির্দেশনা দিয়েছেন কিনা- জানতে চাইলে শফিউল আলম বলেন, ইনফরমাল আলোচনা তো, ইনফরমালভাবেই...ধরেন...।

No comments

Powered by Blogger.