খাল খনন থেকে সরে এলো চসিক

চট্টগ্রামের দুঃখ ৫৭ খাল। জলাবদ্ধতার জন্য মূলত দায়ী এসব খাল। তবে দুঃখ-যন্ত্রণা লাঘবে এবার বর্ষার আগেই এসব খাল খনন শুরু করেছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। কিন্তু দু’মাস না যেতেই হঠাৎ খাল খনন কিংবা খালের আবর্জনা-মাটি উত্তোলন থেকে সরে এলো চসিক। ফলে আগামী বর্ষায় চট্টগ্রামে আবারও উঁকি মারছে জলাবদ্ধতা। এমন শঙ্কা নগরবাসীর। নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা কল্যাণ সমিতির সভাপতি জিয়াউদ্দিন বলেন, খাল খনন শুরু করায় নগরীর মানুষ জলাবদ্ধতা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তির আশা করেছিল। কিন্তু হঠাৎ খাল খনন বন্ধ করায় এখন সেই আশা হতাশায় পরিণত হয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) খাল খনন ও সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ায় চসিক তাদের নির্ধারিত এই কাজ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। তাই একই কাজ কর্পোরেশনের করার কোনো সুযোগ নেই। যদি কাজ করে তখন নিরীক্ষা আপত্তি আসতে পারে। তাই খাল খনন থেকে সরে এলো চসিক। এদিকে খাল খনন থেকে সরে আসায় হতাশা প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)-এর প্রধান প্রকৌশলী জসীম উদ্দিন। তিনি বলেন, খাল ও ড্রেন পরিষ্কার রাখা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নিয়মিত কাজের অংশ। চসিকের খাল ও ড্রেন পরিষ্কার খাতে সিডিএর প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ সম্পর্কিত নয়। তবুও এ প্রকল্পে সিটি কর্পোরেশনকে সমন্বয়ের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন তা না মেনে খাল খনন বন্ধ করে দেয়।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন অন্য কথা। তিনি বলেন, খাল খনন কার্যক্রম চলমান রাখলে সিডিএর প্রকল্পের আওতায় তার ব্যয় পরিশোধ করা হবে কি না জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু তারা বলেছে প্রকল্পের ডিপিপিতে কোনো টাকা বরাদ্দ নেই। কিন্তু আমাদের কাছে যে বই আছে সেখানে দেখেছি ১০০ কোটি বরাদ্দ আছে। তিনি বলেন, খাল খননের বরাদ্দ পেয়েছে সিডিএ। তাই খাল খনন করবে তারা। আমরা শহরের মধ্যে যেসব ড্রেন আছে সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করব। শতভাগ ক্লিয়ার করব। ড্রেনগুলো পরিষ্কার না থাকলে তো পানি যাবে না। রাস্তায় পানি উঠে যাবে। তাই আমরা নাগরিকদের সুবিধার্থে ড্রেনগুলো পরিষ্কার রাখবো। তিনি বলেন, মুষলধারে বৃষ্টি হলে পাহাড় থেকে বালি এসে ড্রেনগুলো ভরাট হয়ে যায়। ওই ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা যাতে বৃষ্টির মধ্যেও ড্রেনগুলো পরিষ্কার রাখতে পারে সেজন্য তাদের রেইনকোট দিব। এ ব্যাপারে চউক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, গৃহীত মেগাপ্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া গেছে। খুব শিগগিরই সেনাবাহিনীর সঙ্গে এমওইউ করা হবে। এরপর ৫৭ খালের মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আগামী বর্ষার আগেই ৩৬ খালের খনন কার্যক্রম শুরু করা হবে।
সিডিএর মেগা প্রকল্পে যা আছে : গত ৬ই মার্চ সিডিএর গৃহীত মেগা প্রকল্পটির চূড়ান্ত অনুমোদন বা জিও দেয় একনেক। জিও-তে বলা হয়েছে, ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকায় প্রকল্পটি সমপূর্ণ জিওবি (বাংলাদেশ সরকারের ফান্ড) অর্থায়নে বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পের মেয়াদকাল হচ্ছে ২০১৭ সালের ১লা জুলাই থেকে ২০২০ সালের ৩০শে জুন পর্যন্ত।
প্রকল্পের আওতায় খালের পাড়ে ৮৫ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ, ৬ হাজার ৫১৬ কাঠা ভূমি অধিগ্রহণ, খাল থেকে ৪ লাখ ২০ হাজার ঘনমিটার কাদা অপসারণ, ৫ লাখ ২৮ হাজার ২১৪ ঘনমিটার মাটি খনন, ১ লাখ ৭৬ হাজার মিটার আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, বন্যার পানি সংরক্ষণে ৩টি জলাধার, ৬টি আরসিসি কালভার্ট, ১২টি পামপ, ৪২টি সিল্ট ট্রাপ স্থাপন। এছাড়া টাইডাল রেগুলেটর ও ড্রেন কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। চলতি ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে প্রকল্পটির আওতায় ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দে সম্মতি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে খাল খননে বরাদ্দ রয়েছে ১০০ কোটি টাকা।

No comments

Powered by Blogger.