মন ছুঁয়ে যায় সোনালী চেলার মোহনায় by মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী

সোনালী চেলা নদীর মোহনা। বর্ষায় উত্তাল তরঙ্গ আর শুষ্ক মৌসুমে চারদিকে বিশাল চর। এ যেন নদী নয় ধু-ধু মরুভূমি। উত্তরে দাঁড়িয়ে আছে ভারতের সুউচ্চ কালো পাহাড়। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ওই নদী দোয়ারাবাজার উপজেলার বুক চিরে ছাতক উপজেলার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সুরমা নদীতে গিয়ে মিলিত হয়েছে। পড়ন্ত বিকালে সোনালী চেলার মোহনার নয়নাভিরাম দৃশ্য পর্যটকদের আরো প্রাণবন্ত করে তোলে। জমিদার আমলে ওই নদীর তীরে ছোট-বড় টিলায় প্রচুর কমলা লেবু চাষাবাদ হতো। কালের বিবর্তনে কমলা লেবুর চাষ ও বাগানের বিলুপ্তি ঘটে। শীত মৌসুমে বালির চরে গজে উঠে কাশফুলের বাগান। উত্তরের পাহাড়ি উত্তাল হাওয়ায় কাশফুলের দোলনায় মন ছুঁইয়ে যায় এখানে আসা পর্যকদের।
ভোরে দুই দেশের সীমান্ত ওই এলাকায় পাহাড়ি পাখ-পাখালির কিচির মিচির শব্দ আর বারকী নৌকার লগি-বৈঠার আওয়াজে এখানকার বাসিন্দাদের ঘুম ভাঙে। সারি সারি বারকী নৌকার যাওয়া-আসার দৃশ্য পর্যটকদের নজর কাড়ে। প্রতিনিয়ত ওই নদী দিয়ে শত শত বারকী নৌকায় করে ভারত থেকে আনা হয় চুনা পাথর। আমদানীকৃত চুনাপাথর দিয়ে ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড এর সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া ওই সব চুনাপাথর দিয়ে ছাতকের বিভিন্ন চুল্লিতে (কোম্পানি) উৎপাদিত হয় চুন। সোনানী চেলায় বারকী নৌকা চলাচল শুরু হয় সম্ভবত ব্রিটিশ আমলে। বারক লি নামক জনৈক ইংরেজ ব্যক্তি এখানকার প্রতিষ্ঠিত এক ব্যবসায়ী সর্বপ্রথম ভারতের পাহাড় থেকে চুনাপাথর এনে সুরমা নদীর পাড়ে সিমেন্ট তৈরিসহ একাধিক চুল্লি প্রতিষ্ঠিত করে চুন তৈরি করতেন। সেই থেকে আজ অবধি ওই নদী দিয়ে বারকী নৌকায় পরিবহন করা হয় চুনাপাথর।
সোনালী চেলায় শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর কমে গেলে স্থানীয়রা নুড়ি কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। এছাড়া ভোর হতে মধ্যরাত পর্যন্ত নদীতে শখের বশে মাছ আহরণ করেন স্থানীয়রা। বর্ষায় প্রচণ্ড শ্রোত প্রবহমান থাকে সোনালী চেলায়। উভয় তীরে নদী ভাঙন ও শুষ্ক মৌসুমে বালি ও পলিমাটি ভরাট হয়ে চর গজে উঠায় নাব্য সংকটে রয়েছে ওই নদী।
সোনালী চেলার উভয় তীরে নদী ভাঙনরোধে কার্যকর পদক্ষেপ ও খনন করা হলে দু’দেশের একেবারে জিরো পয়েন্টের সোনালী চেলার মোহনা হয়ে উঠবে উপজেলার অন্যতম একটি আকর্ষণীয় ও নান্দনিক দর্শনীয় স্থান।

No comments

Powered by Blogger.