এগিয়ে যাওয়ার শপথ

সমৃদ্ধ দেশ গড়ার শপথের মধ্য দিয়ে সারা দেশে পালিত হয়েছে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। স্বাধীন মাতৃভূমির জন্য আত্মদানকারী বীর শহীদদের প্রতি বিনম্র চিত্তে শ্রদ্ধা জানিয়েছে জাতি। কোটি কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে দেশকে সামনে এগিয়ে নেয়ার শপথ। প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে জাতীয় দিবসের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। দিবসটি উপলক্ষে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান সর্বস্তরের মানুষ। সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় শিশু সমাবেশ ও মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পালন করা হয় বিস্তারিত কর্মসূচি।
জাতীয় স্মৃতিসৌধে লাখো মানুষের ঢল: হাফিজ উদ্দিন, সাভার থেকে: মহান স্বাধীনতার ৪৭তম বার্ষিকীতে বীর শহীদদের স্মরণে লাখো জনতার ঢল নামে জাতীয় স্মৃতিসৌধে। সকাল থেকে হাতে লাল সবুজের পতাকা আর রং-বেরঙের ফুল নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে আসেন লাখো জনতা। সব বয়সের সাধারণ মানুষ তাদের হৃদয়ের ভালোবাসা দিয়ে স্মরণ করেন স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ জাতির সূর্য সন্তানদের। মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে সোমবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় সংসদের স্পিকার। এরপর নানা কর্মসূচির মাধ্যমে স্বাধীনতার ৪৭তম দিবসের উদযাপন ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণ করেন জাতি। ভোর ৬টায় দিকে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর সেনানিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল এ সময় শহীদদের প্রতি সালাম জানায়। বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে কিছুটা সময় নীরবে দাঁড়িয়ে জাতির বীর সন্তানদের স্মরণ করেন প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী। পরে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে দলের পক্ষে নেতৃবৃন্দকে নিয়ে আবারও স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা। এরপর বিরোধী দলের নেতা, প্রধান বিচারপ্রতি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর অন্যান্য বিচারপতিগণ, তিন বাহিনীর প্রধান ও কূটনীতিকরা শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। স্মৃতিসৌধে ভিআইপিদের শ্রদ্ধা জানানোর পর সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়। এরপরই পতাকা আর ফুল হাতে বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল নামে। তাদের শ্রদ্ধায় ফুলে ফুলে ভরে উঠতে থাকে স্মৃতিসৌধ বেদি। শহীদদের বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, জাতিসংঘ ঘোষিত উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ প্রমাণ করে স্বাধীনতার ৪৭ বছরে দেশ কতটা এগিয়েছে। এখনো যেসব স্বাধীনতা বিরোধী সোচ্চার রয়েছে তাদের মূলোৎপাটন করা হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বিএনপিকে জঙ্গিবাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক আখ্যায়িত করে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ও স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ এখনো আশঙ্কামুক্ত হয়নি। কারণ দেশে পাকিস্তানি শক্তি প্রক্সি খেলায় মেতে উঠেছে। রোববার গণহত্যা দিবসে দেশের সব সংগঠন কর্মসূচি দিলেও বিএনপি কোনো কর্মসূচি দেয়নি। এরা জাতির পিতা, গণহত্যা দিবস ও ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা মানে না। এরা পাকিস্তানি আদর্শে চলে। তিনি আরো বলেন, জঙ্গিবাদ ও রাজাকার যেমন দেশের শত্রু তার চেয়েও বড় শত্রু তারা, যারা এদের লালন করে। তাই আমাদের সামনে এখন দুটি বড় চ্যালেঞ্জ। একটি হলো সঠিক সময়ে নির্বাচন আয়োজন করা এবং অপরটি জঙ্গিবাদ ও রাজাকার লালনকারী দল বিএনপিকে ক্ষমতার বাইরে রাখা। সকাল পৌনে ১০টার দিকে বিশাল শোডাউন নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্মৃসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, গণতন্ত্র রক্ষার জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, তা এখন অবরুদ্ধ। তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী এখন জেলখানায় আটক। মানুষের বাক স্বাধীনতা নেই। রাজনীতি করার অধিকার নেই। কোথাও গণতন্ত্র নেই। আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লড়াই করছি, গণতন্ত্র ফিরে না আসা পর্যন্ত লড়াই চলবেই। এছাড়া দেশে বর্তমানে কোনো আইনের শাসন নেই জানিয়ে তিনি আরো বলেন, যদি দেশে গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন থাকতো তাহলে আমাদের নেত্রীকে জামিন পাওয়ার পরও জেলে থাকতে হতো না। দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, মো. শাহজাহান, শাহজাহান ওমর, যুগ্ম মহাসচবি খায়রুল কবির খোকন, চেয়ারপারসনের উপদষ্টো আমানউল্লাহ আমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় স্মৃতিসৌধে পর্যায়ক্রমে ফুল দিয়ে সম্মান জানায়- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, গণবিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি), সাভার প্রেস ক্লাব, আশুলিয়া প্রেস ক্লাব, জাসদ, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, বাসদ, সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, গণফোরাম, জাতীয় পার্টি, যুবলীগ, যুব ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, মহিলা পরিষদ, যুবদল, ছাত্রদল, মহিলা দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম দলসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে স্মৃতিসৌধে ফুল দেয়া হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দলের সদস্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, এনজিও প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। বাংলাদেশ জনসেবা পার্টির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান দলের নেতারা। নানা বয়সের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মহান স্বাধীনতা দিবসে বিভিন্ন ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে নিয়ে স্মৃতিসৌধে আসেন এবং শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এদিকে, দিবসটি উপলক্ষে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ঢাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছিল বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সৌধ প্রাঙ্গণ ও এর আশপাশের এলাকায় বসানো ছিল সিসিটিভি ক্যামেরা।

No comments

Powered by Blogger.