তাইজুদ্দিনের মানবেতর জীবন by মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ হেলালী

১৯৭১ সালে দীর্ঘ সাড়ে চার মাস মরণপণ যুদ্ধ করেও তাইজুদ্দিনের স্বীকৃতি মিলেনি আজো। তিনি দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের পালইছড়া গ্রামের বাসিন্দা। একাত্তরে দেশ-মাতৃকার উদ্ধারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে ১লা সেপ্টেম্বর ভারতের আগরতলায় যমুনা ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে পরবর্তীতে সেখান থেকে দেশে ফিরে অক্টোবর মাসে ৩০৩ রাইফেল পরিচালনায় দক্ষ প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধ করেন। তৎকালে ১১ নং সেক্টরের অধীনে কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী থানার চতুল এলাকায় গ্রুপ কমান্ডার রিয়াজ উদ্দিন ভুঁইয়ার নেতৃত্বাধীন কোম্পানিতে মরণপণ যুদ্ধ করেন। স্বাধীনতার পর রিয়াজ উদ্দিন ভুঁইয়া আমেরিকা চলে যাওয়ায় তার হাতে কোনো কাগজপত্র ছিল না। এছাড়া যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে কটিয়াদী এলাকা হতে তিনি সপরিবারে দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজারে চলে আসায় ওইসব কাগজপত্রের আর কোনো সন্ধানও পাননি তিনি। দীর্ঘ কয়েক বছর পর সুদূর আমেরিকা হতে মুক্তিযুদ্ধকালীন গ্রুপ কমান্ডার রিয়াজ উদ্দিন ভুঁইয়া সেখান থেকে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে তার যুদ্ধকালীন বিবরণ সংবলিত একটি ইংরেজিতে লেখা সনদপত্র প্রদান করলেও অদ্যাবধি অন্যান্য তালিকার কোনো হদিস পাননি তিনি। আজ তিনি বয়সের ভারে ন্যুব্জ। যুদ্ধ করেও স্বীকৃতি না পেয়ে আফসোস করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই এখন তার।
মুক্তিযোদ্ধা তাইজউদ্দিন কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, একাত্তরের অক্টোবর মাসে সকাল ৮টায় স্থানীয় চাঁদপুর গ্রামে আগুন দেয় পাক সেনারা। তৎক্ষণাত এন ইসলামসহ সঙ্গীয় মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে প্রতিরোধ করতে যাই। নিজের পরিবার পরিজন ছেড়ে জীবন বাজি রেখে অস্ত্র হাতে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি মুক্তিযুদ্ধে। এভাবে দীর্ঘ সাড়ে চার মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। কিন্তু মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাইনি। আমি ভাতার জন্য নয় মৃত্যুর আগে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেখে মরতে চাই।

No comments

Powered by Blogger.