অভিনব অপরাধ: খুনের ভুয়া ভিডিওতে তোলপাড়

খুন হওয়ার নাটক করে তার ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে অভিনব অপরাধের জন্ম দিয়েছে আদল নামের এক তরুণ। ক্রিকেট খেলায় ধরা জুয়ায় হেরে তার টাকা পরিশোধ না করতে পেরে খুন হয়েছে- এমন এক নাটক সাজায় আদল। শুধু তাই নয়, সেটার ভিডিও প্রচার করে পরিবার ও স্বজনদের হয়রানি করেছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা থাকলেও কোন ধরনের মামলা দেয়া হবে তা নিয়েও চিন্তিত পুলিশ। জানা গেছে, শ্রীলঙ্কায় সদ্য শেষ হওয়া নিদাহাস ট্রফির ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে জুয়া ধরেছিল আদল। এজন্য প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো ঋণ করতে  হয়েছে তাকে। টাকা পরিশোধ যাতে না করতে হয় সেজন্য তাকে খুন করার নাটক সাজাতে বলে বন্ধুদের। বন্ধুরা তার কথামতো ওই তরুণের হাত পা বেঁধে গলায় ছুরি চালায়। রক্ত বের হয়। তরুণটি মারা যায় (অভিনয়)। আর সেই ‘খুনের’ দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করে অপর একটি মোবাইল থেকে পাওনাদারের মোবাইলে ইমো অ্যাপের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এমনকি নিজের পরিবারের কাছেও সে ওই ভিডিওটি পাঠায়। জানানো হয়, চট্টগ্রামে নিহত তরুণের লাশ। বন্ধ পাওয়া যায় আদলের মোবাইল নম্বর। সন্তানের নৃশংস খুনের ঘটনা ভিডিওতে দেখে ফরিদপুর থেকে ঢাকায় চলে আসেন তার বাবা-মা। খুনিদের ধরতে পরিবারের পক্ষ থেকে ওই ভিডিওটি ছাড়া হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এরপর মুহূর্তেই সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। একই সঙ্গে আদলের লাশ ও খুনিদের গ্রেপ্তারে নেমে পড়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা পুলিশ।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার এসআই তৌহিদ জানান, আদলের মোবাইল নম্বর ট্রাক করে তার এক বন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়। ভিডিওর সঙ্গে তার চেহারা মিলিয়ে দেখা যায় সে-ই তরুণটির গলায় ছুরি চালিয়েছিল। তার নাম ইমরান। এফডিসিতে মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করে। তার কাছে পুলিশ নিহত তরুণের লাশ কোথায় তা জানতে চায়। তখন ইমরান জানায়, এটি তারা শুটিং করেছে। দুই হাজার টাকার বিনিময়ে সে এই শুটিংয়ে অংশ নেয়। ইমরানের গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে যে আদলকে নিয়ে এত কিছু, সে পালিয়ে ফরিদপুরে তার গ্রামের বাড়িতে চলে যায়। সেখান থেকে তার স্বজনরা পুলিশকে জানায়, আদল বাড়িতে আছে। একইসঙ্গে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা পুলিশও খবর পায় ওই তরুণ বাড়িতে গেছে। এরপর তার ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আদল জানিয়েছে, নিদাহাস ট্রফিতে সে পুরান ঢাকার বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সঙ্গে জুয়া খেলতো। প্রথম সে ৪০ হাজার টাকা জিতে। সিরিজের ফাইনাল ম্যাচে সে দেড়লাখ টাকা হেরে যায়। এক ব্যবসায়ী তার কাছে ওই টাকা পাবে। সে টাকা না দিতে পেরে ওই নাটক সাজায়। তাকে হত্যা করার ভিডিওটি ওই ব্যবসায়ীকে পাঠিয়ে দেয়। এটি আদলেরই পরিকল্পনা ছিল। এদিকে আদল ও তার সহযোগীদের থানা পুলিশ হেফাজতে রাখা হলেও এখনো তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন এসআই তৌহিদ। তিনি জানান, ছেলেটি যে অপরাধ করেছে তাতে পরিবার ও আত্মীয়স্বজন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। তাই এ ব্যাপারে কি ধরনের মামলা হবে তা নিয়ে চিন্তিত আমরা।

No comments

Powered by Blogger.