দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ: তৌফিক এহেসান

রাজধানীর মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারে বড় পরিসরে জাঁকজমকভাবে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে ‘ডিজিটাল আইসিটি ফেয়ার-২০১৮। মেলার নবম আয়োজনে আহ্বায়ক দোকান মালিক সমিতির সভাপতি তৌফিক এহেসান। এবারের মেলার আয়োজন ও কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন যুগান্তরের সাথে।
যুগান্তর: এবারের মেলার স্লোগান কি?
তৌফিক এহেসান: আমরা অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে, আজ আমরা ডিজিটাল আইসিটি ফেয়ার-২০১৮ শুরুর মুহুর্তে উপস্থিত হয়েছি। আপনারা জানেন, এবারে নবমবারের মতো আয়োজিত হচ্ছে ডিজিটাল আইসিটি ফেয়ার। ঢাকার এলিফ্যান্ড রোডে অবস্থিত কম্পিউটার সিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পাঁচদিনব্যাপী ডিজিটাল আইসিটি ফেয়ার-২০১৮। এ কম্পিউটার মেলার ম্লোগান হচ্ছে ‘ডিজিটাল লিটারেসি ফর এভরিওয়ান’ বা সবার জন্য ডিজিটাল স্বাক্ষরতা। এ স্লোগানকে ধারণ করেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পাঁচদিনব্যাপী দেশের সবচেয়ে বড় কম্পিউটার মেলা।
যুগান্তর: তথ্যপ্রযুক্তিতে কিভাবে ভূমিকা রাখছে ডিজিটাল আইসিটি ফেয়ার?
তৌফিক এহেসান: দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ। আমরা উন্নতি করছি তথ্যপ্রযুক্তির প্রতিটি ক্ষেত্রে। বিগত সাত বছরে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অভিযাত্রায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব সম্প্রসারণ ঘটেছে। প্রযুক্তিভিত্তিক তথ্য ও সেবা পৌঁছে গেছে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায়। বিশেষজ্ঞরা তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক এই অবিস্মরণীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে আখ্যায়িত করছেন ডিজিটাল নবজাগরণ হিসেবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে ৬৫০টির বেশি তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করে চলেছি আমরা। কম্পিউটার সিটি সেন্টার দোকান মালিক সমিতির লক্ষ্য হচ্ছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করা। ইতিমধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশের অনুসঙ্গ হিসেবে কানেক্টিভিটি ও আইসিটি অবকাঠামো, মানবসম্পদ উন্নয়ন, আইসিটি শিল্পের উন্নয়ন, ই-গভর্নেন্স প্রতিষ্ঠা, হার্ডওয়্যার শিল্পের উন্নয়নে আমরা কাজ করে চলেছি। ভবিষ্যতে এ ক্ষেত্রটিতে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি।
যুগান্তর: মেলায় কি বিশেষত্ব থাকবে?
তৌফিক এহেসান: সাধারণ জনগণকে তথ্যপ্রযুক্তি ও ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে ডিজিটাল ইকোনমির মূল স্রোতে নিয়ে আসার লক্ষ্য নিয়ে ডিজিটাল লিটারেসি ফর এভরিওয়ান স্লোগানকে ধারণ করে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এবারের মেলা। জনগণের দোরগোড়ায় তথ্য ও সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য মেলায় নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক উদ্ভাবনী পণ্য প্রদর্শনী ও বিক্রি করা হবে। ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণকে এগিয়ে নিতে আমরা জোরালোভাবে ভূমিকা রেখে যাচ্ছি।
যুগান্তর: তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কতটা সফল হলো বাংলাদেশ?
তৌফিক এহেসান: ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অভিযাত্রায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সাফল্য ও কাজের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির কথা আমরা সবাই জানি। তাঁর সময়োপযোগী উন্নয়নের মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে একটি উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশের কাতারে চলে যাবে। আমরা তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশে সরকারকে সহযোগিতা করে যেতে চাই। আমাদের নানা উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের তথ্যপ্রযুক্তিখাত এগিয়ে যাবে। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর আমরা ডিজিটাল আইসিটি ফেয়ার করে আসছি। এবারে আপনাদের সহযোগিতায় আমরা আয়োজন আরও বড় করতে পেরেছি।
যুগান্তর: ভাষার মাসে কী আয়োজন থাকবে?
তৌফিক এহেসান: শুরু হয়েছে মহান ফেব্রুয়ারি মাস। আজ অকুণ্ঠচিত্তে স্মরণ করি সেই ভাষা শহীদদের যাঁদের জন্য আমরা আজ মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারছি। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সালাম। তারা আমাদের শিখেছেন অকুতোভয়ে সামনে এগিয়ে চলার সাহস। আমরা সেই সাহস নিয়ে এগিয়ে চলেছি সামনের দিকে। আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি ডিজিটাল বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে। ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় ডিজিটাল স্বাক্ষরতা বা ডিজিটাল লিটারেসি বা ডিজিটাল জ্ঞান থাকা সবার জন্য প্রয়োজনীয়। তাই সাবার হাতে ডিভাইস পৌঁছাতে হবে। ডিজিটাল আইসিটি ফেয়ার আয়োজনের মাধ্যমে সে লক্ষ্য থাকে। এ বছর তাই স্লোগান রাখা হয়েছে ডিজিটাল লিটারেসি ফল এভরিওয়ান।দেশের উন্নতিতে ডিজিটাল আইসিটি ফেয়ারের মাধ্যমে ডিজিটাল লিটারেসি বাড়াতে কাজ করা হচ্ছে।
যুগান্তর: মেলার আয়োজন নিয়ে কিছু বলুন।
তৌফিক এহেসান: ঢাকার এলিফ্যান্ড রোডে অবস্থিত কম্পিউটার মার্কেট মাল্টিপ্লান কম্পিউটার সিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পাঁচদিনব্যাপী ডিজিটাল আইসিটি ফেয়ার। এ মেলায় বাংলাদেশের শীর্ষ আইসিটি পণ্য আমদানীকারক ও ব্যবসায়ীদের বিশ্বের মানসম্পন্ন ব্র্যান্ডের লেটেস্ট প্রযুক্তি প্রদর্শন করা হবে। মেলায় আসা বিভিন্ন প্রযুক্তি পণ্যে থাকবে বিশেষ ছাড় ও আকর্ষণীয় উপহার। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে মেলা চলবে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। পাঁচদিনব্যাপী এ মেলায় অংশগ্রহণ করবে দেশের আইসিটি মার্কেটের ৬৫০ আইটি প্রতিষ্ঠান। মেলায় বিশেষ আয়োজন হিসেবে থাকছে শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, সেলিব্রিটিদের মেলা পরিদর্শন, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে মেলায় প্রবেশ ও মেলা পরিদর্শনের ব্যবস্থাসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ ছাড়াও মেলা চলাকালীন প্রবেশ টিকেটের উপর র‍্যাফেল অনুষ্ঠিত হবে।
যুগান্তর: মেলায় কি ছাড় উপহার থাকবে?
তৌফিক এহেসান: প্রতিবারের মতো এবারের মেলাতেও নতুন নতুন প্রযুক্তিপণ্যর সমাহার করা হয়েছে। মানুষের কাছে সহজে ডিভাইস তুলে দেওয়ার পাশাপাশি নানা ছাড় ও উপহার রাখা হচ্ছে। প্রতিবারের চেয়ে এবার আরও বড় পরিসরে ও জাঁকজমকভাবে মেলা আয়োজন করা হচ্ছে। মেলায় সুন্দর করে সাজানো দোকানগুলোতে সহজে পণ্য দেখার ও কেনার সুবিধা পাবেন। মেলায় জোর দেয়া হয়েছে ডিজিটাল ডিভাইস যাতে সবার হাতের নাগালে থাকে সে বিষয়টির ওপর। মেলা চলাকালীন ডিজিটাল উন্নয়নমূলক বেশ কিছু আয়োজন থাকবে। মেলার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করা হবে। যাতে প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার ছড়িয়ে দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজ আরও ত্বরান্বিত করা যায়। মেলায় প্রবেশ মূল্য ১০ টাকা। তবে স্কুল শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন।
যুগান্তর: মেলার স্পন্সর কারা?
তৌফিক এহেসান: মেলার প্ল্যাটিনাম স্পন্সর হলো এসার, ডেল, এইচপি, লজিটেক, এক্সট্রিম। গোল্ড স্পন্সর হলো আসুস, এফোরটেক, লেনেভো।সিলভার স্পন্সর হলো টিপি-লিংক, ডি-লিংক, ইউসিসি স্পন্সর টেন্ডা এবং গেমিং পাটনার গিগাবাইট।
যুগান্তর: মেলায় কবে কি অনুষ্ঠান হবে?
তৌফিক এহেসান: অনুষ্ঠানের দিন মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের লেভেল ১ এ অনুষ্ঠিত হবে আগত অতিথিদের শুভেচ্ছা বক্তব্য, লেভেল ৯ এ জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে ফিতা কেটে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন, লেভেল-৭ এ মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনে শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও শেষে মেলা পরিদর্শন। ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল দশটায় তিন বছর থেকে ১২ বছর বয়সীদের তিনটি গ্রুপে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। ১১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে সমাপনী অনুষ্ঠান। ৭ ফেব্রুয়ারি বুধবার সকাল ১১ টায় মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের প্রথমতলায় মেলার উদ্বোধন করবেন ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। এ ছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেব থাকবেন ঢাকা ১০ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপস, শিক্ষাবিদ ও এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির উপাচার্যসহ বিশিষ্টজনেরা।

No comments

Powered by Blogger.