রাখাইনে এখনো থামেনি মিয়ানমার সেনাদের বর্বরতা

বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সাথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তির বিষয়টি গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হলেও এখনো থামেনি রোহিঙ্গা নির্যাতন। ফলে এখনো রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে আসছেন। অন্য দিকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার রাখাইনে ফিরতে ভয় পাচ্ছেন। রাখাইন থেকে অবশিষ্ট রোহিঙ্গারা যাতে এপারে চলে আসতে না পারে সে ব্যাপারে বিজিবি তৎপর রয়েছে।
কেননা রাখাইনে প্রতিদিন কোনো না কোনো গ্রামে রোহিঙ্গা বসতবাড়ি পুড়ছে। গত এক সপ্তাহে বুচিডংয়ের তিন গ্রামে অগ্নিসংযোগের পর এবার মংডুতে আগুন দিয়েছে সেনারা। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার রাতের মধ্যভাগে মংডুর সীমান্তবর্তী এলাকা সুধারদিয়ার খন্দকার পাড়া প্রকাশ খোনকার পাড়ায় অগ্নিসংযোগ করে মিয়ানমারের সেনারা। এতে অন্তত আটটি রোহিঙ্গা বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। অগ্নি দগ্ধ হয় বেশ ক’জন রোহিঙ্গা এবং গৃহপালিত পশু। গত বুধবার বিকেলে তমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের মংডু, ফকিরাবাজার ও ঢেঁকিবুনিয়া এলাকায় নতুন করে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার সকালে ওই এলাকায় জ্বালানো ঘর-বাড়িগুলো থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। আতঙ্কে সীমান্তের ওপার থেকে বেশকিছু রোহিঙ্গা জিরো লাইনে অবস্থিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়শিবিরে চলে এসেছেন। বুধবার রাতে তমব্রু ও ঘুমধুম সীমান্তে কোনার পাড়ায় পাঁচ-ছয়টি বসতবাড়ি জ¦ালিয়ে দিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বিজিপি সদস্যরা। তারা তাদের ক্যাম্প থেকে থেমে থেমে ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে সীমান্ত এলাকাজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। শূন্য রেখায় আশ্রিত রোহিঙ্গা নাগরিক দিল মোহাম্মদ জানান, মিয়ানমার সেনারা তাদের আশ্রয়শিবির লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে চলে যাওয়ার জন্য হুমকি দেয়। রোহিঙ্গাদের স্থান ত্যাগ করার জন্য রাতে ফাঁকা গুলি বর্ষণ করায় স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক। কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি উপ-অধিনায়ক মেজর ইকবাল আহমেদ বলেন, সীমান্তে বিজিবি কড়া সতর্কাবস্থায় রয়েছে।
নাফ নদীতে ৫ জেলেকে অপহরণ
কক্সবাজার (দক্ষিণ) সংবাদদাতা জানান, নাফ নদী থেকে পাঁচ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত এক জেলে ফিরে এসেছেন টেকনাফে। ছয় ঘণ্টা পর বিকেলে বিজিবির সহায়তায় তাদের ফিরিয়ে আনা হয় বলে বিজিবি সূত্রে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা গতকাল সকাল ৮টার দিকে টেকনাফের কাঞ্জরপাড়াসংলগ্ন নাফ নদীতে মাছ ধরা অবস্থায় জেলেদের ওপর হামলা চালায়। জানা যায়, হোয়াইক্যং কাঞ্জরপাড়া পয়েন্ট দিয়ে শাহ আলমসহ ছয় জেলে শনিবার শেষ রাতে নাফ নদীতে মাছ ধরতে যায়। সকাল ৮টার দিকে নাফ নদীতে আচমকা মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর একটি স্পিড বোট তাদের আক্রমণ করে। পাঁচ জেলেকে মিয়ানমার বাহিনী ধরে নিয়ে যায়। তারা হচ্ছেন কাঞ্জরপাড়ার মৃত নুর আহমদের ছেলে শাহ আলম, মৃত আব্দুস শুক্কুরের ছেলে ইয়ার মোহাম্মদ, আবদুল জলিলের ছেলে পাঠান আলী, আবদুল গফুরের ছেলে মো: আজিজ উল্লাহ ও টেকনাফ জালিয়া পাড়ার আব্বাস মিয়ার ছেলে মো: রফিক। গুলিবিদ্ধ আহত এক জেলে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে কূলে উঠে আসে। ফিরে আসা জেলে হচ্ছেন হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কাঞ্জরপাড়ার মৃত ফকির আহমদের ছেলে মো: ইসলাম। তাকে স্থানীয়রা চিকিৎসার জন্য দ্রুত উখিয়ার কুতুপালংয়ের একটি এনজিও হাসপাতালে নিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকার ইয়াবা পাচার প্রতিরোধ করতে বেশ কয়েক মাস থেকে নাফ নদীতে মাছ ধরা বন্ধ ঘোষণা করেছে। এরপর থেকে নাফ নদীতে মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। এরপরও কেউ কেউ নাফ নদীতে অবৈধভাবে মাছ ধরেই যাচ্ছে। এর সূত্র ধরে শনিবার ভোরে মাছ ধরার নৌকাটি নাফ নদীর শূন্য রেখা অতিক্রম করে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর একটি পোস্টের কাছাকাছি চলে যায়।
ফলে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। তবে স্থানীরা বলছে মিয়ানমার বাহিনী অন্যায়ভাবে বাংলাদেশের পানিসীমায় প্রবেশ করে এ হামলা চালিয়েছে। মিয়ানমার বাহিনীর হাতে আটক শাহ আলমের ভাই মো: শামসুল আলম বলেন, নাফ নদীর বাংলাদেশ সীমায় মাছ ধরছিল তার ভাইসহ অন্য জেলেরা। এতে বিনা উসকানিতে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে মিয়ানমার বাহিনী। তিনি তার ভাইসহ অন্য জেলেদের অবিলম্বে ফেরতের ব্যবস্থা করার দাবি জানান। জেলে পরিবারের সদস্যরা গভীর উৎকণ্ঠায় রয়েছেন বলেও জানান তিনি। এ প্রসঙ্গে বিজিবি-২ ব্যাটালিয়ান অধিনায়ক লে. কর্নেল এস এম আরিফুল ইসলাম জানান, মাছ ধরা নৌকাসহ বেশ কজন জেলে ধরে নেয়ার ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে লিখিত কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তবে নাফ নদীতে মাছ ধরা বন্ধ থাকার পরও এ ধরনের আচরণ কাম্য নয়। তারা শূন্য রেখা অতিক্রম করে ওপারে চলে যাওয়াতে এ ঘটনা ঘটেছে। তিনি আরো জানান, নাফ নদীতে মাছ শিকার বন্ধ থাকা সত্ত্বেও জেলেদের ওপারে যাওয়া উচিত হয়নি। তিনি এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা আশা করেন। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন প্রতিপক্ষ বর্ডার গার্ড পুলিশ বিজিপির সাথে সমন্বয় করে বিকেলে তাদের ফিরে আনা হয়। তবে এ রিপোর্ট লেখা অবধি ফিরে আসা জেলেদের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি।

No comments

Powered by Blogger.