ভুগিয়েছে চাল-পেঁয়াজ, অসন্তোষ বিদ্যুতে


২০১৭ এর বিদায় ঘণ্টা বাজতে আর মাত্র কয়েকঘণ্টা। এরপরই ইংরেজি ক্যালেন্ডারে শুরু হবে নতুন একটি বছর। পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যায় ২০১৭ সালটি সাধারণ মানুষের জন্য মোটেও সুখকর ছিল না। কারণ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সারাটি বছর নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম ছিল অস্বাভাবিক রকমের চড়া।

সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে অতি প্রয়োজনীয় চাল ও পেঁয়াজ। এছাড়া শাক-সবজি ও কাঁচা মরিচের দাম কখনো কখনো রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত বিদ্যুতও অসন্তোষ ছড়িয়েছে।

চালে  ‘কাবু’ সাধারণ মানুষ

চালের বাজারে প্রথম অস্থিরতা শুরু হয় ফেব্রুয়ারিতে। এ সময় মাঝারি মানের চাল ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ টাকার কাছাকাছি চলে যায়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকার ভারত, মিয়ানমারসহ প্রভৃতি দেশ থেকে বিপুল পরিমাণে চাল আমদানি ও খোলা বাজারে চাল বিক্রি শুরু করে। তবে সরকারের নিজস্ব ভাণ্ডারে যথেষ্ট পরিমাণে চাল মজুদ না থাকায় এর সুফল সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে পারেনি। ফলে চালের বাজারের নিয়ন্ত্রণ নেয়া সরকারের পক্ষে আর সম্ভব হয়নি।

বছর শেষের এই সময়ে এসেও চালের ঊর্ধ্বমুখী দর বহাল রয়েছে। ২০১৭ সালের শেষ সপ্তাহে খুচরা বাজারে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৫০ টাকা, মাঝারি চাল ৪৮-৬২ টাকা এবং চিকন চাল ৭০-৮৬ টাকায়।

চালের যে দর বেড়েছে তা সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কথায়ও স্পষ্ট। তিনি বলেন, চালের দাম যে পরিমাণ বেড়েছে, তা অসহনীয়। সম্প্রতি বেড়ে যাওয়ার পরিমাণটা অস্বাভাবিক। মোটা চালের কেজি ৫০ টাকার ওপরে উঠে যাওয়ায় কিছু লোকের খুব অসুবিধা হয়েছে। দামটা আসলে অনেক বেড়েছে।

এখনো কাঁদাচ্ছে পেঁয়াজ

দাম-দরের উঠানামায় বছরের আরেকটি আলোচিত পণ্যের নাম হল পেঁয়াজ। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম ছিল ২২ থেকে ৩০ টাকার মধ্যেই। কিন্তু মার্চের শুরুতে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বাড়া শুরু করে। এর কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দামকেই দায়ী করেন। ২২-৩০ টাকা দামের পেঁয়াজ তখন ৪০ এর ঘরে পৌঁছে যায়।

এপ্রিল-মে মাসে পেঁয়াজের দর আবার কিছুটা কমে আসলেও এর পরের মাস থেকে তা আবার বাড়তে শুরু করে। পরে দাম ৫০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এই দর বাড়তে বাড়তে অক্টোবর-নভেম্বরে এসে ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। চলতি মাসের শুরুর দিকে বাজারে পেঁয়াজের দর ওঠে ১৩০ টাকা পর্যন্ত।

শাক-সবজিতেও সেঞ্চুরি

পুরোটা বছর সাধারণ মানুষের অন্যতম ভোগান্তির নাম শাক-সবজি। প্রতিকেজি ঢেঁড়শ, বেগুন, বরবটি, কাকরোল, শিম কিংবা পটলের দামও তিন অঙ্কের ঘর ছাড়িয়েছিল।

চোখ রাঙালো গ্যাসের দাম

বিশ্ব বাজারে পেট্রোল-ডিজেলের দাম কমার পর দেশে মূল্য সমন্বয়ের দাবি পূরণ হয়নি। উল্টো বছরের শুরুতেই গ্যাসের দাম সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণায় ভোক্তা মহলে তৈরি হয় উদ্বেগ।

বাড়তি টাকায় বিদ্যুত

২০১০ সালের ১ মার্চ থেকে ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬ বছরে খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে ৭ বার বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। প্রায় দুই বছর পর গত নভেম্বরের শেষদিকে আবারো দাম বাড়ায় সরকার। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের নয় বছরে এ নিয়ে আটবার বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুত পেতে এখন ইউনিট প্রতি ৩৫ পয়সা বেশি গুণতে হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.