নির্বাচন মানেই হাঙ্গামা?

গত বৃহস্পতিবার দেশের ১২৬টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি), পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদে যে নির্বাচন হয়েছে, তার অধিকাংশই শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু হলেও কয়েকটিকে কালিমা লেপন করেছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকেরা। এটি একটি মন্দ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হওয়ায় স্বভাবতই জনগণের মধ্যে এই প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল যে বাংলাদেশের নির্বাচনী সংস্কৃতি ইতিবাচক দৃষ্টিতে মোড় নিয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী সব প্রার্থী সেই নির্বাচনের ফলাফলকে স্বাগতও জানিয়েছেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ ইউপি, পৌরসভা ও উপজেলা নির্বাচনে সেই ধারা বজায় না থাকা দুঃখজনক। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের জবরদস্তির প্রতিবাদে ১৭টি ইউনিয়ন পরিষদে বিএনপির প্রার্থীরা ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। ১২৬টির মধ্যে ১৭টি ইউনিয়ন পরিষদ হয়তো সংখ্যার বিচারে কম। কিন্তু একটি হলেও নির্বাচনে হাঙ্গামা কিংবা জবরদস্তি হবে কেন? নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উচিত হবে পুরো বিষয়টি তদন্ত করা। কী কারণে এসব জায়গায় নির্বাচনের পরিবেশ বিঘ্নিত হলো, কারা করল, সেটি নিরপেক্ষভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীছাড়াও প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো দায় ছিল কি না, তাও তদন্ত করে দেখা দরকার।
যদি দেখা যায় নির্বাচনে বড় ধরনের অনিয়ম ও অঘটন ঘটানো হয়েছে কিংবা ফলাফল জবরদস্তিভাবে কোনো প্রার্থীর পক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, কমিশন সেটি বাতিলও করে দিতে পারে। এতে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের উচিত শিক্ষা হবে। নির্বাচন কমিশন কোনোভাবেই এ ব্যাপারে নীরব বা নির্বিকার থাকতে পারে না। তাদের বুঝতে হবে শান্তির ললিত বাণী শুনিয়ে নির্বাচনে হাঙ্গামাকারীদের সুপথে আনা যাবে না। নির্বাচনকে সর্বক্ষেত্রে সুন্দর ও সুষ্ঠু করতে হলে কমিশনকে কঠোর হতেই হবে। দল বা প্রার্থী যত শক্তিশালী হোক না কেন, আইনের ঊর্ধ্বে নন। যে প্রতিষ্ঠানটি ষোলো কোটি মানুষের আশা-ভরসার স্থল, সেই প্রতিষ্ঠানটি তার কর্তব্য থেকে সরে যেতে পারে না। হোক তা স্থানীয় কিংবা জাতীয় নির্বাচন—সব ক্ষেত্রেই ভোটারদের রায়ের মর্যাদা দিতে হবে। রংপুরের নির্বাচনের পর জনগণের মধ্যে যে আশা তৈরি হয়েছে, সেটি যাতে কেউ ফুঁৎকারে উড়িয়ে দিতে না পারে, সে জন্য নির্বাচন কমিশনের সার্বক্ষণিক নজরদারি  থাকতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.