ঠাকুরগাঁওয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে হত্যা

ঠাকুরগাঁওয়ে সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের অর্থ সম্পাদক আবদুল মান্নান মঙ্গলবার রাত ১২টায় উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজিব দত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগ কর্মী জুম্মন খান। তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আবদুল মান্নান পৌরসভার ইসলাম নগর (খানকা শরিফ) মহল্লার মৃত তসির উদ্দিনের ছেলে। তার স্ত্রী জেসমিন এ হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন। তিনি কেঁদে বলেন, তার অসহায় দুই শিশুমেয়ের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। আহত জুম্মন খানের বাড়ি শহরের সরকারপাড়ায়। তিনি এর আগে ছাত্রলীগ কর্মী ছিলেন। হত্যার ঘটনায় পুলিশ সন্দেহভাজন দু’জনকে আটক করেছে। তাদের থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মঙ্গবার ভোররাতে শহরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করেছেন বলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেওয়ান মোহাম্মদ লালন জানান। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- যুবলীগ নেতা সজিব দত্তের ভাই জেলা শহরের গোবিন্দ নগর মন্দিরপাড়ার গৌরাঙ্গ দত্তের ছেলে পিন্টু দত্ত ও পৌরসভার ১০নং ওয়ার্ডের যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শান্তর বড় ভাই রতন। স্থানীয়রা জানান, শান্ত ঠাকুরগাঁও পৌরসভার কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তার বাড়ি পৌর শহরের গোবিন্দনগর আমবাগান বাড়ি মহল্লায়। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সজিব দত্তের সঙ্গে আবদুল মান্নানের টেন্ডার ও টোল আদায় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। কয়েকদিন আগে সিগারেট খাওয়াকে কেন্দ্র করে তাদের হাতাহাতি হয়। এ সময় যুবলীগ নেতা সজিব দত্ত আবদুল মান্নানকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবদুল মান্নান সজিব দত্তের বড় ভাই জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ দত্তকে বিষয়টি অবহিত করন। দেবাশীষ তার ভাইয়ের পক্ষ নিয়ে কথা বলে আবদুল মান্নানকে শাসিয়ে সাবধান করে দেন বলে ওই সময় উপস্থিত অনেকে বলেছেন। ওই ঘটনার জের ধরে যুবলীগ নেতা সজিব দত্ত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টায় আবদুল মান্নানকে জেলা শহরের মুন্সিরহাটে পেয়ে পেছন থেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করতে থাকেন। এক পর্যায়ে আবদুল মান্নান মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ সময় তাকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে এলে বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগ কর্মী জুম্মনকে সজিব দত্ত ছুরিকাঘাত করে মোটরসাইকেলে পালিয়ে যান। লোকজন আবদুল মান্নান ও জুম্মন খানকে উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে আনার পথে আবদুল মান্নান অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে পথে মারা যান। আর জুম্মনকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। রাত ২টার দিকে জুম্মনের অবস্থার অবনতি ঘটলে চিকিৎসক সুব্রত রায় রংপুর মেডিকেল কলেজে পাঠান। সূত্র জানিয়েছে, আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি ও ব্যক্তি প্রভাবকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে। ঠাকুরগাঁও থানার ওসি মশিউর রহমান এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জেলা প্রশাসক আবদুল আওয়াল ও পুলিশ সুপার ফারহাত আহমেদ হতাহতের ব্যাপারে হাসপাতালে খোঁজ নিতে যান। সেখানে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের আশ্বাস দেন তারা। পরে পুলিশ সন্দেহজনকভাবে পিন্টু ও শান্ত নামে দু’জনকে আটক করে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শাকিল চৌধুরী খুনের সঙ্গে জড়িত যুবলীগ নেতা ও তার সহযোগীদের গ্রেফতারের দাবি জানান। এ খুনের সঙ্গে জড়িত অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা সজিব দত্তের বড় ভাই জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ দত্ত সমীর পলাতক রয়েছেন। যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার ফারহাত আহমেদ জানান, খুনের সঙ্গে জড়িতদের পুলিশ চিহ্নিত করেছে। দোষীদের গ্রেফতারের জন্য বিশেষ অভিযান চলছে। আসামিরা যেন বর্ডার অতিক্রম না করতে পারে সীমান্তে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.