দ্রুত বিচারে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল হচ্ছে

‘বিশেষ ট্রাইব্যুনাল’ গঠন করে দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে বিদেশে টাকা পাচার ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নেপথ্যে অর্থ সরবরাহ সংক্রান্ত মামলা। আর বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনায় নিয়োগ দেয়া হবে বিশেষ জজ। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ‘মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ’ সংক্রান্ত জাতীয় সমন্বয় কমিটির বৈঠকে নেয়া হয়েছে এ সিদ্ধান্ত। তা বাস্তবায়নের জন্য শিগগিরই আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে। ওই বৈঠকে অর্থ পাচার বন্ধে সরকারের কৌশলপত্রের অগ্রগতির প্রতিবেদন দ্রুত জমা দিতে সংশ্লিষ্ট ১৪টি মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া বৈঠকে দেশের সব ধরনের অবরুদ্ধ ও বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন প্রণয়নে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে জাতীয় সমন্বয় কমিটির এ বৈঠক ১৮ জুন (কার্যবিবরণী অনুমোদন ৫ জুলাই) অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে নেয়া পদক্ষেপ স্বল্প সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য ব্যবস্থা নিতে বলেছেন অর্থমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, পাচার করা অর্থ ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন সংশ্লিষ্ট মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ভিন্ন ট্রাইব্যুনাল করার জন্য আগেও আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয় তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এখন একই প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য পুনরায় অনুরোধ করা হবে। অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বৈঠকে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ওই সিদ্ধান্তের আলোকে প্রস্তাবটি বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হবে। সূত্র মতে, বিদেশে অর্থ পাচার বন্ধ হচ্ছে না। বিভিন্ন কৌশলে টাকা পাচার হচ্ছে।
পাশাপাশি জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য বিভিন্নভাবে সরবরাহ করা হচ্ছে অর্থ। এসব ঘটনার মধ্যে কিছু ঘটনার মামলা হয়েছে, যা আদালতে বিচারাধীন। কিন্তু দীর্ঘসূত্রতার কারণে এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হচ্ছে না। অর্থ পাচার প্রতিরোধ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা এশীয় প্যাসিফিক গ্রুপ (এপিজি) সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত অর্থ পাচারের প্রায় চারশ’ ঘটনা শনাক্ত হয়েছে বাংলাদেশে। এসবের সঙ্গে ১৪০ কোটি টাকা জড়িত। অবশ্য তদন্ত শেষে মামলা হয়েছে ২৮৪টি। এর মধ্যে ৪৩টি মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। ২০১৫ সালে ২৬টি অর্থ পাচারের ঘটনা তদন্ত শেষে মামলা করা হয়েছে ১১টি। অর্থ পাচারের ঘটনায় ২০১৪ সালে ৮৯টি ঘটনা তদন্ত করে ২০টি মামলা করা হয়। একইভাবে ২০১৩ সালে ৮১টি ঘটনার ব্যাপারে অনুসন্ধান করা হলেও মামলা হয়েছে ৬৬টি। ২০১২ সালে তদন্ত করা হয় ৮০ ঘটনা। তদন্ত শেষে মামলা করা হয়েছে ১৩২টি। ২০১১ সালে ৬৭টি ঘটনা অনুসন্ধানের পর ৩৫টি, ২০১০ সালে ৫৬টি ঘটনার তদন্ত শেষে ১৯টি এবং ২০০৯ সালে মামলা হয়েছে ২টি। সূত্র মতে, ওই বৈঠকে নিন্ম আদালত থেকে অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন সংক্রান্ত মামলায় খালাস পাওয়া আসামির নথি অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসকে দ্রুত জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস এবং আইন মন্ত্রণালয়সহ সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। পাশাপাশি প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা ২০১৩-এর খসড়া জুলাইয়ের মধ্যে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে পাঠানোর কথা বলা হয়। আর অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে তথ্য বিনিময়ের লক্ষ্যে বিএফআইইউর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থার সমঝোতা স্মারক স্বল্প সময়ের মধ্যে সই করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সূত্র মতে, বিদেশে টাকা পাচার ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থ সরবরাহ বন্ধ করতে সরকারের কৌশলপত্রের বাস্তবায়নের অগ্রগতি কম হওয়ায় বৈঠকে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। কারণ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে ২০১৫-১৭ অর্থবছর মেয়াদে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য একটি কৌশলপত্র অনুমোদন দিয়েছিল জাতীয় সমন্বয় কমিটি। এর মধ্যে কৌশলপত্রের অর্ধবার্ষিকী প্রতিবেদন বাস্তবায়নের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাওয়া হয় সংশ্লিষ্ট ১৭টি মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কাছে। এর মধ্যে রয়েছে- দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), অ্যাটর্নি জেনারেল অব বাংলাদেশ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, আইন মন্ত্রণালয়, পুলিশ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, এনজিওবিষয়ক ব্যুরো, সিআইডি, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, সমাজসেবা অধিদফতর, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি, যৌথ মূলধনী কোম্পানি ফার্মগুলো নিবন্ধক। এর মধ্যে দুদকসহ তিনটি সংস্থার অগ্রগতি প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। ওই বৈঠকে বাকি (১৪টি) মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে কৌশলপত্রের সর্বশেষ বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানাতে বলা হয়। সূত্র মতে, চলতি মাসে এপিজির বার্ষিক সভা। এ সভায় অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশের নেয়া পদক্ষেপের অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে হবে। পাশাপাশি ২০১৮ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশকে এ সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.