দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত বেইজিং

সিকিম নিয়ে এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা সীমান্ত উত্তেজনার মধ্যে এবার চীন ও ভারত বিদেশি কূটনীতিকদের সর্বশেষ পরিস্থিতি অবহিত করেছে। চীন বিদেশি কূটনীতিকদের বলেছে, ‘ভারতের ব্যাপারে তাদের ধৈর্য অসীম হবে না।’ খবর এনডিটিভি ও পিটিআইর। পরমাণু শক্তিধর দুটি দেশের মধ্যে নজিরবিহীন সীমান্ত উত্তেজনা নিয়ে বিশ্বের বহু দেশই উদ্বিগ্ন। চীন ও ভারত অনমনীয় অবস্থান গ্রহণ করায় অচলাবস্থা নিরসনের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বিশেষ করে চীন বলছে, সিকিম ভারতের সেনা না সরালে কোনো আলোচনা হবে না। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রথমে ভারত এক ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের তাদের অবস্থান জানায়। এরপর পাল্টা ব্রিফিং করে বেইজিং। ভারত সরকার দাবি করেছে, সিকিম নিয়ে চীনের সঙ্গে উত্তেজনায় আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে বিদেশি সরকারগুলো তাতে নির্ভার হতে পারছে না। চীন বলছে, সিকিম সীমান্তে ভারত অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করেছে।
আর ভারতের অভিযোগ, চীনা সেনারা সেখানে অবৈধভাবে সড়ক নির্মাণের চেষ্টা করছে। যেখানে সড়ক নির্মাণের চেষ্টা করা হচ্ছে ডোকলাম ভুটানের বলে দাবি ভারতের। আর ভুটানের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব ভারতের। এ অবস্থান চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং দেশটির সরকার নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম অব্যাহতভাবে ভারতকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে এবং ১৯৬২ সালে চীনের সঙ্গে যুদ্ধে ভারতের শোচনীয় পরাজয়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। বেইজিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফিংয়ের কথা উল্লেখ করে মঙ্গলবার চীনের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত গ্লোবাল টাইমস পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতীয় সেনাদের সিকিমে অবস্থান গ্রহণে বিদেশি কূটনীতিকরা ‘মর্মাহত’ হয়েছেন। সরকারের মুখপাত্র হিসেবে খ্যাত পত্রিকাটির এক নিবন্ধে বলা হয়, ‘চীন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত এবং ভারতকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিমি সীমান্তেই সর্বাত্মক পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।’ পত্রিকাটি বলছে, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় চীন যুদ্ধকে ভয় পায় না এবং বেইজিং দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। ভারতের সিকিম প্রদেশের সীমান্তে যে ডোকলাম বা দোংলং এলাকা নিয়ে দু’দেশ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে সেখানে খুব কমসংখ্যক মানুষের বসবাস রয়েছে, তবে কৌশলগত দিক দিয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে ভারত, চীন ও ভুটানের সীমান্ত রয়েছে।
তিব্বতে চীনের যুদ্ধের মহড়া : ডোকলামে ভারত ও চীনের মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যেই চীনা সেনারা তিব্বতে বড় ধরনের সামরিক মহড়া চালিয়েছে বলে জানাল সে দেশের সংবাদমাধ্যম। তিব্বত কম্যান্ডের অধীনে থাকা একটি ব্রিগেড দ্রুত সেনা পাঠানো ও বিভিন্ন ইউনিটের একসঙ্গে হামলার একটি মহড়া দিয়েছে। ওই ব্রিগেডটি পার্বত্য যুদ্ধে (মাউন্টেন ওয়ারফেয়ার) বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। সেটি এখন ডোকলামের কাছেই পূর্ব তিব্বতের লিঝি এলাকায় মোতায়েন রয়েছে। চীনা চ্যানেল একটি ভিডিওও প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, মহড়ায় ট্যাঙ্কবিধ্বংসী গ্রেনেড ও বাঙ্কার ধ্বংসের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। পদাতিক বাহিনীকে সাহায্য করতে হাউইৎজার কামান কিভাবে ব্যবহার করা হবে তাও পরীক্ষা করে দেখছে চীনা সেনা। তিব্বতের মোবাইল সংস্থার কর্মীরা জরুরি অবস্থায় দ্রুত একটি মোবাইল নেটওয়ার্ক তৈরির মহড়াও করেছেন। ভারতের ওপর চাপ আরও বাড়াতেই যে চীনা সেনারা এই পদক্ষেপ করেছে তা নিয়ে সন্দেহ নেই প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের। চীনা বিশেষজ্ঞ ঝৌ চেনমিংয়ের মতে, ‘চীনা সেনা দেখাতে চেয়েছে তারা সহজেই ভারতকে কাবু করতে পারবে।’

No comments

Powered by Blogger.