আছে হরেক স্বাদের বিরিয়ানি কাচ্চি মোরগ-পোলাও

ইফতারের মেন্যুতে যে খাবার না থাকলেই নয় সেগুলো হল পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, ছোলা, শরবত ইত্যাদি। এ খাবারগুলোর পাশাপাশি শহরের মানুষ কমবেশি যে খাবারটি রাখেন সেটি হল মুখরোচক বিরিয়ানি। হতে পারে সেটি তেহারি, কাচ্চি বা মোরগ-পোলাও। পুরনো ঢাকার মানুষদের ইফতারির মেন্যুতে তো বটেই এখন নতুন ঢাকার সব এলাকাতেও জনপ্রিয় বিরিয়ানি। তাই প্রসিদ্ধ সব বিরিয়ানি, তেহারি এবং কাচ্চির দোকানগুলোতে ইফতারের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকে। ব্যবস্থা থাকে পার্সেলে বাসায় নিয়ে পরিবারের সঙ্গে রসনাভোজের। ঢাকার বিরিয়ানির কথা বললেই চলে আসে বিখ্যাত হাজীর বিরিয়ানির কথা। খাসির মাংস, পোলাও আর সরিষার তেলে রান্না এই বিরিয়ানির কদর দেশ-বিদেশে। ঐতিহ্য ধরে রেখে এখনও পার্সেল হিসেবে কাঁঠালপাতার বক্সে এই বিরিয়ানি পার্সেল করা হয়। যাতে খাবারের স্বাদ অটুট থাকে। হাজীর বিরিয়ানির প্রধান শাখা পুরনো ঢাকার কাজী আলাউদ্দিন রোডে বিকালে যেতেই দেখা গেল লাইন ধরে লোকে বিরিয়ানি কিনছেন। প্রতি প্লেট বিরিয়ানির দাম ১৫০ টাকা। হাজীর বিরিয়ানির শাখা রয়েছে মতিঝিল এবং বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়। জানা গেল, রোজা এলে সেখানেও তাদের বিরিয়ানির চাহিদা বেড়ে যায়। হাজীর বিরিয়ানি থেকে একটু সামনে এগোলেই রয়েছে আরেক বিখ্যাত বিরিয়ানির দোকান হানিফের বিরিয়ানি। স্বাদে-গুণে অনন্য হানিফের বিরিয়ানি। গত কয়েক বছরে হানিফের বিরিয়ানির কদর অনেকাংশে হাজীর থেকেও বেড়েছে। হানিফের বিরিয়ানিও খাসির মাংস তৈরি।
এখানে হাফ প্লেট ৯০ টাকা, ফুল প্লেট ১৬০ টাকা এবং স্পেশাল ১৮০ টাকা। হানিফের বিরিয়ানির আরও দুটি শাখা রয়েছে রায় সাহেবের বাজার ও মাতিঝিলে। কাচ্চি বিরিয়ানিতে নতুনত্বের স্বাদ নিয়ে এসেছে গ্রান্ড নবাব। তাদের দুটি শাখা। একটি কাজী আলাউদ্দিন রোডে, অন্যটি সাতরওজায়। তাদের কাচ্চির বিশেষত্ব হচ্ছে নানা ধরনের মশলার স্বাদে বাসমতি চাল দিয়ে কাচ্চি তৈরি করা হয়। থাকে খাসির আস্ত টুকরা আর আলু। পরিবেশনের সময় দেয়া হয় চাটনি ও সালাদ। গ্রান্ড নবাবের প্রতি প্লেট কাচ্চির দাম রাখা ১৮০ টাকা। বিরিয়ানির ক্ষেত্রে ঢাকার আরেকটি প্রসদ্ধি নাম ফকরুদ্দিন। বেইলি রোডে এবং ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশের মাঠে শামিয়ানা টানিয়ে এবারও ইফতারসামগ্রী বিক্রি করছেন তারা। তাদের শাখা আছে গুলশান ও ধানমণ্ডিতেও। তাদের কচ্চি বিরিয়ানির দাম হাফ ১৬০ টাকা ও ফুল ৩০০ টাকা, তেহারি হাফ ১৪০ টাকা ও ফুল ২৫০ টাকা। ঢাকার বিরিয়ানির ক্ষেত্রে আরেকটি জনপ্রিয় নাম রয়েলের বিরিয়ানি। লালবাগে রয়েলের রেস্তোরাঁয় নানা স্বাদের বিরিয়ানি ও কাচ্চি পাওয়া যায়। কচ্চি বিরিয়ানির মধ্যে আরেকটি জনপ্রিয় নাম কলকাতা কাচ্চি ঘর। সাতরওজার এই কাচ্চির বিরিয়ানিও প্রস্তুত হয় বাসমতি চাল দিয়ে। এখানে প্রতি প্লেট কাচ্চির দাম ১৮০ টাকা। দয়াগঞ্জ মোড়ের নামকারা তেহারির দোকান সিটি তেহারি ঘর। এই এলাকার সবচেয়ে জনপ্রিয় তেহারি হাউস এটি। এখানে হাফ প্লেট তেহারির দাম ৮০ টাকা আর ফুল প্লেট ১৬০ টাকা। মোরগ-পোলাও এর কদর ছোটবড় সবার কাছেই বেশি। আর সেটা যদি হয় নান্নার সুস্বাদু মোরগ-পোলাও তাহলে তো কথাই নেই। নান্নার মোরগ-পোলাওয়ের বিশেষত্ব হচ্ছে খাবার জন্য যে মশলার মিশ্রণটি দেয়া হয় সেটি খুবই মুখরোচক। নান্নার মোরগ-পোলাওয়ের দাম হাফ প্লেট ১২০ টাকা আর ফুল প্লেট ২৪০ টাকা। প্রতি মাসের ৫ তারিখে আস্ত মুরগির কাচ্চি বিক্রি করা হয় নান্না মোরগ-পোলাওয়ের দোকানে। যার দাম ৩২০ টাকা। তবে আসল হাজী নান্না বিরিয়ানির দোকান কিন্তু বেচারাম দেউরিতে। এ ছাড়াও মিরপুর বেনারসি পল্লীর ১নং গেট, এলিফেন্ট রোড, নাজিমউদ্দিন রোড, নবাবগঞ্জ বাজার, লালবাগ চৌরাস্তায়ও নান্না বিরিয়ানির শাখা রয়েছে। মোরগ-পোলাওর জগতে আরেকটি আদি ও জনিপ্রয় নাম করিম বিরিয়ানি হাউস। নয়াবাজারের এই বিরিয়ানি হাউসের বিরিয়ানির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে ঘরের তৈরি বিরিয়ানির স্বাদ পাওয়া যায়। মোরগ-পোলাওতে ঝোলের বেশ আধিক্য থাকে। করিমের বিরিয়ানির প্রতি প্লেট মূল্য ১১০ টাকা।

No comments

Powered by Blogger.