বাংলা নাটকের মুকুটহীন সম্রাট

মোশাররফ করিম। পরিচয়ের জন্য এ নামটিই যথেষ্ট। নামটি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে চোখের সামনে বিশাল ক্যানভাস ভেসে ওঠে। যে ক্যানভাসে নানা চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করে যাচ্ছেন তিনি। পটেকমার, হিজড়া, শহুরে বাটপার, ব্যাচেলর, কর্পোরেট দুনিয়ার ভদ্র চাকরিজীবী, হুমায়ূন আহমেদের হিমু, ব্যবসায়ী, পুরান ঢাকার গোল্লায় যাওয়া ছেলে, মহল্লার বড় ভাই এবং আদর্শ প্রেমিকসহ এমন অনেক চরিত্রেরই একটি ভরপুর প্যাকেজের নামই হচ্ছে মোশাররফ করিম। বাংলা নাটকের ইতিহাসে মোশাররফ করিমের মতো জনপ্রিয়তা কেউ পেয়েছেন কিনা বলা দুরূহ। কারণ অজপাড়া গাঁ থেকে শুরু করে শহরের উচ্চ বিত্তশালীদের ফ্ল্যাটের হোম থিয়েটারেও বিনোদন খোঁজা হয় এ তারকা অভিনীত নাটকে। একজন জাত অভিনেতা বলতে যা বুঝায় মোশাররফ করিমের মধ্যে তার সবটাই পাওয়া যায়। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতেও সমান জনপ্রিয়তা তার। তাই ভক্তরা দেশ বিদেশ থেকে এ তারকাকে এক নজর দেখার জন্য ছুটে আসেন। তার অসাধারণ অভিনয় ও উচ্চারণ দক্ষতা বাংলাদেশের অভিনয় জগতে তাকে এক আলাদা স্থান করে দিয়েছে। এক পর্ব, ধারাবাহিক ও মেগা ধারাবাহিক সব জায়গাতেই প্রভাব তার। মোশাররফ করিমের অভিনীত প্রথম নাটক ‘অতিথি’।
প্রথম নাটক দিয়েই বাজিমাত করেন তিনি। নাটকের পাশাপাশি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন এ তারকা। তার প্রথম অভিনীত চলচ্চিত্র ‘জয়যাত্রা’। পরে তিনি রূপকথার গল্প (২০০৬), দারুচিনি দ্বীপ (২০০৭), থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার (২০০৯), প্রজাপতি (২০১১), টেলিভিশন (২০১৩), জালালের গল্প (২০১৫), এবং সর্বশেষ অজ্ঞাতনামা (২০১৬) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। অসাধারণ অভিনয় দক্ষতার জন্য পেয়েছেন একাধিক পুরস্কারও পেয়েছেন। নাটক নিয়ে সারা বছরই ব্যস্ততা তার। ঈদের আগ পর্যন্ত টানা শুটিংয়ের জন্য বিশ্রাম নেয়ারও সুযোগ নেই তার। বেশ কয়েক বছর ধরে ঈদে সর্বাধিক নাটক প্রচার হয়ে আসছে তার। এ ধারাবাহিকতা দেখা যাবে এবারও। ঈদের সাতদিনই থাকে এ তারকার বিশেষ ধারাবাহিক ও সিক্যুয়েল নাটকগুলো। এ সিক্যুয়েল ও সাতপর্বের ধারাবাহিক নিয়ে ইতিমধ্যে ডজন খানেক নাটকে অভিনয় শেষ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে সাগর জাহানের ‘মাহিনের নীল তোয়ালে’, ‘অ্যাভারেজ আসলাম ইজ নট ব্যাচেলর’ ও ‘লাইফ ইজ বিউটি ফুল’, আজাদ কালামের ‘জমজ ৭’, শামীম জামানের ‘ মেজাজ ফোরটি নাইন টু’ ও ‘বডিগার্ড হোসেন’। এ ছাড়াও পূর্ণিমা, নোবেলের সঙ্গে জুটি হয়ে ঈদের জন্য ‘যখন সময় থমকে দাঁড়ায়’, নামের একটি নাটকেও অভিনয় করেছেন এ তারকা। কিছুদিন আগে ঈদ নাটকের শুটিংয়ে মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন। সেখানে ঈদের ৭ পর্বের দুটি নাটক, একটি এক ঘণ্টার নাটক ও একটি ধারাবাহিকের শুটিং করে ফিরেছেন তিনি। এর মধ্যে রয়েছে আসাদুজ্জামান সোহাগের রচনা ও রিপন মিয়ার পরিচালনায় ‘থার্ড পারসন’, আর বি প্রীতমের রচনায় ও পরিচালনায় ‘ম্যানপাওয়ার’, ইমরাউল রাফাতের পরিচালনায় ‘বেঙ্গল সমিতি’ (৭ খণ্ডের নাটক) এবং কায়সার আহমেদের ‘রূপালি প্রান্তর’। এর বাইরেও ডজন খানেক খণ্ড নাটকে অভিনয় করেছেন এ তারকা। শুটিং করছেন আরও একাধিক নাটকের।
সব মিলিয়ে এবারের ঈদে ত্রিশটিরও বেশি নাটক প্রচার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছেন বলে জানালেন এ তারকা। ঈদের নাটকের এ চাপে অনেক সময় ঠিকমতো খাওয়া দাওয়াও হয় না। তবে এ ব্যস্ততাকে ‘চাপ’ বলতে নারাজ এ তারকা। জানালেন, ‘নাটকের এ ব্যস্ততাকে আমি কখনই চাপ মনে করি না। এটাকে চাপ ভাবলে কাজ করা হবে না। এটাকে আনন্দ ভাবি আমি। আনন্দ পাই বলেই এতো এতো কাজ করতে পারছি।’ এতো নাটকে কাজ করছেন মানের দিকে কী নজর দেয়া হয়, জানতে চাইলেন মোশাররফ করিম বলেন, ‘নাটক বেশি হলেও চেষ্টা করছি বেছে বেছে কাজ করতে। আগে দেখি নাটকে গল্প আছে কী না। আমার অভিনয়ের জায়গা রয়েছে কী না। এটা থাকলেই অভিনয়ে সায় দেই। তবে এর বাইরেও অনেক সময় অনুরোধে কিছু নাটকে অভিনয় করতে হয়। সেগুলো কোয়ালিটির দিকে না নজর দিয়ে তাদের মুখে হাসি ফুটানোর দিকে বেশি নজর দেই। এটা অনেক কম।’ বাংলাদেশের নাটকে অনন্য মাত্রায় নিয়ে যাওয়া এ তারকা বেশ কয়েকটি নতুন ছবিতেও অভিনয় করতে যাচ্ছেন। ঈদের পরই পরই শুটিং শুরু হবে। আপাতত ঈদের নাটক দিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে চাইছেন এ তারকা।

No comments

Powered by Blogger.