আইসিবিএম ধ্বংসের সফল পরীক্ষা যুক্তরাষ্ট্রের

প্রথমবারের মতো সফলভাবে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের (আইসিবিএম) হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পরীক্ষা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গলবারের এ পরীক্ষায় একটি ক্ষেপণাস্ত্রবিধ্বংসী ইন্টারসেপ্টর ছুড়ে একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সফলভাবে ধ্বংস করেছে পেন্টাগন। প্রশান্ত মহাসাগরের মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ থেকে আলাস্কার দক্ষিণাঞ্চলীয় জলসীমা লক্ষ্য করে একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী। এরপর ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যান্ডেনবার্গ বিমানঘাঁটি থেকে ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য একটি ক্ষেপণাস্ত্রবিধ্বংসী ইন্টারসেপ্টর ছুড়ে কৃত্রিম ওই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটিকে ধ্বংস করে দেয়া হয় বলে জানিয়েছে দেশটির মিসাইল ডিফেন্স এজেন্সি (এমডিএ) বা ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সংস্থা। যুক্তরাষ্ট্রের এ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সফল পরীক্ষাকে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রতিরক্ষা সক্ষমতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। খবর রয়টার্স ও বিবিসির। পেন্টাগন জানিয়েছে, এ পরীক্ষাটি দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার ফসল। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মুখে এ পরীক্ষাটি করা হল। চলতি বছর উত্তর কোরিয়া এ পর্যন্ত নয়টি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। দেশটি নবম ক্ষেপণাস্ত্রটি ছোড়ার পরই যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সফল পরীক্ষা করল। এ পরীক্ষাটিকে ‘ক্রিটিক্যাল মাইলস্টোন’ বলে অভিহিত করেছেন এমডিএ’র পরিচালক ভাইস এডমিরাল জিম সাইরিং।
তিনি বলেন, ‘আমাদের মাতৃভূমি প্রতিরক্ষার জন্য এ ব্যবস্থা অতি গুরুত্বপূর্ণ। আর এ পরীক্ষা দেখিয়েছে, বাস্তব হুমকি মোকাবিলায় আমাদের একটি কার্যকর ও বিশ্বাসযোগ্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আছে।’ তবে এ পরীক্ষাকে পেন্টাগন সফল বলে দাবি করলেও অস্ত্র বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৪০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ কার্যকর অবস্থায় পেতে এখনও আরও অনেকটা পথ যেতে হবে দেশটিকে। সেন্টার ফর আর্মস কন্ট্রোল অ্যান্ড নন-প্রলিফারেশনের জ্যেষ্ঠ সদস্য ফিলিপ ই কয়েল বলেন, ‘পরীক্ষাটি একই সঙ্গে দুটো সফলতা এনেছে। এটা তাৎপর্যপূর্ণ। তবে শেষ পাঁচটা পরীক্ষার মধ্যে শুধু দুটি ঠিকমতো কাজ করেছে। সেদিক থেকে এর কার্যকারিতার হার মাত্র ৪০ শতাংশ।’ এর আগে গত তিন সপ্তাহে তিনটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে উত্তর কোরিয়া। সোমবার সকালে ছোড়া দেশটির সর্বশেষ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটি ১২০ কিলোমিটার উচ্চতায় উঠে ৪৫০ কিলোমিটার উড়ে গিয়ে জাপানের উপকূলে অবতরণ করে। উত্তর কোরিয়া দাবি করে আসছে, তাদের কাছে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। ধারণা করা হয়, তাদের কাছে এমন দুটি ক্ষেপণাস্ত্র থাকতে পারে। গত বছর তারা ওই ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে বলে পিয়ংইয়ং দাবি করে। এটা যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানতে সক্ষম। মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ভিনসন স্ট্রাইক গ্রুপকে কোরিয়া উপদ্বীপে পাঠানোর ঘোষণার পর থেকেই কোরিয়া উপদ্বীপে কার্যত যুদ্ধাবস্থা জারি রয়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে এক যৌথ সামরিক মহড়া চালায় যুক্তরাষ্ট্র। গত সোমবার উত্তর কোরিয়ার নতুন ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষার দিন থেকে কোরীয় উপদ্বীপে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া নতুন করে সামরিক মহড়া শুরু করেছে।

No comments

Powered by Blogger.