ও কারিনা গেছস কি না ভুইলা আমারে...

বাসার গেট খুলতেই বিয়ের সাজে সাজানো দুটি গাড়ি চোখে পড়ল। তার পাশেই ছোট ছোট জটলা। দুই বা তিনজন বসে, দাঁড়িয়ে গল্প গুজবে মশগুল। কিছুটা বিয়ে বাড়ির আমেজ। তবে বিয়ে কার? নাটকের নাম তো ‘মেন্টাল’। এমন নাটকের সেটে ঢুকতেই পাগল টাইপ কাউকে চোখে পড়বে এমনটিই কাম্য ছিল। কিন্তু না। সব প্রত্যাশা মতো হয় না। প্রিয়াংকা শুটিং স্পটেও এমনটি হল না। পাগলটাইপ কেউ শুটিং বাড়ির পাশের রাস্তায়ও পাওয়া গেল না। কিংবা থাকলেও সন্ধ্যা হওয়ায় হয়তো চোখে পড়ল না। এমনকি নাটকটির শুটিংয়ের কোনো আর্টিস্টকেও দেখা গেল না কোথাও। এমন সময় পাশ থেকে কাঁধে হাত রাখলো কেউ একজন। তাকাতেই বিস্ময়! প্রচন্ড গরমে শেরওয়ানি পড়ে দাঁড়িয়ে আছেন একজন অভিনেতা। কিন্তু কেন? উত্তরে বললেন, ‘এ নাটকে পপির জামাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করছি। বিয়ের আসর। বুঝতেই পারছেন।’ সেটের ভেতরে সবাই প্রস্তুত। কিন্তু বেচারা জামাইকে দেখে কিঞ্চিত মায়া হল। এ গরমেও কী মোটা শেরওয়ানি পড়ে হাঁটাচলা করছেন! পপির জামাই হতে কেমন লাগছে জানতে চাইতেই আসল জামাইয়ের মতো লজ্জা পেতে শুরু করলেন। এর মধ্যেই পাশে হাজির হয়েছেন মেন্টাল নাটকের মূল আকর্ষণ অভিনেতা হাসান জাহাঙ্গীর। মাথায় ছোট ছোট চুল। সদ্য ওমরা করে ফিরেছেন তিনি। গায়ে বিশাল সাইজের সিন্দবাদের মতো পাজামা পাঞ্জাবি। গলায় চেইন। তবে এটি আসল না ইমিটেশন বোঝা দুষ্কর। হাসান জাহাঙ্গীরের সঙ্গে মেকআপ রুমে যাওয়া মাত্রই চমকে যাওয়ার পালা।
আয়নার সামনে সুন্দরী এক বউ বসে আছেন। যেন আজই বিয়ে হচ্ছে তার। একটু পরই কবুল বলে চলে যাবেন কোনো পুরুষের হাত ধরে। যাবেনও হয়তো। তবে বাস্তবে নয়। বাংলা ছবির গ্ল্যামারাস নায়িকা পপি। তিনিই বউ সেজে বসে আছেন। গায়ে লাল টকটকে শাড়ি। সারা শরীরভর্তি ইমিটেশনের গহনা। দেখা মাত্রই মুচকি হাসি জড়ানো মুখে বললেন, ‘সত্যি বিয়ে না কিন্তু!’ এমন সময় নাটকের পরিচালক কায়সার আহমেদের ডক আসে ‘জামাই বউ রেডি হন’। পরিচালকের ডাকেই ওঠে আসেন পপি। ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। বলেন সাজ ঠিক আছে তো? ততক্ষণে হাসান জাহাঙ্গীরও পরিষ্কার পোশাকে পাগলের বুলি আওড়ানো শুরু করে দেন। নির্মাতা বলেন, এখনই ডায়ালগ কেন? উত্তরে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘প্রস্তুত হচ্ছি ভাই। একটু পরই দিতে হবে। কিছুক্ষণ পরই দেখা গেল পপির সামনে শেরওয়ানি পড়া সেই ছেলেটি। ঘর থেকে বের হয়েই নতুন বউকে নিয়ে গাড়ির দিকে ছুটেন তিনি। হুট করেই কোথা থেকে হাজির হন মেন্টাল ছাত্তাররূপী হাসান জাহাঙ্গীর। বধূবেশে পপিকে দেখেই চমকে যান তিনি। এমন সাজ কেন? জিজ্ঞেস করতেই কেঁদে ফেলেন পপি। ততক্ষণে পরিচালক বলে বসেন ‘কাট’। শট এনজি। কারণ পপিকে আরও পরে কাঁদতে হবে। কান্নাটা একটু আগেই হয়ে গেছে। আবার প্রস্তুতি নিয়ে শট দিতে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান পপি। হাসান জাহাঙ্গীর দৌড়ে ছুটে আসেন তার কাছে। এসেই সংলাপ আওড়াতে শুরু করেন। প্রথম ঠিক থাকলেও বিয়ের কথা শুনে মাথা নষ্ট হয়ে যায় জাহাঙ্গীরের। সে পাগলের মতো বেসুরো গলায় গাইতে শুরু করে ‘ও কারিনা গেছস কী না ভুইলা আমারে...’।

No comments

Powered by Blogger.