পাকিস্তানে ঘাঁটি বানাবে চীন

বিশ্বব্যাপী সামরিক আধিপত্য বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে চীন। এরই অংশ হিসেবে ভবিষ্যতে পাকিস্তানেও সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করতে পারে বেইজিং। মঙ্গলবার পেন্টাগনের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। আফ্রিকার জিবুতিতে প্রথম বিদেশি ঘাঁটি স্থাপনের পর চীন বিদেশে আরও ঘাঁটি নির্মাণ করবে বলে এতে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। খবর দ্য গার্ডিয়ানের। মার্কিন কংগ্রেসে জমা দেয়া ৯৭ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালে বলিষ্ঠ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চীন সামরিক খাতে ১৮০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যয় করেছে। এ ব্যয় চীনের দাফতরিক প্রতিরক্ষা ব্যয়ের চেয়েও বেশি। দাফতরিকভাবে চীন সামরিক খাতে প্রায় ১৪০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে থাকে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি ধীর হলেও চীনের নেতারা সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সামরিক খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি চীন আফ্রিকার দেশ জিবুতিতে প্রথম বৈদেশিক নৌঘাঁটি নির্মাণ করেছে। এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি রয়েছে। ঘাঁটিটি কৌশলগতভাবে লোহিত সাগর হয়ে সুয়েজ খালের প্রবেশদ্বারে অবস্থিত। ভবিষ্যতে বন্ধুপ্রতীম দেশে চীন সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করতে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘পাকিস্তানের মতো যেসব দেশের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও একই ধরনের কৌশলগত স্বার্থ রয়েছে, সেসব দেশে চীন অতিরিক্ত সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করতে চাইবে।’ ভারত মহাসাগরের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত জিবুতিতে চীনের সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ ইতিমধ্যে উদ্বেগে ফেলেছে ভারতকে।
কারণ নয়াদিল্লি মনে করে, বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও শ্রীলঙ্কাকে দিয়ে ভারতকে ঘিরে ফেলতে চীনের যে প্রয়াস- এটা তারই একটি অংশ। তবে প্রতিবেদনে পাকিস্তানে চীনা ঘাঁটি নির্মাণের বিষয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়ার কথা বলা হয়নি। এতে বলা হয়, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের অস্ত্রের প্রাথমিক বাজার হয়ে গেছে পাকিস্তান। ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ওই অঞ্চলে চীন ৯ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে। গত বছর পাকিস্তানের কাছে আট সাবমেরিন বিক্রির চুক্তি করেছে চীন। চীন বিষয়ক সামরিক বিশেষজ্ঞ সাম রোগিভিন বলেন, এ অঞ্চলে আমেরিকার আধিপত্য হ্রাস করার সক্ষমতা চাচ্ছে চীন। এরপর তারা এ অঞ্চলে সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক শক্তি হতে চায়। এখন পর্যন্ত চীনের লক্ষ্য আঞ্চলিক শক্তি হওয়া। কিন্তু এটা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে চীনের বৈশ্বিক উচ্চাভিলাষ রয়েছে। এটা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও সেটি একটি অবয়ব পেতে শুরু করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তি হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে পূর্ব ও দক্ষিণ চীন সাগর বিতর্কে দেশটি প্রায়শই মার্কিন রণতরী ও বিমানকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে। চীন নতুন সিল্ক রোড প্রকল্পে যে ৯০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করা শুরু করেছে তার পেছনেও রয়েছে সামরিক সম্প্রসারণবাদ। পেন্টাগনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রশান্ত অঞ্চলে এখন সবচেয়ে বড় নৌশক্তি রয়েছে চীনের। এখানে ৩০০ জাহাজ মোতায়েন করেছে চীন।

No comments

Powered by Blogger.