ওবামার সতর্কবার্তা শোনেননি ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনিক পদে মাইকেল ফ্লিনের নিয়োগের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আগাম সতর্ক করেছিলেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। কিন্তু ওবামার পরামর্শ উপেক্ষা করে ফ্লিনকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেন ট্রাম্প। সোমবার সিনেট প্যানেল শুনানিতে এ তথ্য উঠে এসেছে। পরে হোয়াইট হাউসও এর সত্যতা স্বীকার করে। শুনানিতে ওবামা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, গত নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ার ৪৮ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ওভাল অফিসে এক সাক্ষাতে ট্রাম্পকে ফ্লিনের ব্যাপারে সতর্ক করেন ওবামা। তবে সোমবারের শুনানিতে রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের যোগসাজশের বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। শুনানির পর ট্রাম্প টুইট করেন, রাশিয়া ও ট্রাম্পের সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ নেই। রুশ ও ট্রাম্প যোগসাজশের গল্পটি পুরোটাই ধাপ্পাবাজি। খবর বিবিসি ও এএফপির। মার্কিন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ফ্লিনকে আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করেন ট্রাম্প। পরে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত সের্গেই কিসলিয়াকের সঙ্গে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে ফোনে কথা বলার অভিযোগ উঠে ফ্লিনের বিরুদ্ধে। সেই আলাপের ব্যাপারে ভাইস প্রেসিডেন্টকে ভুল তথ্য দেয়ার বিষয়টি প্রমাণ হওয়ার পর গত ফেব্রুয়ারিতে তাকে বরখাস্ত করা হয়। তিনি মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে কম সময়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ পদে ছিলেন। সোমবার নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা স্বীকার করেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি শন স্পাইসার। তিনি বলেন, ‘এটা সত্য যে ট্রাম্পকে ওবামা বলেছিলেন, তিনি ফ্লিনকে খুব একটা পছন্দ করেন না।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় আমরা মোটেও বিস্মিত হইনি। কারণ তিনি ওবামা প্রশাসনেও কাজ করেছেন। পরে ওবামার সঙ্গে বিষোদ্গার সৃষ্টি হলে তিনি অপসারিত হন।’ এছাড়া স্পাইসার, ওবামার প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, ‘সত্যিই যদি ফ্লিনের ব্যপারে তিনি এতই উতলা থাকতেন, তবে নিরাপত্তার স্বার্থে কেন আরও কয়েক মাস আগেই সতর্ক করলেন না?’ এর আগে ওবামা প্রশাসন ২০১৪ সালে ফ্লিনকে আমেরিকার ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স কমিটির প্রধানের পদ থেকে অপসারণ করে। এরপর থেকে ওবামার কঠোর সমালোচকে পরিণত হন ফ্লিন। তবে তাকে নিয়োগ দেয়ার ব্যাপারে ডেমোক্রেটিক দলের সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামা ট্রাম্পকে বারবার সতর্ক করেন। তখনও রুশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ফ্লিনের গোপন যোগসাজশের বিষয়টি প্রকাশিত হয়নি। কিন্তু দুইবারের অভিজ্ঞ প্রেসিডেন্টের পরামর্শ উপেক্ষা করার মাশুল শেষপর্যন্ত গুনতে হল অনভিজ্ঞ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। এছাড়া রুশ কোম্পানির কাছ থেকে অর্থ নিয়ে, সেই তথ্য গোপন করার অভিযোগও উঠে ফ্লিনের বিরুদ্ধে। খোদ হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ তোলা হয়।
ফ্লিন এ অভিযোগও স্বীকার করেন। তার দাবি, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার জন্য রাশিয়া সরকারি অর্থে পরিচালিত টেলিভিশন চ্যানেল রাশিয়া টুডে এবং দেশটির ভলগা-নেপর এয়ারলাইনস থেকে অর্থ নেন তিনি। ফ্লিনের রুশ যোগসাজশের বিষয়ে সোমবার প্রায় তিন ঘণ্টার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এতে মুখ খোলেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেলি ইয়াটস। ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর ওবামা প্রশাসনে নিয়োগ পাওয়া শেলিকে বরখাস্ত করেন। ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে যাওয়ায় তাকে বরখাস্ত করা হয়। সিনেট শুনানিতে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক পরিচালক জেমস ক্লাপারের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন শেলি। তিনি বলেন, ‘মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট না জেনে জনগণের সামনে ভুল তথ্য দিয়েছেন। এটা নিশ্চিত যে, ফ্লিন মার্কিন স্বার্থের সঙ্গে আপস করেছেন।’ শেলি আরও বলেন, ‘আমরা ভাইস প্রেসিডেন্ট ও অন্যদের মতো এটা জানতাম না যে, জনগণের সামনে যে তথ্য দিচ্ছেন তা একেবারেই মিথ্যা। রাশিয়াও এ ব্যাপারে অবহিত ছিল।’ তিনি বলেন, পরিস্থিতি এমন জটিল রূপ নিয়েছিল যে, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রাশিয়ার ব্ল্যাকমেইলের স্বীকার হয়েছিলেন। রাশিয়ার সঙ্গে ফ্লিনের যোগসাজশের বিষয়ে তদন্ত করছে দেশটির ফেডারেল গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই, হোয়াইট হাউস ও মার্কিন সিনেটের ইন্টেলিজেন্স কমিটি। চলমান তদন্তে ওবামার সতর্কতার তথ্য নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

No comments

Powered by Blogger.