প্লাস্টিক বোতলে বাড়ি

পানি কিংবা কোমলপানীয় পানের পর প্লাস্টিকের (পিইটি) বোতলটি সাধারণত ফেলেই দেই আমরা। সেই ফেলে দেয়া জিনিস দিয়েই এবার পরিবেশবান্ধব বাড়ি তৈরি করছে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের এক শিক্ষক দম্পতি। চন্দ্রপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত গ্রাম নওদাবাসে বাড়িটি তৈরি করছেন রাশেদুল আলম ও তার স্ত্রী আসমা খাতুন। ঢাকার শেখ বোরহান উদ্দিন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজে পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন তারা। তাদের মতে, বাংলাদেশে এমন বাড়ি তৈরির নজির নেই। রাশেদুল এলাকার আবদুল বারী ও সুফিয়া বারীর ছেলে। মঙ্গলবার নওদাবাসে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন রাজমিস্ত্রি ও নির্মাণ শ্রমিক নির্মাণকাজ করছেন। আর তা তদারক করছেন রাশেদুল ও আসমা। প্লাস্টিকের বোতলে বাড়ি তৈরি হচ্ছে শুনে নিজের গ্রাম তো বটেই, আশপাশের গ্রাম থেকেও বিস্ময়মাখা চোখে অনেকেই তা দেখতে এসেছেন। রাশেদুল আলম যুগান্তরকে বলেন, দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে রাফিদুল মানসিকভাবে অসুস্থ। চিকিৎসকের পরামর্শে দূষণ ও কোলাহলমুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশে ছেলেকে বড় করতে সম্প্রতি গ্রামে ফিরে আসি আমরা। অল্প খরচে পরিবেশবান্ধব বাড়ি তৈরির পথ পেতে ইন্টারনেটে ঘাঁটাঘাঁটি করি। জাপানে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে তৈরি ইকো হাউস নামে চমৎকার এক বাড়ির খোঁজ পাই। তা থেকে ধারণা নিয়ে নেমে পড়ি কাজে। শুরুতে এ নিয়ে অনেকেই হাসাহাসি করেছেন। কিন্তু সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসিনি। এখন আগ্রহ নিয়ে অনেকেই দেখতে আসছেন। রাশেদুল আরও বলেন, ১ হাজার ৭০০ স্কয়ার ফুটের এ বাড়িতে চারটি থাকার ঘর, দুটি শৌচাগার, রান্নাঘর ও বারান্দা রয়েছে। প্রতিটি দেয়াল, মেঝে, এমনকি সেপটিক ট্যাংকও তৈরি করা হচ্ছে প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে। এক লিটার ও আধা লিটার পরিমাপের বোতল ব্যবহার করা হচ্ছে এতে।
বোতলের ভেতরে বালু ঢুকিয়ে সেটিকে ইট হিসেবে ব্যবহার করে সিমেন্ট-বালু-পানির মিশ্রনে গাঁথা হচ্ছে। লিনটনে খোয়া ছাড়া কোথাও ইট ব্যবহার হচ্ছে না। নামমাত্র রড ব্যবহার করছি, যেমন লিনটন ও জানালায় গ্রিলে। ছাউনি দেয়া হবে টিন দিয়ে। রাশেদুল বলেন, বোতলে বালু ব্যবহার করায় বোতল স্বাভাবিক ইটের তুলনায় বেশি শক্ত হবে। ওই বালু গরমে তাপ শোষণ করে ঘরকে অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা রাখবে। সাধারণভাবে তৈরি ইটের ঘরের চেয়ে এটি মজবুত হবে। ভূমিকম্প সহায়ক এ বাড়ি বানাতে ইটে তৈরির চেয়ে ৪০ শতাংশ টাকা কম খরচ হবে। আশা কারি, এক মাসের মধ্যে এ বাড়িতে উঠতে পারব। আসমা খাতুন জানান, এ বাড়ি করতে প্রায় ৮০ হাজার বোতল লাগছে। প্রতি কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে প্রায় ৬০ মণ বোতল কেনা হয়েছে। টিনের চালা বাদে অন্যান্য কাজ আড়াই লাখ টাকার মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করছি। ৮ ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু করেছি। এ পর্যন্ত ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। রাজমিস্ত্রি রুদ্রেশ্বর রায় বলেন, সারা জীবন মানুষকে ইট দিয়ে বাড়ি তৈরি করে দিয়েছি। এবার প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে তৈরি করে দিতে খুবই ভালো লাগছে। তবে দিকনির্দেশনা রাশেদুল আর আসমা দিচ্ছেন। কালীগঞ্জের প্রবীণ সাংবাদিক শেখ আবদুল আলিম জানান, পরিত্যক্ত বোতল দিয়ে যে বাড়ি করা যায়, তা এটি না দেখলে বিশ্বাস হতো না। এটি দেখে এলাকার অনেকেই উদ্বুব্ধ হচ্ছেন। কেউ কেউ রাশেদুলের কাছ থেকে বাড়ির নকশা করে নিয়ে যাচ্ছেন। কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী পারভেজ নেওয়াজ খান যুগান্তরকে বলেন, স্বল্প খরচে নির্মাণাধীন প্লাস্টিকের বোতলের বাড়িটি দেখে এসেছি। এটি পরিবেশবান্ধব। কিন্তু মজবুত কিংবা দেশে প্রথম কিনা, বলতে পারছি না। প্রকৌশলগত দিক সমন্বয় করতে পারলে এটি আরও নিরাপদ ও টেকসই হবে।

No comments

Powered by Blogger.