নির্বাচনে প্রস্তুত আওয়ামী লীগ

জাতীয় নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের প্রয়োজনীয় কাজগুলো ইতোমধ্যে প্রায় সেরে ফেলেছে ক্ষমতাসীন দলটি। এখন চলছে প্রচার ও ইশতেহার তৈরির কাজ। তারই অংশ হিসেবে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন জেলায় সফর করছেন। সফরকালে আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারেও এবার গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি। সে লক্ষ্যে দলীয় এমপিদের প্রশিক্ষণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামীকাল রোববার দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ কর্মসূচি শুরু হবে বলে দলের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সূত্রগুলো জানায়, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই আওয়ামী লীগ ও সরকারের সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। নির্বাচনের বিষয়টি মাথায় রেখেই প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন ও সরকারি কর্মসূচিগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। মন্ত্রী, এমপি, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্বাচনমুখী হওয়ার নির্দেশনাও দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সেরে ফেলা হয়েছে। সরকারি দুইটি সংস্থার মাধ্যমে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক প্রার্থী ও বর্তমান এমপিদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। পাশাপাশি দলীয় মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় নিয়মিত চোখ বুলাচ্ছেন। সে জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। অন্য দিকে নির্বাচন সামনে রেখে কোন্দল মেটাতে বিভিন্ন জেলার নেতাদের সাথে বৈঠক করছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এসব বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সব বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা আলাপকালে জানান, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হবে ২০১৯ সালের ১১ জানুয়ারি। ১১ জানুয়ারির পূর্ববর্তী ৯০ দিন অথবা পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তবে নির্বাচনের জন্য যতটুকু প্রস্তুতি থাকা দরকার তার প্রায় সবই আওয়ামী লীগের হয়ে গেছে। এখন নির্বাচনী প্রচার চলছে। এ ছাড়া ইশতেহার তৈরির কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। দলের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের ঘোষণাপত্র মাথায় রেখে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার তৈরি হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বতর্মান সরকারের বড় বড় সাফল্যগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি ভোটারদের আকৃষ্ট করতে ভবিষ্যৎ কিছু পরিকল্পনাও ইশতেহারে যুক্ত হবে। তারা জানান, আগামী নির্বাচনে ডিজিটাল প্রচারের ওপর জোর দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে ফেসবুক ও টুইটারসহ সামাজিক বিভিন্ন যোগাযোগমাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার চালানো হবে। সে লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে দলের সব এমপিকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। ফেসবুক ও টুইটার ব্যবহার এবং এতে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে ভোট প্রার্থনাসহ প্রয়োজনীয় সব প্রশিক্ষণ দেয়া হবে এমপিদের। রোববার আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির কার্যালয়ে এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এতে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক ছাড়াও দেশের স্বনামধন্য প্রযুক্তিবিদরা এমপিদের প্রশিক্ষণ দেবেন। দলীয় সূত্রগুলো জানায়, মূলত গত ফেব্রুয়ারি মাসে উত্তরবঙ্গের অন্যতম জেলা এবং বিএনপির দুর্গ বলে পরিচিত বগুড়া থেকে নির্বাচনী প্রচারের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ওই দিন বগুড়ায় দলীয় জনসভায় আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে সরাসরি জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। এরই ধারাবাহিকতায় নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সারা দেশে জনসভার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে দলটি। তারই অংশ হিসেবে লক্ষ্মীপুর, মাগুরা ও ফরিদপুরে জনসভার কাজ সেরেছেন প্রধানমন্ত্রী। আগামীকাল যাচ্ছেন পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। সেখানে ১৬টি প্রকল্পের উদ্বোধন ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। ঠাকুরগাঁও, বরগুনা ও চুয়াডাঙ্গায় প্রধানমন্ত্রীর সফরের কথা থাকলেও এরই মধ্যে তা স্থগিত করা হয়েছে। দলের সিনিয়র একজন নেতা আলাপকালে জানান, আওয়ামী লীগ বেশ আগ থেকেই জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। বিশেষ করে গত বছর অক্টোবর মাসে অত্যন্ত জাঁকজমকভাবে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলের দুই দিনব্যাপী ২০তম জাতীয় সম্মেলন সফলভাবে শেষের মধ্য দিয়েই এ প্রস্তুতি শুরু করে ক্ষমতাসীনরা। কাউন্সিলে নেতাকর্মীদের জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধি ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন দলীয় সভাপতি। এ ছাড়া কাউন্সিলের পর থেকেই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে আসছেন।
পাশাপাশি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ সিনিয়র নেতারা বিভিন্ন জেলায় সংবর্ধনায় যোগ দিয়ে জাতীয় নির্বাচনের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতির আহ্বান জানান। তবে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বগুড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভার মধ্য দিয়েই মূলত প্রচারের এ আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। দলের সম্পাদকমণ্ডলীর প্রভাবশালী একজন সদস্য জানান, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ ভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভা থেকে সব এমপিকে নির্বাচনী প্রচারে মাঠে নামার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। একই সাথে বিতর্কিত এমপিদের সতর্ক করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কে কি করছে আমার কাছে সব রিপোর্ট আছে। আগামী নির্বাচনে বিতর্কিতদের মনোনয়ন দেয়া হবে না। এরপর থেকেই সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা যার যার নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। অনেকে সপ্তাহের বেশির ভাগ সময় নিজ নিজ এলাকায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। বিশেষ করে শুক্র ও শনিবারসহ সব ছুটির দিনে নিজ নিজ এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন তারা। অন্য দিকে প্রধানমন্ত্রীও আগামী নির্বাচনের জন্য দলের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা ধীরে ধীরে ছোট করে আনছেন। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ নয়া দিগন্তকে বলেন, গত অক্টোবরে দলীয় কাউন্সিলেই আমাদের সভানেত্রী নেতাকর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশনার আলোকে আমরা সারা দেশে যার যার মতো করে চষে বেড়াচ্ছি। আর প্রধানমন্ত্রীর জনসভাগুলোও নির্বাচনী প্রচারের অংশ। নির্বাচনের প্রাথমিক কাজগুলো আমাদের শেষ হয়েছে। এখন যেকোনো মুহূর্তে নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুত। দলের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলোকে জনগণের সামনে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। সে জন্য নিয়মিতভাবে জনসভার আয়োজন এবং এমপিদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হচ্ছে। নির্বাচনী ইশতেহারসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজও সারছেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সব মিলিয়ে আমরা নির্বাচনের জন্য মোটামুটি প্রস্তুত।

No comments

Powered by Blogger.